somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু

০২ রা জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধু
আমার বান্ধবী লুসি(ডা.সুফিয়া সুলতানা),প্রায় ৫০বছর ধরে আমাদের বন্ধুত্ব অটুট আছে!এতাটুকু ফাটল ধরেনি!এই ৫০বছরে কখনও তার সাথে আমার ঝগড়া বা সামান্য মনোমালিন্যও হয়নি!অন্য বান্ধবীদের সাথে কত খুনসুটি,অকালণ ঝগড়া,মন খারাপ একটু আধটু হলেও লুসি এখানে ব্যতিক্রম!ও ছিলো আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে!মেডিকেল কলেজে ওর নাম ছিলো ‘ইন্দিরা গান্ধী’!সেই ছোটবেলা থেকে আমরা একসাথে স্কুল ও একই মেডিকেলে পড়েছি!শুধু মাঝে এইচ.এস.সি ২বছর ও ঢাকায় আর আমি ময়মনসিংহের আনন্দ মোহনে!চাকুরী জীবনে দুজন রয়েছি দূরে দূরে!লুসি বহুবছর কাটিয়েছে সৌদি আরবে!আমিও দেশ বিদেশ ঘুর অবশেষে ঢাকায় এলাম!এক দুপুরে এক মহিলা কণ্ঠ ফোন করে বললো,‘আপনি কি ডা.সুরাইয়া?’
আমি বলি,‘জি!আপনি?’
মহিলা বলে,‘আমার নাম সুফিয়া সুলতানা।আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন?’
আমি রেগে গিয়ে বলি,‘দেখ লুসি,ভালো হবে না কিন্তু!মারবো এক থাপ্পড়,আপনি আপনি করে বলছিস কেন?আবার ঢং করে সুফিয়া সুলতানা!’
ও হেসে ফেলে!বলে,‘তুই যদি চিনতে না পারিস?কোথায় হারিয়ে গেছিলি?কতদিন কতদিন পর বলতো?’
আবার আমরা নিজেদের খুঁজে পেলাম!
পরদিনই ও ওর দুই মেয়েকে নিয়ে হাজির!মেয়েরা আমার সাথে গল্পে মেতে উঠলো!সে সময় আমি ইন্টারন্যাশনাল একটা ব্লগে লিখি!বাংলা ব্লগ তখনও শুরু হয়নি!মেয়েরা বিস্ময় নিয়ে লুসিকে বলে,‘আন্টি নেটে লেখে আর তুমি ভালো করে মোবাইলই ব্যবহার করতে পারো না!নেট তো দূরের কথা!’
ও শুনে হেসে কুটিকুটি হয়!বলে,‘কার সাথে কার তুলনা!কোথায় আগরতলা আর কোথায় চকির তলা?তোদের আন্টি হলো ক্লাশের ফার্সট,ব্রিলিয়ান্ট আার সট্যান্ড করা স্টুডেন্ট আর আমরা ছিলাম লাস্ট বেঞ্চের,,গাধা ছাত্রী!’
আমি তুমুল প্রতিবাদ করি!‘তুই গাধা হলে ডাক্তার হলি কী করে?খালি বেশি বেশি!’ও বলে,‘গাধা ডাক্তারের সংখ্যাও কম নয়!’ আমরা হাসতে হাসতে ঘর ফাটিয়ে ফেলি!
এই হলো আমার বন্ধু লুসি!
মেয়েদের স্কুলে সাধারনত কয়েকটি দল থাকে!
১।১নম্বর দলে থাকে সব ভালো ছাত্রীরা!এরা মুখ গম্ভীর করে শুধু ভালো ছাত্রীদের সাথে মেলামেশা করে!অন্য ছাত্রীদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকায়,ওদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলে,যেন গায়ে গা লেগে গেলেও মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে!স্কেুলের টিচার আর ভালো ছাত্রী ছাড়া এরা কারো সাথে বিশেষ কথাবার্তা বলে না!
২।এই দল হলো দুষ্টু দল!এরা পড়াশোনায় মাঝারি মানের হলেও দুষ্টুমিতে সেরা!এমন কোন দুষ্টুমি নেই যা ওরা করতে না পারে!টিচারদের সাথেও এরা নানানধরনের দুষ্টুমি করে,বকা খায়,শাস্ত পায়!আসলে এরাও ভালো ছাত্রী,তবে নানান কিসিমের দুষ্টুমির পদ্ধতি উদ্ভাবন ও তার কার্যকরণে ওদের সময় অতিবাহিত হয় বলে,পড়াশোনার সময় পায় কম!রেজাল্ট খারাপে এদের কিছু আসে যায় না!তবে নতুন নতুন দুষ্টুমি,শয়তানি না করতে পারলে ওদের মনমেজাজ খারাপ হয়ে যায়!
৩।এই দল হলো সুন্দরী নায়িকা দল!এরা সাজুগুজু করে স্কুলে আসে!ব্যাগে বইপত্রের সাথে লিপস্টিক,ফেস পাউডার,পারফিউম,চিরুণি,নেল পলিশ সব লুকিয়ে নিয়ে আসে!সময় পেলেই রূপচর্চা শুরু হয়ে যায়!এরা পেছনের বেঞ্চে বসে সারাক্ষণ গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে!ক্লাশের ফাঁকে এবং টিফিন পিরিয়ডেেএরা দোতলার বারান্দা,ছাদ বা দেয়ালের পাশে গিয়ে স্কুলের বাইরে উঁকিঝুঁকি মারে,ইশারা ইঙ্গিতে বাইরে দাঁড়ানো ছেলেদের সাথে প্রেম করে,চিঠি ছোঁড়াছুঁড়ি করে!সময় পেলেই সিনেমার গল্প,নায়ক নায়িকাদের নিয়ে গসিপ করে!এই গ্রুপের মেয়েদের টিচাররা ও ভালো ছাত্রীরা দুই চোখে দেখতে পারে না!
৪।এই গ্রুপের মেয়েরা একটু বয়স্ক!ভারিক্কি চালচলন,মাতব্বরী ধরণ!এরা ভালো ছাত্রীদের অভিভাবকের মত ছায়া দিয়ে রাখে!কোন দুষ্টু,খারাপ ছাত্রী,বিশেষ করে নায়িকা গ্রুপ থেকে ভালো ছাত্রীদের রক্ষার দায়িত্ব এরা নিয়ে নেয়!টিচারদের সাথেও এদের ভালো খাতির!
তো লুসি সুন্দরী হয়েও নায়িকার দল থেকে সবসময় নিজকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতো!আমি,শেলী(প্রফেসর ড.সেলিনা আক্তার জাহান,চ্যানেল আই-এর মেধাবিকাশ এর উপস্থাপিকা),জিনাত এই ৩জন ক্লাশে ১ম,২য়,৩য় হতাম!কিন্তু দুষ্টু দলের সাথে আমাদের অকৃত্রিম মেলমেশা ছিলো!বলতে গেলে,শেলী ছিলো অলরাউন্ডার!সে দুষ্টামী,সাজগোজ,প্রেমট্রেম ,মাতব্বরী সবকিছুতেই লিড করতো!আর আমি কী এক অজ্ঞাত কারণে সবার কাছেই গ্রহণীয় ছিলাম,সব দলের সাথেই মেলামেশায় সহজ ছিলাম!দুষ্টু দলের সেরা ছিলো শেফালী(জিন্নাত আরা,এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী)!এমন এমন জোক বলতো,হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করতো আমাদের!টিচারদেরও হাসাতো!কোন শাস্তিই তাকে দুষ্টুমি থেকে দূরে রাখতে পারেনি!
লুসির বাবা ছিলো ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন!ও একটা জীপে করে আসতো স্কুলে!দেখতে যে কী সুন্দর ছিলো!সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেও,ও কারো দিকে তাকাতো না!মাথা নিচু করে হাঁটতো,কারো সাথে তেমন মেলামেশা ছিলো না!ক্লাশে পেছনের বেঞ্চে চুপ করে বসে থাকতো!আর আমি,ফার্সট বেঞ্চ থেকে গিয়ে ওর পাশে বসতাম প্রায় সময়ই!ক্লাশ নাইনে উঠে ও চলে গেলো হোম ইকনমিক্স গ্রুপে ,আমি
সায়েন্সে।এই দুই গ্রুপের ক্লাশ হতো একসাথে,আমি আর লুসি তখনও এক ডেস্কে বসি!ওদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাশে খুব ভালো ভালো খাবার দাবার রান্না হতো!টিচাররা খেয়ে পরীক্ষা করতো!লুসি ওখান থেকে সবসময় আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতো!সেই ধারাবাহিকতা আজও সে বহাল রেখেছে!
ও যখনই আমার কাছে আসবে,নিজের হাতে রেঁধে কখনও ফ্রায়েড রাইস,চিকেন,কাবাব,পিঠা,বিভিন্ন ধরনের ডিশ করে নিয়ে আসবে!আমাকে নিজের হাতে সামনে বসিয়ে খাইয়ে দেবে!বেশ কিছুদিন আগে এলো,নিজে পুলি পিঠা আর ডালপুরি বানিয়ে নিয়ে!আমি বললাম,‘খেতে পারবো না রে লুসি!আমার সুগার হাই!’
শুনে ফর্সা মুখটা কালো হয়ে গেলো!জোর করে একটু মুখে তুলে খাওয়ালো!
কয়েকদিন আগে নর্থ সাউথ ভার্সিটিতে এসেছিলো ওর এম.পি.এইচ এর সার্টিফিকেট তুলতে!এই বয়সেও ও সৌদী থেকে ফিরে এসে,আলটাসনোগ্রামে ডিগ্রি করেছে এম.পি.এইচ করেছে!একটা ক্লিনিকসে বসে!কী এনার্জি!আমি অবাক হয়ে যাই!
ভারিসটি থেকে এলো আমার কাছে!হাত খালি!এই প্রথম কিছু না নিয়ে এলো!মুখ কালো করে বললো,‘জানিস,ক্যান্টিনে গরম গরম ফুচকা,চটপটি বানাচ্ছে!তোর জন্য আনতে চাইলাম,তুই তো খেতে পারবি না,তাই আমিও খাইনি,তোর জন্যও আনিনি!’
আমি বললাম,‘আরে আমার সুগার তো এখন নরমালের চেয়ে কম!খেতে পারতাম তো?’
শুনে আফসোস করতে লাগলো,‘আমাকে একটু জানাবি না?তোর সুগার কমে গেছে,কেন বললি না?
মন খারাপ করে চলে গেলো!কখনও বেশিক্ষন বসতে পারে না!দৌড়ের ওপর থাকে ও!
আবার গত পরশু এলো হন্তদন্ত হয়ে!হাতে ব্যাগের মাঝে চটপটির বক্স,অনেকগুলো ফুচকা,তেঁতুলের টক!এনেই হাঁকডাক,প্লেট নিয়ে এসো বুয়া,গরম গরম খেতে হবে!’
নিজেই ফুচকাতে চটপটি টক মিশিয়ে আমাকে মুখে তুলে খাওয়াতে লাগলো!
আমি বললাম,‘আরে থাম থাম,আর কতো খাবো,মেরে ফেলবি নাকি?তুই খা!’
ও খেলো,সঙ্গে আমাকে আরও খেতে হলো!আমাকে খাইয়ে দাইয়ে,তৃপ্তি আর হাসিমুখ নিয়ে যেমন ঝড়ের বেগে এসেছিলো,তেমনি চলে গেলো!বললো,‘সেদিন থেকে আমার মন খারাপ!তোকে কিছু না খাইয়ে চলে গেছিলাম!আজ শান্তি পাচ্ছি!’
আমি হাসি,‘পাগল একটা!’




১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×