somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গন্থব্যহীন ঘোরাঘুরি (The city of Legend)

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাগলামির একটা সীমা থাকে কিন্তু আমার ইদানিংকালের পাগলামির কোন সীমা নাই। বড়দিনের বন্ধ তাই সময়টাতো আর শুয়ে বসে কাটানো যায় না।ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়লাম আজানা গন্থব্যের পথে।উদ্দ্যেশ্য একটাই দুচোখ ভরে গ্রাম বাংলার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করা। নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে এসেই একটা খুলনার বাস পেয়ে উঠে বসলাম। বাসে বসেই জানতে পারলাম বাস যাবে গোপালগঞ্জ হয়ে। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম টুংগীপাড়া যাওয়ার। ইচ্ছাটা অবশ্য বরিশাল আসার পর থেকেই ছিল, সুযোগ পেলেই একবার বংগবন্ধুর সমাধিতে যাবো কিন্তু দূরত্বের কথা ভেবে আর যাওয়া হয়নি।নিজের একটা এস.এল.আর খুব মিস করছিলাম।এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আসলে ফ্রেমে বন্দী করতে না পারাটা একটা অন্যায়।নেই যেহেতু আপাতত চোখের ফ্রেম আর মোবাইলের দুর্বল ক্যামেরাই ভরসা।
যাক, যাত্রা শুরু হল।অনেকটা কচ্ছপ গতিতেই বাস পোছালো।পৌছাতেই দুপুর হল। গোপালগঞ্জ নেমেই প্রথমে যথারীতি শহরটা একটা চক্কর দিলাম।অতপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে টুংগীপাড়ার বাসে চড়লাম।নিলফা বাজার পেড়িয়ে পাটগাতি হয়ে বিকেল হল টুংগীপাড়া পৌছতেই।এদিকের রাস্তার মত এত সুন্দর রাস্তা বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না।অবশেষে মহান নেতার সমাধীতে পৌছেই মনটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল।ভাবতে কষ্ট হয় এরাও নেতা ছিল আর বর্তমান কালেও দেশে অনেক নেতা-নেতৃ আছে।এরকম অনুভূতি অবশ্য টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানীর মাজারে পৌছেও হয়েছিল। যা’ই হোক বিশাল এলাকা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধী কমপ্লেক্স। এত বড় আর এতোটা গুছানো তা অবশ্য ভাবিনি।অনেকক্ষন মুগ্ধ হয়ে ঘুরলাম। বঙ্গবন্ধুর অনেক পুরনো ছবিসহ লাইব্রেরিটাও দেখা হল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই ফেরার তাগিদে রওয়ানা হলাম সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে।এরকম ট্যুরে আমি সাধারনত যে পথ দিয়ে আসি সে পথে না ফিরে অন্য রাস্তা দিয়েই ফেরার চেষ্ট্রা করি। তাতে ঘোরার উদ্দেশ্যটা অনেকটা পরিপূর্ণতা পায়।এখানেও তার ব্যাতিক্রম হলনা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল কোটালিপাড়া হয়ে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট নামক জায়গা দিয়ে বরিশাল যাওয়া যায়। সে পরিকল্পনাতেই রওয়ানা হলাম। কোটালীপাড়া যাওয়ার উপায় হল মুড়ির টিন জাতীয় এক ধরনের টেম্পু।এই যান সত্যিকার অর্থেই মুড়ির টিনের মত। যাত্রা শুরু হল।এ যেন এক নরক যাত্রা। ভাঙ্গা রাস্তার কল্যানে মুড়ির টিনের ছাদে বাড়ি খেতে খেতে চান্দিতে আলু হয়ে যাওয়ার উপক্রম। রাস্তা অবশ্য ঠিক করবে বলেই প্রস্তুতি চলছে শুনলাম। রাস্তার দুপাশে কোন বাড়ি ঘর নেই, শুধুই জলাধার যেখানে বছরে একবার ফসল হয়।পাক্কা এক ঘণ্টা পর এই নরক যাত্রা শেষ হল।ততক্ষনে যাত্রিরা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে আমার কপালে যে মহা দুর্গতি অপেক্ষা করছে।মাঝবাড়ি থেকে শেষ বাস ভাগ্য ভালো হলে পাওয়া সম্ভব হবে।আমি মনে মনে প্রমোদ গুনছি।অবশেষে বাস পাওয়া গেল। বাসের অবস্থা তুলনামূলক ভালই।বাস নামিয়ে দিল পয়সার হাট নামক এক জায়গায়।সেখান থেকে নদী পার হয়ে বরিশালের পথে যেতে হবে। নদী পার হওয়ার আগে বাজারে গরম গরম জিলাপী দেখে আর লোভ সামলানো গেলোনা। জিলাপী নিয়েই নৌকাতে উঠে বসলাম। ঐ পাড়ে নেমে দেখি আরেক হাহাকার।কোন যানবাহন নেই। দু-চারটে মটর বাইক আছে কিন্তু এই তীব্র শীতে ক্ষ্যাপ না মেরে ভারত-পাকিস্তানের খেলা দেখাটাকেই তারা শ্রেয় মনে করছে। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। যাই হোক দৈবক্রমে এক ভটভটি পাওয়া গেল। আবার যাত্রা শুরু।শীতে প্রায় জমে যাচ্ছিলাম। আর নিজেকেই নিজে তিরস্কার করছিলাম ‘কর, আরো অ্যাডভেঞ্চার কর’।পথের পাশে এক জায়গায় মেলা চলছে।অনেক মানুষের সমাগম সেখানে।সার্কাসও নাকি দেখানো হচ্ছে সেখানে।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালাম মেলা দেখার বিপজ্জনক পদক্ষেপ থেকে।অবশেষে পৌছলাম আগৈলঝাড়া কিন্তু এখানে এসেও হতাশ হতে হল,বরিশালের কোন বাস নাই। লোকজন বুদ্ধি দিল গৌরনদী গেলে নাকি বাস পাওয়া যাবে।তখন প্রায় নয়টা বাজে। আগৈলঝাড়া থেকে আরেক মুড়ির টিনে করে রওয়ানা হলাম গৌরন্দী।রাস্তাঘাট ভালই।গৌরনদী পৌছে ভাবলাম যাক এযাত্রায় মনে হয় বাঁচা গেল।কিন্তু না, দুর্ভোগের এখানেই শেষ নয়।রাত দশটায় লং রোডের কোন বাসেরও আসা যাওয়া নেই।প্রায় ৪৫ মিনিট বসে থাকার পর একটি বাসে উঠতে সমর্থ হলাম। ইলিশ নামের এই বাসটিকে তখন আমার মনে হচ্ছিল কোন স্বর্গিয় যান।আর এভাবে আমার আরেকটি গন্থব্যহীন ঘোরাঘুরি শেষ হল।এখন মনে হয় ঘুমানো উচিৎ কেননা সকালে অফিস রয়েছে আর সারা শরীরের গিরায় গিরায় মুড়ির টিনের ঝাকির ব্যাথা। (নেক্সট কোন অ্যাডভেঞ্চারের অপেক্ষায়)
২৬.১২.১২
রাত ১২.৩০


গোপালগঞ্জ শহরে।




বঙ্গবন্ধুর সমাধীস্থলে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×