পাগলামির একটা সীমা থাকে কিন্তু আমার ইদানিংকালের পাগলামির কোন সীমা নাই। বড়দিনের বন্ধ তাই সময়টাতো আর শুয়ে বসে কাটানো যায় না।ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়লাম আজানা গন্থব্যের পথে।উদ্দ্যেশ্য একটাই দুচোখ ভরে গ্রাম বাংলার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করা। নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে এসেই একটা খুলনার বাস পেয়ে উঠে বসলাম। বাসে বসেই জানতে পারলাম বাস যাবে গোপালগঞ্জ হয়ে। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম টুংগীপাড়া যাওয়ার। ইচ্ছাটা অবশ্য বরিশাল আসার পর থেকেই ছিল, সুযোগ পেলেই একবার বংগবন্ধুর সমাধিতে যাবো কিন্তু দূরত্বের কথা ভেবে আর যাওয়া হয়নি।নিজের একটা এস.এল.আর খুব মিস করছিলাম।এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আসলে ফ্রেমে বন্দী করতে না পারাটা একটা অন্যায়।নেই যেহেতু আপাতত চোখের ফ্রেম আর মোবাইলের দুর্বল ক্যামেরাই ভরসা।
যাক, যাত্রা শুরু হল।অনেকটা কচ্ছপ গতিতেই বাস পোছালো।পৌছাতেই দুপুর হল। গোপালগঞ্জ নেমেই প্রথমে যথারীতি শহরটা একটা চক্কর দিলাম।অতপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে টুংগীপাড়ার বাসে চড়লাম।নিলফা বাজার পেড়িয়ে পাটগাতি হয়ে বিকেল হল টুংগীপাড়া পৌছতেই।এদিকের রাস্তার মত এত সুন্দর রাস্তা বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না।অবশেষে মহান নেতার সমাধীতে পৌছেই মনটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল।ভাবতে কষ্ট হয় এরাও নেতা ছিল আর বর্তমান কালেও দেশে অনেক নেতা-নেতৃ আছে।এরকম অনুভূতি অবশ্য টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানীর মাজারে পৌছেও হয়েছিল। যা’ই হোক বিশাল এলাকা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধী কমপ্লেক্স। এত বড় আর এতোটা গুছানো তা অবশ্য ভাবিনি।অনেকক্ষন মুগ্ধ হয়ে ঘুরলাম। বঙ্গবন্ধুর অনেক পুরনো ছবিসহ লাইব্রেরিটাও দেখা হল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই ফেরার তাগিদে রওয়ানা হলাম সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে।এরকম ট্যুরে আমি সাধারনত যে পথ দিয়ে আসি সে পথে না ফিরে অন্য রাস্তা দিয়েই ফেরার চেষ্ট্রা করি। তাতে ঘোরার উদ্দেশ্যটা অনেকটা পরিপূর্ণতা পায়।এখানেও তার ব্যাতিক্রম হলনা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল কোটালিপাড়া হয়ে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট নামক জায়গা দিয়ে বরিশাল যাওয়া যায়। সে পরিকল্পনাতেই রওয়ানা হলাম। কোটালীপাড়া যাওয়ার উপায় হল মুড়ির টিন জাতীয় এক ধরনের টেম্পু।এই যান সত্যিকার অর্থেই মুড়ির টিনের মত। যাত্রা শুরু হল।এ যেন এক নরক যাত্রা। ভাঙ্গা রাস্তার কল্যানে মুড়ির টিনের ছাদে বাড়ি খেতে খেতে চান্দিতে আলু হয়ে যাওয়ার উপক্রম। রাস্তা অবশ্য ঠিক করবে বলেই প্রস্তুতি চলছে শুনলাম। রাস্তার দুপাশে কোন বাড়ি ঘর নেই, শুধুই জলাধার যেখানে বছরে একবার ফসল হয়।পাক্কা এক ঘণ্টা পর এই নরক যাত্রা শেষ হল।ততক্ষনে যাত্রিরা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে আমার কপালে যে মহা দুর্গতি অপেক্ষা করছে।মাঝবাড়ি থেকে শেষ বাস ভাগ্য ভালো হলে পাওয়া সম্ভব হবে।আমি মনে মনে প্রমোদ গুনছি।অবশেষে বাস পাওয়া গেল। বাসের অবস্থা তুলনামূলক ভালই।বাস নামিয়ে দিল পয়সার হাট নামক এক জায়গায়।সেখান থেকে নদী পার হয়ে বরিশালের পথে যেতে হবে। নদী পার হওয়ার আগে বাজারে গরম গরম জিলাপী দেখে আর লোভ সামলানো গেলোনা। জিলাপী নিয়েই নৌকাতে উঠে বসলাম। ঐ পাড়ে নেমে দেখি আরেক হাহাকার।কোন যানবাহন নেই। দু-চারটে মটর বাইক আছে কিন্তু এই তীব্র শীতে ক্ষ্যাপ না মেরে ভারত-পাকিস্তানের খেলা দেখাটাকেই তারা শ্রেয় মনে করছে। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। যাই হোক দৈবক্রমে এক ভটভটি পাওয়া গেল। আবার যাত্রা শুরু।শীতে প্রায় জমে যাচ্ছিলাম। আর নিজেকেই নিজে তিরস্কার করছিলাম ‘কর, আরো অ্যাডভেঞ্চার কর’।পথের পাশে এক জায়গায় মেলা চলছে।অনেক মানুষের সমাগম সেখানে।সার্কাসও নাকি দেখানো হচ্ছে সেখানে।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালাম মেলা দেখার বিপজ্জনক পদক্ষেপ থেকে।অবশেষে পৌছলাম আগৈলঝাড়া কিন্তু এখানে এসেও হতাশ হতে হল,বরিশালের কোন বাস নাই। লোকজন বুদ্ধি দিল গৌরনদী গেলে নাকি বাস পাওয়া যাবে।তখন প্রায় নয়টা বাজে। আগৈলঝাড়া থেকে আরেক মুড়ির টিনে করে রওয়ানা হলাম গৌরন্দী।রাস্তাঘাট ভালই।গৌরনদী পৌছে ভাবলাম যাক এযাত্রায় মনে হয় বাঁচা গেল।কিন্তু না, দুর্ভোগের এখানেই শেষ নয়।রাত দশটায় লং রোডের কোন বাসেরও আসা যাওয়া নেই।প্রায় ৪৫ মিনিট বসে থাকার পর একটি বাসে উঠতে সমর্থ হলাম। ইলিশ নামের এই বাসটিকে তখন আমার মনে হচ্ছিল কোন স্বর্গিয় যান।আর এভাবে আমার আরেকটি গন্থব্যহীন ঘোরাঘুরি শেষ হল।এখন মনে হয় ঘুমানো উচিৎ কেননা সকালে অফিস রয়েছে আর সারা শরীরের গিরায় গিরায় মুড়ির টিনের ঝাকির ব্যাথা। (নেক্সট কোন অ্যাডভেঞ্চারের অপেক্ষায়)
২৬.১২.১২
রাত ১২.৩০
গোপালগঞ্জ শহরে।
বঙ্গবন্ধুর সমাধীস্থলে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



