সুরেশ কুমার দাশ ঃ
পাকিস্তানে ও আফগানিস্তানে তালেবানি শাসন কায়েমের জন্য যে বোমাবাজীর ঘটনা ঘটে তা প্রতিরোধের নামে কোটি কোটি টাকা দেয় আমেরিকা। এভাবে দিয়েই আসছে তারা। আর এদেশের মানুষ গতর খেটে, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে টাকা আয় করে। তাতেই যত মাথাব্যথা আন্তর্জাতিক গ্যাং লিডারদের । ড্যান মজিনা বলেছেন, বাংলাদেশের পোষাক রপ্তানী আমেরিকার বাজারে সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে। এটা তার হুমকি। হুমকির কারণ আর কিছুই নয় বাংলাদেশ সরকার জনগণের উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে চায়। এটা হলে তারা আর কর্তৃত্ব ফলাতে পারবেনা। বা তাদের কর্তৃত্ব কমে আসবে। তারা এও চায় না বাংলাদেশ স্বনির্ভর হোক।। তারা চায় তাদের প্রেসক্রিপশন ও তাদের দয়া দাক্ষিণ্যে বাংলাদেশ থাকবে। এজন্য ড্যান মজিনা নতুন হুঙ্কার ছাড়েন।
পদ্মা সেতু ইস্যুটি এখন জাতীয় ঐক্যের একটি সূত্রও। যতটা বদনাম রটানোর চেষ্টা হয়েছে বা যা ঘটেছিল তার চেয়ে বেশি লাভ হয়েছে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টিতে। বিশ্ব ব্যাংকের গোয়াতুর্মি দেখে দেশের মানুষ আসলেই স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। তাদের বাড়াবাড়ি যে উদ্দেশ্যমূলক ছিল তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে উঠে। একটা চক্রান্ত - যা মানুষ ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছে।
এতে যখন কাজ হচ্ছে না তখন ড্যান মজিনার নাটকীয় বিবৃতি। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে। এ হুমকি ভিন্ন কৌশলে। বাংলাদেশের সরকার ও ব্যবসায়িদের এখন থেকে প্রস্তুত হওয়া দরকার। এসব হুমকি মোকাবেলার জন্য কী করা দরকার। কারণ শুধু পদ্মা সেতু ইস্যুতেই নয় এরকম আরও হুমকি আসবে হয়ত। ভিন্ন পথে, ভিন্ন কোন অজুহাতে। কারণ মাথা তুলে দাঁড়াতে গেলে এ ধরনের বিষয়গুলো ঘটবে।
তাদের পুরনো খেলা আমাদের চাপে রাখা। তাদের মনে রাখা দরকার এদেশে এমন কিছু হচ্ছে না যা পাকিস্তানের জঙ্গী লালন পালনের চেয়ে বড় কিছু। এবং এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে ড্যান মজিনাদের বুঝিয়ে দেয়া উচত। পাকিস্তানে তারা কী পরিমাণ টাকা ঢালছে। আর সুযোগ মত তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গী দমনে যে সফলতা দেখিয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক গ্যাং লিডা দের কৃতজ্ঞতাসহ স্মরণ রাখা দরকার। তাই কথা বলার আগে ও পরে কাছাকাছি কেউ থাকলে তাদেরকে এসব স্মরণ করিয়ে দিলে আরও ভালো। এছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ সন্দেহমুক্ত নয়।
আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কথা বলছি। তারা এদেশে সে রীতিমত অর্ডার করছে - বাংলাদেশের ব্যাব ভেঙ্গে দিতে হবে। র্যাব ভেঙ্গে দিলে তাদের যেটা সুবিধা হবে- তা হচ্ছে এদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। বা রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি হবে। এতে বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ হলে তারা তখন মানবাধিকারের ব্যাপারে আরও জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করবে। এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটাই তাদের মূল লক্ষ্য। কারণ আমাদেও দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাদেও মানবাধিকারের নামে ব্যবসাটা চাঙ্গা হবে। জমবে ভালো। কারণ তখন তাদের মাতবরি করার সুযোগ আরও বাড়বে। এ সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তারা বলছে র্যাব ভেঙ্গে দাও। অথচ তাদেও লেলিয়ে দেয়া জাত ভাইদের বোমা ও ড্রোন হামলায় ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়ায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হলেও তারা মাতবরি ফলাতে পারেনা।
আসলেই যে কোন সচেতন নাগরিকের কাছে পীড়াদায়ক এ ধরনের আদেশ মূলক কাণ্ড কীর্তন। কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপরে মারাত্মক অনধিকার চর্চা। নিয়মের চরম সীমা লঙ্ঘন। যা বলার কোন অধিকার তাদের নেই। এদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হলে তারা আমাদের কোন পরামর্শ দিতে পারে। তবে র্যাব ভেঙ্গে দেয়ার কোন অর্ডার বা আদেশ তারা দিতে পারে না। এজন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামে ওই গলাবাজ সংগঠটির কাছে জবাবদিহি চাওয়া দরকার। কোন নিয়মে তারা আমাদের র্যাব নিয়ে কথা বলেছে। এ কথা বলার অধিকার তাদের আছে কিনা। তা থাকারও কথা নয। থাকলে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে এমন কথা বললে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হতো। আমাদেরও তাই করা দরকার। না হলে ওদের ফপর দালালি বন্ধ হবেনা। আমাদের উচিত অন্তত জোর প্রতিবাদ করা। অন্যথা সুযোগ পেলে তারা এমনটি বলে যাবে। আরও বছর খানেক আগে এ হিউম্যান রাইটসস এমন কথা বলেছিল- ৬ মাসের মধ্যে র্যাব এর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এমন অবস্থা যেন জঙ্গলে এসে সভ্যতা শেখাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। না হয় রাষ্ট্র ও নাগরিকের মর্যাদা ক্ষুণœ হয়।
আর র্যাবের ক্রসফায়ার বিষয়টিও একটি গল্প বলে এখন প্রচলিত এদেশে। এটা নিয়ে দেশের মধ্যে এত সমালোচনা হওয়ার পরও এ বিষয়টির কোন সুরাহা হয়না। এটা প্রকৃত অর্থে ভয়ঙ্কর একটা অন্যায় যখন নিরপরাধ মানুষ বুঝতে পারে না কেন তার এরকম মৃত্যু হয়। একজন সন্ত্রাসী যখন ক্রসফায়ারে পড়ে তখন এটা মানুষ বোঝে। কিন্তু যখন গল্প বানিয়ে ক্রসফায়ার তৈরি করা হয় তখন রাষ্ট্রের আইন নিরবে কাঁদে। যদিও কোনভাবেই একটি রাষ্ট্রের আইন ও আদালতের বিচার ছাড়া নাগরিকের অন্য কোন শাস্তি কাম্য হতে পারেনা। একটা সময় ছিল যখন ক্রসফায়ারের একটি বাস্তবতা ছিল হয়তো। সেই অবস্থার উন্নতি হবার পর কেন ওই উপায়টিকে কৌশল হিসাবে নেয়া হবে। যা এখন মানুষ অজুহাত মনে করছে। এটা কেন প্রয়োজন হয়। র্যাবের কারো ভুল বোঝাবুঝির কারণে। নাকি তাদের কারো ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এবং রাষ্ট্র কেন এ দায় মাথা নিতে যাবে-রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধানকে লঙ্ঘন করে। দেশের মধ্যে এসব ব্যাপারে সমালোচনা হয় তখন কারো না কারো কথা সরকারের বোঝা উচিত। সব মানুষ তো- যার যার উদ্দেশ্য নিয়ে একটা বিষয়ে সমালোচনা করেনা। দেশের মধ্যে যে সমালোচনা তা গুরুত্ব দিলে তখন বাইরের কারো খবরদারি থাকবেনা। আর দেশের মধ্যে যারা এসব সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে তাদের মনে রাখা দরকার তারা ওইসব সংগঠনের দালাল হলেও তারা এদেশের নাগরিক। রাষ্ট্র ও সরকারের উপর কারো খবরদারি করা মানে নাগরিক হিসাবে তার মর্যাদাও ক্ষুণœ হওয়া। বেতনের টাকায় তো আর নাগরিকত্ব বিকিয়ে দেয়া যায়না।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরকারের জন্য একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। বার্মায সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে। আর তারা অং সাং সুচিকে নিয়ে ফুলেল সংবর্ধনা দিচ্ছে। এরচেয়ে পরিহাস মানবতার জন্য , শান্তির জন্য আর কী হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে খোদ বার্মা সরকার ও অং সান সুচীর মধ্যে এমন কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না । যা বিশ্বব্যাপি এমন মেসেজ দেয়া হয়েছে এটা বার্মার একটি নিয়মিত ব্যাপার। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের এভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন করেই তাদের দিনের পর দিন দেশান্তরী করা হয়েছে। এ দাঙ্গায় সূচী ও বার্মিজ সরকারের মৌন সম্মতি থাকার পরও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো বার্মা সরকারকে কোন চাপ না দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে বার বার বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। আর সূচীর নোবেল ভাষণ শুনছে।
যে দাঙ্গার ভয়াবহতায় বার্মার আরাকান থেকে বিদেশীরা সরে যেতে বাধ্য হয সেখানে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো কোন কিছু করতে পারল না। বিষয়টা এমন বাস্তব যে তারা বীভৎসতা দেখে ভয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয। আর সেসব পলাতক, ভীরু লোকগুলো বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেযার জন্য। একই সঙ্গে নানা বাহানা করে। রোহিঙ্গাদের উপর এরকম দমন পীড়ন ও তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা কয়েকশ’ বছর ধরে চলছে। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ যে ধর্মের অমোঘ বাণী সেই তারাই রোহিঙ্গাদের উপর কয়েকশ’ বছর ধরে হিংসায় মত্ত হয়ে উঠেছে। বিষযটিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো বার বার ব্যর্থ হলেও সেই ব্যর্থ মাতবররা বাংলাদেশের কাছে আবদার করছে আশ্রয় দেয়ার জন্য। মামার বাড়ির আবদারের মত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে আল জাজিরা প্রধানমন্ত্রীকে মানবতা ও নৈতিকতার ব্যাপারেও প্রশ্ন করে।
যা একবারেই হাস্যকর। এরা আমাদের ঘরে যা ঘটে তা নিয়েও মানবতা শেখায় বাইরে কিছু হলে তা দিয়েও আমাদের মানবতা শেখায়। দেশের মধ্যে ক্রসফায়ারের ঘটনা আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু বার্মার ঘটনায় আমাদের মানবিক ও নৈতিক দায় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে কেন? কারণ বার্মার রোহিঙ্গারা কয়েকশ’ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার। এটা হঠাৎ কোন ঘটনা নয়। এতদিন তারা এটা নিস্পত্তি করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য তাদের আর কারো অধিকারের ব্যাপারে কথা বলার বিষয়টিও লজ্জার। তার উপর অন্য কাউকে মানবতা শেখানোর প্রশ্ন তো আসেই না।
দেশের ভেতর থেকে এসব ব্যাপারে আরও নাগরিক সচেতনতার পরিচয় দেওয়া দরকার। কারণ গ্যাংলিডাররা আগের অবস্থানেই আছে।