রিক্সাওয়ালা ফজলু আরাম করে চা খাচ্ছে , তার অন্য হাতে বেনসন।
এক চুমুক চা খাচ্ছে এক টান সিগেরেট খাচ্ছে আর খানিক বাদে বাদে হাতের
সিগেরেটের বেনসন লিখাটার দিকে তাকাচ্ছে।
ফজলু সিগেরেটের শেষ টান দিয়ে ফিল্টারটা বিরক্তি ভরে দূরে ছুড়ে দিয়ে
ইমন হায়দারকে (যিনি পেশায় একজন সাংবাদিক ) বললেন ভাইজান আরেকটা বেন্সন দেন,
একটা খাইয়া জুইত পাই নাই।ইমনের বিরক্তি বাড়িয়ে দিয়ে আরেকটা সিগেরেট খেল ফজলু?
সিগেরেট শেষ করে বলল,
- ভাইজান কেন্ আইছেন আমার কাছে ? এখন আমার খ্যাপের টাইম। জলদি কন।
-- তোমার নামতো ফজলু, লোকজন তোমাকে গানপাগলা ফজলু বলে তাই না ?
- হ ভাইজান আমি ফজলুদ্দিন। লোকজন আমারে গানপাগলা ফজলু কয়।
কেউ কেউ আবার পাগলা বাবাও ডাকে।
-- শুনো ফজলু আমি এসেছি তোমার গান শুনতে। সেটা ক্যামেরায় ধারন করা হবে।
বিনিময়ে তোমারে কিছু টাকা দেয়া হবে। একসপ্তাহ তোমার রিকসা না চালালেও হবে।
- ভাইজান ভুলচুক মাফ কইরেন। আমি ক্যম্রার সামনে গাইতে পারুম না।
তয় আপন চাইলে আমি এমনিতেই গান শুনামু। ট্যাকা লাগব না।
তাই ভাল,ফজলু কেমন গায় আগে সেটা শুনে নেয়া যাক ভাবল হায়দার সাহেব।
- ভাইজান আপনি অই গাছতলায় চলেন। যেখানে সেখানে গাইলে গানের অসম্মান হয়।
গাছতলায় গিয়ে বসলেন হায়দার সাহেব। গাছের ফাক দিয়ে চতুরদর্শীর চাঁদ উকি দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে মারাত্মক পরিবেশ। ফজলু গান গাওয়ার আগে এককান ছুয়ে নিল।
যেন কারো কাছে মাফ চেয়ে নিল।
"গুরু গো.. ও ও ও …"
গান শুরু করার সাথে সাথে চমকে উঠল হায়দার সাহেব।
এভাবেও কি কোন মানুষ গাইতে পারে?
হাতের সকল লোম খাড়া হয়ে গেছে হায়দার সাহেবের।
যেভাবেই হোক এর পরের গানগুলো তাকে রেকর্ড করতেই হবে...
"বেধ বিধির পথ শাস্ত্র কানা
আর এক কানা মন আমার
এসব দেখি কানার হাট বাজার
এক কানা কয় আর এক কানারে
চল এবার ভব পারে।।
নিজে কানা
পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারং বার
এসব দেখি কানার হাট বাজার
পন্ডিত কানা অহংকারে
সাধু কানা অন্-বিচারে
পন্ডিত কানা অহংকারে
মোড়ল কানা চুগলখোরে
আন্দাজে এক খুটি গেরে।।
জানেনা সীমানা কার
এসব দেখি কানার হাট বাজার।।
কানায় কানায় হোলা মেলায়
বোবাতে খায় রস গোল্লা গো
আবার লালন বলে মদনা কানা
ঘুমের ঘোরে দেয় বাহার
এসব দেখি কানার হাটবাজার"
গান শেষ করেই ফজলু হায়দার সাহেবকে বলল, "ভাইজান অনুমতি দেন, যাই"
বলেই কিছু শুনার প্রত্যাশা না করেই রিকসার দিকে পা বাড়াল আর গাইতে লাগল,
"সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।"
ফজলু আসার সময় ভাল করে হায়দার সাহেবের চোখের দিকে তাকায়নি।
তাকালে সে ঠিকই দেখতে পেত পাষাণ হৃদয় হায়দার সাহেবের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
পাথরের দেয়ালেও সবুজ গাছ জন্মায় , হোক না তা পরগাছা , ক্ষতি কী ?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ১২:০৮