somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাপিত জীবন-০৪

২৫ শে মে, ২০২২ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সকাল সকাল বসে গেলাম পায়ের নখ গুলাকে সাইজ করার জন্য । আম্মা সুস্থ্য থাকলে কান ধরে সবসময় গরম পানিতে পা ভিজিয়ে পায়ের নখ কেটে দিতো । সেই সাথে চলতো জাত গুষ্টি উধারের নামে অজস্র বাক্যবান । কি এক অজানা কারনে আমার হাত পায়ের নখ ছিলো ভয়ানক শক্ত । পানিতে ভিজিয়ে নরম না করে কাটা যেতো না । ভোতা একটা দায়ের মাথার সাহায্যে নখের যত্নাত্তি করার অপচেস্টায় ব্যাস্ত আছি দেখে বড়দা মুচকি হেসে মাথায় খোটা দিয়ে কাঠের সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলো আজকাল বড়দা সুজুগ পেলেয় মাথায় হাতের বুড়াঙ্গুল আর তার সাথের আঙ্গুল একসাথে করে ঠোকার মতো করে মাথায় মারে বেশ লাগে আমার একদম পছন্দ না। তারপরেও মারে আর খিক খিক করে করে হাসে । আমাদের বাড়ির উপরে ওঠার সিড়িটা আর দশটা সিড়ির মতো না একটা লম্বা মোটা গাছের গায়ে কিছু তক্তা লাগিয়ে দেয়া ওই তক্তায় পা বাধিয়ে অনেকটা বানোরের মতো গাছ বেয়ে উঠতে হয় । আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে । অঞ্জুতো মাস্টার তিড়িং বিড়িং করে উঠে পরে । আমি এর মধ্যে শ খানেক বার পরে হাটুর বাটি থুতনী দাঁত নড়িয়ে ফেলেছি ।

উপর থেকে বেশ গুনগুন আওয়াজ আসছে । বড়দার শুনলাম ঘোঁতঘোঁত করে উঠলো মনে হয় । আমার এইসব গায়ে লাগে না । চাচা আসার বেশ কিছুদিন পর থেকেই বড়দা এমন ঘোঁতঘোঁত করছে যেনো বুড় ষাড়ের পেটে গুড় গুড় রোগ হয়েছে । সারাক্ষন গুড় গুড় করতে থাকে ।কিছুক্ষন পর দেখলাম চাচাকে মুখপোড়া বাদরের মতো ঝুলে ঝুলে সিড়ি দিয়ে নামতে। হাতে একটা কাগজের মতো কিছু , পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার পা মাড়িয়ে দিলো বেশ ব্যাথা পেলাম অথচো চাচার কোন বিকার নাই হনহন করে হেটে চলে গেলো । আমার অবশ্য ওতে কিছু যায় আসে না ওমন কতই তো লাগে। এই তো সেইদিন বকুলদের বাড়িতে ডাব পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পরে গেলাম পাশে পচা নালায় পা টা শুধু মচকে গেছিলো আর তেমন কিছুই হয় নাই। এই খবর বড়দা জানে না জানলে কান ধর এমন টান দিতো একটানে কানের দফারফা হয়ে যেতো । বড়দা কে দেখলাম হাসতে হাসতে সিড়ি বেয়ে নামতে। দিলাম সালাকে কড়কে । জমি লিখে নিতে চায় কত্তবড় সাহস। দেব না সালা জমি দেখি তুই কি করতে পারসি। আমি না বুঝে বড়দার বিশ্ব বিজয়ী মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার পাশে বসে গায়ের জামাটা খুলে পাশে রেখে আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললো বুঝলি বিল্টু আমাদের দাদার বাড়ি অনেক জমি জমা আছে সব বাবার নামে মানে আমাদের নামে কিন্তু ওই যে বাবা সব ছেড়ে ছুড়ে এসেছে না সেই জন্য আমারা তা খেতে পাই না। এই চাচা সালা এসেছে সেইসব জমি আমাদের কাছ থেকে দলিল লিখিয়ে নিতে। ব্যাটা বাটপার । দরদ দেখছি উতলে উঠছে। তুই খবরদার কিছুতেই সাইন টাইন দিতে যাস না কিন্তু । কিছু বললে বা ভয় দেখালে সোজা আমাকে বলবি । ঘাড় ধড়ে এমন কড়কে দেব না যে ব্যাটার হাগা ছুটে যাবে। আমি মাথা মুন্ডু কিছু না বুঝে মাথা ঝাকিয়ে বললাম আচ্ছা বলে নিজের পায়ের রুপচর্চা করতে লাগলাম । কিছুক্ষন ভেবে বড়দা কে বললাম আচ্ছা দাদা আমি তো সাইন দিতে জানি না। বড়দা আমার দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বললো নাম লিখতে জানিস, হ্যা, ঘাড় নেড়ে বললাম গাধার ওস্তাদ ওটাই সাইন বলেই মাথায় একটা খোটা দিলো ।

পাশের বাড়ির বকুলের সাথে আজকাল আমার বেশ ভাব হয়েছে । রোজ দুপুরে বকুল ওর বাড়ি থেকে তরকারী এনে আমাকে দিয়ে যায় । আমিও তা লুকিয়ে চুড়িয়ে খাই। অঞ্জু দেখলে সব খেয়ে নেবে এই ভয় তো আছেই তার উপরে বকুল আনে মাত্র দুই পিস বা একপিস যা ভাগ করে খাওয়া যায় না । সেদিন বকুলদের বাড়িতে ডাব পেড়ে দিলাম তাই ওর বাবা আমাকে বিশ টাকা দিলো, আমি সেই টাকা দিয়ে অঞ্জুর জন্য চকলেট আর আম্মার জন্য মিস্রি এনে দিয়েছিলাম। আম্মা মিশ্রী খুব পছন্দ করে। আমি অবশ্য দুইটা তালবড়া খেয়েছি ওটা কাউকে জানাই নাই যদি রাগ করে এই ভয়ে । বকুলটা না খুব পাজি আমাকে বল্টু বলে ডাকে, আমি নাকি দেখতে বল্টুর মতো । সেইদন ওদের বাড়িতে অনেক রান্না হলো রাস্তা থেকে গন্ধ আসছিলো পোলাউ মাংস রান্নার। আমি রাস্তার পাশে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম ভেবেছিলা বকুল আমার জন্য কিছু আনবে। মনে মনে আফসোস হচ্ছিলো সাথে অঞ্জুকে না আনার জন্য সন্ধ্যার পরেও বকুল এলো না দেখে খুব কান্না পেলো সারাদিন না খাওয়া তার উপরে বাড়িতে কিছুদন ধরে ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে মেজেজ খুব খারাপ এর মধ্যে চাচা একটা কাগজ এনে হাতে দিয়ে বলোলো ভাতিজা একটা কাজ করো তোমার নামটা লিখে ফেলো আমি বাজারে গিয়ে রসমালাই আনাচ্ছি । কাগজ দেখেই বড়দার কথা মনে পরে গেলো কিছু না বুঝেই কাগজটা টান দিয়ে ছিড়ে ফেললাম তারপর চিৎকার করে বললাম সালা বাটপার ভাগ এখান থেকে । পাশে ছিলো একটা আধপোড়া লাকড়ি ওটা দিয়ে পেটাতে গেলাম। আম্মা উপর থেকে শব্দ শুনে ছুটে এসে আমাকে দুই চড় বসিয়ে দিয়ে রতন চাচার দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বললো রতন তুমি চলে যাও এখান থেকে, আমি বেচে থাকতে আমার সন্তানদের হোক আমি তোমাকে লিখে দেব না । হঠাৎ করে রতন চাচার কি হলো সে আম্মার চুলের মুঠি ধরে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করতে থাকলো। শালীর শালী তোর জন্য আমার ভাই মরছে, মাগী কোথাকার। জন্ম দিছস দুইটা কুত্তার বাচ্চা। আমার গায়ে হাত দেয় কত্তবড় সাহস , আম্মার গলাটিপে ধরতে গেলে আমার হুস ছিলো না আমি পোড়া লাকড়ি দিয়ে বেদম পেটাতে লাগলাম রতন চাচা বড় মানূষ তার গায়ে তেমন কিছুই লাগলো না সে আমাকে গলা ধরে উঁচু করে উঠানে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আম্মাকে টেনে ঘরের ভেতর নিতে লাগলো। আমি আছাড় খেয়ে পরে উঠে দাড়াতেই দেখি বড়দা দাঁড়িয়ে আছে মাঝ উঠানে। সে ছুটে গিয়ে রতন চাচার মাথার চুল ধরে টেনে মাঝ উঠানে নিয়ে আসলো। আম্মা কে ঠেলে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে পেছন থেকে দরজার খিল তুলে দিলাম আমি । রতন চাচা বড়দার হাত থেকে বাচার জন্য হাউমাউ করে চিৎকার করে সারা এলাকা মাথায় তুলে নিলো। বড়দা রতন চাচাকে মাটিতে ফেলে বিশাল বড় একটা ছুড়ি রতন চাচার গলায় চেপে ধরলো পেছন থেকে বকুলের বাবা বড়দার হাত চেপে ধরলো। তাকিয়ে দেখি এলাকার সব লোক জড় হয়ে গেছে। রতন চাচা বকুলের বাবার পেছনে লুকিয়ে আমাকে আর বড়দাকে নোংড়া গালি দিতে লাগলো আম্মার নাম ধরে গালাগালা করতে লাগলো। বড়দা বকুলের বাবার হাত ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে রতন চাচার বুকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলো দিলো। রতন চাচা এক লাথি খেয়েই জিব বের করে অজ্ঞ্যান । পেছনে হাত তালির শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি অঞ্জু জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিচ্ছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। বড়দা রতন চাচার ওমন চিত হয়ে পরে যাওয়া দেখে কাউকে কিছু না বলে হনহন করে হেটে চলে গেলো কেবল আমাকে বললো বিল্টু আম্মা কে দেখিস।

পুর্বের পর্ব

view this link

view this link




সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×