somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে গেলেন অগ্নিশিখা মিছিলের নেত্রী ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমান

০৯ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলে গেলেন মহান ভাষা আন্দোলনের নেত্রী বেগম মনোয়ারা রহমান (১৯৩৫-২০০৯)। আজ বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁ গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর। এই মহিয়সী নারীর কর্মময় জীবনের কিছু অংশ ব্লগারদের জন্য তুলে ধরলাম।
১৯৫২ সাল। ফেব্র“য়ারি মাস। আন্দোলনে উত্তাল দেশ। মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকার সাথে সাথে সংগ্রামমুখর রাজশাহী। এই আন্দোলনে বেগম মনোয়ারা রহমান নারীদের সংগঠিত করলেন আশাতিতভাবে। তিনি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। রাজশাহীবাসী বায়ান্নর সেই ভাষা আন্দোলনে দেখেছিল এক অল্পবয়সী অগ্নিকন্যার সাংগঠিনক ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন, গোলাম আরিফ টিপু, আবু সাঈদ, আব্দুর রাজ্জাকসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেদিন রাজশাহী কলেজে নির্মিত হয় দেশের প্রথম শহীদ মিনার। যা এখানো জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি।
নেতৃত্বের গুণ তাঁর বংশগত। রক্তেই মিশে আছে তার রাজনীতির রেনু। তাঁর বাবা মাদার বখ্শ তখন একজন উপমহাদেশ খ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন রাজনীতি, মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমের মূল মন্ত্র। রাজশাহী তথা গোটা উত্তরাঞ্চলের প্রগতিশীল রাজনীতির পুরধা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও বঙ্গবন্ধু সরকারের রাজশাহী অঞ্চলের গভর্ণর জননেতা এম আতাউর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৫৩ সালে। রাজনীতি করতে গিয়েই আতাউর রহমানের সাথে পরিচয় হয়েছিলো মনোয়ারা রহমানের। এই পরিচয় থেকেই ঘটে পরিনয়। আতাউর রহমান ছিলেন জননেতা মাদার বখশের খুব প্রিয় রাজনৈতিক শিষ্য।
১৯৫২ সালের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে রাজশাহীতে মহিলাদের নিয়ে বের করেন অগ্নিশিখা মিছিল। সে সময় এই ব্যাতিক্রমধর্মী মিছিলের উদ্যোক্তা হিসেবে উপমহাদেশে বেশ আলোচিত হয়েছিল বেগম মনোয়ারা রহমানের নাম।
শুধু ভাষা আন্দোলনই নয়। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলন ও সামাজিক কর্মকান্ডে নিঃশর্তভাবে অবদান রেখে গেছেন এই মহিয়সী নারী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। বাংলাদেশে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজশাহীতে ১৯৫২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম মনোয়ারা রহমান। রাজশাহীতে সমাজসেবার ক্ষেত্রে বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। বিশেষত নারী সমাজের উন্নয়ন, নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, বয়স্ক শিা, ও নিররতা দূরীকরণসহ নিঃস্বার্থভাবে সমাজসেবায় অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি স্বেচ্ছায় রক্তদান, গবাদি পশু ও মৌমাছি পালন কর্মসূচিতে নারীদের সম্পৃক্ত করে মানব কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গঠণমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দুঃস্থ অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারী সমাজ নানাভাবে উপকৃত ও লাভবান হয়েছে। ঘরে ঘরে গিয়ে অনুদান সংগ্রহ এবং আর্ত-মানবতার সেবায় প্রেরণ। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মা বোনদের উজ্জীবিত করেছেন।
তিনি রাজশাহী মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কুটির শিল্পের মাধ্যমে বিগত৩৫ বছরে ৫হাজারের অধিক গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় নারীদের সেলাই, বাটিক প্রিন্ট, এমব্রোডারি ও তাঁত শিল্প বিষয়ে প্রশিণের দ্বারা স্বনির্ভর করে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এবং সেইসব নারী সমাজ জীবনে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
অবহেলিত নারী জাগরণের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন সময়ে ইস্যু ভিত্তিক নারী আন্দোলনকে সংগঠিত করেছেন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি আজীবন নির্যাতিত নারীদের পাশে থেকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন।
বেগম মনোয়ারা রহমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজশাহী মহিলা শিল্প প্রতিষ্ঠানের আজীবন সম্পাদিকা (১৯৭৩-২০০৭), রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য (১৯৭৫-১৯৮০), রাজশাহী এসোসিয়েশনের মহিলা নির্বাহী পরিষদের সম্পাদিকা (১৯৮৫-২০০৫), শহর সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালনা পরিষদের সদস্য, (১৯৭৫-২০০৬), স্পন্দন সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ রাজশাহীর সভানেত্রী (১৯৭৭-১৯৯০), মাদার বখ্শ স্মৃতি সংসদের সভানেত্রী (১৯৭৭-১৯৯৪), রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারের নির্বাহী পরিষদের সদস্য (১৯৮০-২০০০) ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:১৮
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×