বছরের প্রথম দিন। ঘর থেকে বেরিয়েই কি করবে না করবে ঠিক করতে পারল না রাকিল। রেশমার সাথে দেখা করার সুযোগ নেই। ঢাকাতে বেড়াতে গেছে মামার বাসায়। ঘুরাঘুরির সাথে ফেসবুকে যমুনা ফিচার পার্কে তোলা একটার পর একটা ছবি আপলোড দিচ্ছে রেশমা। মেয়েটা পারেও, ভাবল রাকিল। সুমনদের কল করবে সেই সুযোগ নেই দল বেধে সবাই হাটাজারী গেছে বনভোজনে। কি করবে ভাবতে ভাবতে একটা চা দোকানে ঢুকল। নামঃ সৌদিয়া স্টোর। বাংলাদেশের মানুষের এত সৌদি প্রেম কেন উত্তর খুজে পায় না রাকিল। অথচ এই সৌদি আরবই বাংলাদেশ কে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তাও আবার ১৬ই আগস্ট, শেখ মজিবুর রহমান সাহেব স্বপরিবারে নিহত হবার ঠিক পরের দিন। যাই হোক কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই দোকানে গিয়ে বয়কে বলল , মামা এককাপ চা দাও তো। চা খেতে খেতে চারপাশে তাকিয়ে দেখে খদ্দের মাত্র তিন জন আর চার জন লোক হোটেলের ক্যাশ টেবিলকে ঘিরে দাঁড়িয়ে উপরের তাকে রাখা টেলিভিশনে রেসলিং দেখছে আর মুখ দিয়ে আওয়াজ করছে,
- মার শালারে
- একদম ঠিক্যাছে
- বেকুব নাকি ?
- গফুর ভাই টিভির সাউন্ডটা একটু বাড়িয়ে দেন।
বোঝা গেল চায়ের দোকানদারের না গফুর। স্ট্রাইপের একটা পলো গেঞ্জি সাথে গ্রামীন চেক লুঙ্গি। বর্তমানে তার দুনিয়াদাড়িতে কোন খেয়াল নেই, আশে পাশের কিছু সঙ্গী দর্শক নিয়ে সেও পুরোদমে রেসলিং দেখছে আর মাঝে মাঝে ক্যাশ টেবিলে বাড়ি দিচ্ছে। অবাক হয়ে গফুরের কান্ডকারখানা দেখেছে রাকিল। চা খাওয়া শেষ। একজন খদ্দের উঠে গিয়ে বিশটাকা দিল তাই ডয়ারে রেখে দিল। বয়কে জিজ্ঞেসও করল না কত টাকা এসেছে।
গফুরের মত পাবলিকদের অদ্ভুত সুখী জীবন, ভাবল রাকিল। হয়ত বাসায় বসে গফুর মিয়া টিভিতে রেসলিং দেখছে, এমন সময় গফুর মিয়ার স্ত্রী রাহেলা বেগম এসে বলল , ওগো বাজার শেষ, লবণও আনতে হবে, তেলও প্রায় শেষ পর্যায়ে মনে করে একবতল তেল নিয়ে এসো। কল্পনাতে ভাবল রাকিল। আর গফুর মিয়া বলবে ঠিক আছে , আতপর আবার রেসলিং দেখায় মনোনিবাস করবে। সুখী হবার জন্য গফুর মিয়াদের মরিসাস যাবার স্বপ্নতো দূরে থাক বছরে একবার স্বপরিবারে কক্সবাজারও বেরাতে যায় কিনা সন্দেহ। তারপরও এরা সুখী। চাহিদার সাথে সুখের সম্পর্ক অতি গভীর। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সুখপাখিও ঊড়ে চলে যায় কল্পলোকের দেশে।
--------আধুনিক মহাপুরুষ (১-১-২০১৬ ইং)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৭