- তুলতুল, এই তুলতুল
শুনেই মেজাজ গরম হয়ে যায় টুটুলের।
-খবরদার আমাকে তুলতুল ডাকবে না।
- একশবার ডাকব, তুলতুল কত সুন্দর নাম, শুনতেই তো আদর লাগে, গাল টেনে দিতে ইচ্ছে করে।
টুটুলের অধিক শোকে পাথর হবার দশা। এলিজাপুর সামনে টুটুল সবসময়ে চুপসে থাকে।
এলিজারা টুটুলদের বাসার ছাদ সংলগ্ন চারতলার ভাড়াটিয়া। এলিজা ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে আর টুটুল সবে নাইনে। টুটুল আগে ছাদে বসে মনের সুখে গীটারে সুর তুলত। মনযোগী শ্রোতা ছিল একমাত্র পোষা ময়না "বিনু"। এলিজারা ভাড়াটিয়া হিসেবে আসার পর থেকে সবকিছু বদলে গেল। একদিন দেখা গেল টিয়া পাখির খাচার দরজা খোলা। টুটুল একশ ভাগ নিশ্চিত যে এলিজাই এই ফাজলামিটা করছে। শুধুকি তাই তাকেও টুটুল থেকে তুলতুল ডাকা শুরু করেছে। মেয়েটার মাথা পাগলামিতে ভরা। সারাদিন শুধু হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস পড়ে। যেসব মেয়ে হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া কিছু বুঝে না তারা কিঞ্চিত ছিঁচকাঁদুনে টাইপের হয়। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে উলটা পালটা কথা বললে এরা রাগ করে বয়ফ্রেন্ডের এর সাথে সম্পর্ক পর্যন্ত নস্ট করতে প্রস্তুত থাকে। টুটুলে খুব ইচ্ছে করে ইলিজা নামের সাথে একটা "ন" লাগিয়ে ডাকতে। সাহসে কুলায় না। একটু উনিশ বিশ হলেই মনে করিয়ে দেয়, " এই আমি তোর দুই বছরের বড়"।
এইতো সেদিন যখন টিয়া পাখিটাকে ছেড়ে দিয়েছিল সেদিন টুটুল রাগ করে বলেছিল
- তুমি , আমার টিয়া পাখিকে ছেড়ে দিয়েছ কেন?
- কই নাতো , আমিতো কিছু করিনি।
- তুমি না করলে কে করবে?
- করলে করছি , তো ?
- তুমি একটা ... কথা আটকে গিয়েছিল টুটুলের
অমনি এলিজা বলে উঠে;
- এই, সম্মান করে কথা বলবে আমি তোর দুই বছরের বড়...
একদিন ছাদের কোনায় টুটুল গান গাইছিল,
---♪♫একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়ালে
শিস দিয়ে গান গায় ধূসর খেয়ালে ♪♫
অমনি এলিজা এসে বলল
-বাহ তুলতুল, তোমার গানের গলা তো বেশ।
আর সেইদিন থেকে টুটুল হয়ে গেল এলিজার তুলতুল।
ভাগ্যিস টুটুলের স্কুলের কেউ ব্যাপারটা জানে না , নাহলে টুটুল শান্তিতে স্কুলে যেতে পারত না।
আজতো এলিজা সরাসরি তাকে গাল টেনে দেয়ার কথা বলল, টুটুল বিহ্বল হয়েগিয়েছিল। লজ্জায় তার কান পর্যন্ত লাল হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে টুটুল এলিজা থেকে একশ হাত দুরে আছে ,নতুবা তার দুর্বলতা টের পেয়ে যেতে পারে তার কল্পনায় বাস করা ফাজিল মেয়ে "এলিজান"।
ছবিঃ সংগৃহীত
শাহ্ এস. সানি
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯