
বেশ কিছুদিন ধড়ে আমি প্রচন্ড বিরক্ত । গরমের সময় আমি সাধারনতো বাসায় থাকলে সেন্ড গেঞ্জি আর হালফ প্যান্ট পরে থাকি । তো আমার সেন্ড গেঞ্জিতে কে বা কারা পানের পিক ফেলে যাচ্ছে । দুই দুই টা গেঞ্জি বাতিল করতে হয়েছে । দাগ কোন ভাবেই যায় না। ধুয়ে বাড়ান্দায় শুকাতে দিলে সম্ভাবত উপর থেকে কেউ পানের পিক ফেলে তা নিচে না গিয়ে আমার গেঞ্জিতে শিল্পকর্ম রেখে যায় । কাজের বুয়া কে যথারিতি ধমক টমক দিয়ে মনে হালকা শান্তি শান্তি ভাব এনে নিলাম । কিন্তু বিধি বাম আম্মা তার সার্বক্ষনিক সহযোগীর সাথে ধমকা ধমকি মেনে নিলো না । সে আমার আরো দুইটা গেঞ্জি এনে দেখালো, এই দেখ এখানে ও দাগ । এটা মোটেও পানের পিকের দাগ না । এটা রক্তের দাগ । যা তোর পিঠ থেকে আসছে। মহা চিন্তায় পরে গেলাম । আয়নায় নিজের পিঠ ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখে ও কোন খুদ পেলাম না যে সেখান থেকে রক্ত বের হতে পারে । আম্মার সাথে খানিক হালকার উপর ঝাপসা ঝগড়া করে অফিসে চলে গেলাম ।
আফিসে বসে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করছি । এমন সময় আম্মার ফোন । আম্মা বললো আমার বিছানায় ও রক্তের দাগ পাওয়া গেছে । আরে ধুর মশার রক্ত হবে । আজকাল মশা গুলা যে পরিমানে রক্ত খায় তা দিয়ে মোটামুটি ওয়াসার ট্যাংক চাইলেই ভরা যাবে। ফোন টা কেটে দিয়ে নিজে খানিক চিন্তায় পরে গেলাম । রুমে এরসল মেরে কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাই ডেঙ্গুর প্রেমময় চুম্বনের হাত থেকে বাঁচার জন্য । তারপরেও কি ডেঙ্গু সোনা আমাকে চুম্বন দিতে জীবন বাজী রাখলো । ডেঙ্গু প্রীয়তমার জন্য মনের সুক্ষ কোনে খানিক ভালোবাসা উঁকি মেরে গেলো । আহারে ডেঙ্গু । এ তোমার কেমন প্রেম । চুম্বনেই যার বিষ ।
কাজের মধ্যে ডুবে গেলাম । কখন যে এক ঘন্টা হয়ে গেছে মনে নাই । পেছন থেকে অফিস সহকারী ছেলেটা কানের কাছে চেঁচিয়ে উঠলো । স্যার রক্ত । কাজ ফেলে চমকে গেলাম । রক্ত? কই রক্ত? । স্যার আপনার পিঠে ভেসে যাচ্ছে রক্তে । মোটামুটি আঁতকে উঠে ব্যাঙের মতো লম্ফ মেরে উঠে দাড়ালাম। হাত পিঠের কাছে নিতেই টের পেলাম হাতে ভেজা ভেজা চটচটে জাতীয় কিছু লেগে গেলো । হাতটা চোখের সামনে আনতেই দেখতে পেলাম হাতের আঙ্গুল গুলো রক্তে মাখামাখি । দৌড়ে প্রক্ষলন গারের আয়নায় শরীর বাঁকিয়ে আমার ফুলে ফেপে থাকা পিঠ খানা দেখার চেষ্টা করলাম । পিঠের এক জায়গা দিয়ে রক্ত গল গলিয়ে পরছে । ব্যাপারটা এমন যেনো রক্ত ভড়া কোন ব্যাগে কেউ ছিদ্র করে দিয়েছে । মাথার মধ্যে দুই দুইটা বিশ্ব পাক দিয়ে উঠলো । আমি টলমল পায়ে নিজেকে হেঁচড়ে পাঁচরে নিজের চেয়ারে নিয়ে এলাম । আমার সাদা শার্ট জাপানের জাতীয় পতাকার রুপ নিয়েছে।
অফিস সহকারী কে জিজ্ঞাসা করলাম আশেপাশে কোন ডাক্তার খানা আছে? সে মাথা নেড়ে বলোলো, না নাই স্যার। তবে ফার্মেসি আছে । রিক্সায় ত্রিশ টাকা নেবে । থর-হরিকম্প পদ যুগল নিয়ে ছুটে গেলাম লিফটের দিকে । লিফট নষ্ট । আধা ডিগবাজি আধা চিতবাজি খেয়ে দশ তালা থেকে নেমে রিক্সায় চড়ে ফার্মেসি চলে গেলাম । ফার্মেসির ভদ্রলোক খুবি সজ্জন ব্যাক্তি । দৃশ্যমান তাই মনে হলো । আমি ছুটে গিয়ে কথা নাই বার্তা নাই নিজের শার্ট খুলে ফেললাম । আচমকা এমন হস্তি সম ব্যক্তির বস্র হরন দেখে ভদ্রলোক চমকে উঠলেন । মনে হয় ভাবলেন এ আবার কোন নতুন ধরন চান্দা চাওয়ার অপচেষ্টা । তবে আমার মুখে ভয় আর ভিতীর সংমিশ্রিত পঁচা আলুর চেহাড়া দেখে তিনি খানিক আশ্বস্ত হলেন । আমি আমার মাংসল পিঠ খানা তার দিকে ফিরিয়ে দিলাম । তিনি দ্বতীয়বার চমকে গেলেন। খানিক টা আর্ত চিৎকার দিয়ে বললেন কে আপনাকে ছুড়ি মারলো । আমি মাথা নেড়ে বললাম আমি জানি না । তিন কি চার দিন ধরে কে বা কারা জানি আমার অলক্ষে ছুড়ি মেড়েই যাচ্ছে আর আমি রক্তাহত । দয়া করে রক্ত থামান । তিনি ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বললেন কোন পুলিশ কেস তো না ? আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম আমার চৌদ্দ গুষ্টির কেউই একটা পিপড়াও মারে নাই আমি তো রক্ত দেখলে অজ্ঞান হয়ে যাই । তিনি আমার কথা আংশিক মেনে নিলেন এবং স্বজ্জন ব্যাক্তির ন্যায় আমার পিঠে যাহা যাহা লাগে তাহা তাহা দিয়ে পরিষ্কার করে এক খানা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন । সেই সাথে পরামর্শ দিলেন পাশেই একটা হাসপাতাল আছে ওখানে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে।
স্বজ্জন ব্যাক্তির গলার আওয়াজ শুনে খানিক চমকে গেলাম । মনের মধ্যে আলবিদা আলবিদা একটা ভাব এসে গেলো । দ্বিতীয় প্রশ্ন না করে ছুটে গেলাম সেই হাসপাতাল । বিশাল পেল্লায় হাসপাতাল দেখে পকেটের মানি ব্যাগ ছুয়ে দেখলাম যে ওটা আছে নাকি হাসপাতাল দেখেই ভেগে গেছে । না আছে কিন্তু স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবি খারাপ। যাই হোক আল্লাহ ভরসা বলে এগিয়ে গেলাম ইমারজেন্সিতে ।ইমারজেন্সি, সে যেনো আর একটা হাসপাতাল । রুগী গিজগিজ করছে । প্রাই সবাই জ্বরের রুগী । পুর্ব অভিজ্ঞতায় জ্বরের রুগী মানে করনা ভাব খানা মনে উঁকি দিতেই পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো ডেঙ্গু। যাক বাবা বাঁচা গেলো ডেঙ্গু প্রিয়তমা মোটেও ছোঁয়াচে না। খানিক সাহস সঞ্চয় করে ডেস্কে বসা এটেন্ডেন্ট কে বললাম ডাক্তার আছেন। ভদ্রলোক হাজার বছর না খাওয়া বুভুক্কের মতো কেউ যদি হঠাত খাবার পায় যেমন করে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠিক তেমন করে আমাকে টেনে নিয়ে বিছানায় জোর করে শুইয়ে দিলেন । বিভিন্ন যন্ত্রপাতি লাগিয়ে দিলেন হাতের আঙ্গুলে আর পায়ের আঙ্গুলে । সেই সাথে প্রেশার মাপার যন্ত্র এনে প্রেশার মাপে পাশে দাঁড়ানো একজন ত্বন্নি তরুণীর দিকে তাকিয়ে বললেন সিস্টার নোট করুন। প্রেশার ১৮০/১৪০ পালস ৯২ জ্বর ৯৮। প্রেশারের আবস্থা শুনে আমার প্রেশার সম্ভাবত আরো দুই ডিগ্রি বেড়ে গেলো । আমি ভাবলাম ইনি বুঝি ডাক্তার । মনে বড় আশা নিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম , ভাই বাঁচার আশা কি নাই । তিনি যন্ত্রপাতির আড়াল থেকে মুখ তুলে গম্ভির ভাবে বললেন আমি ডাক্তার না । ডাক্তার আসুক তাকে জিজ্ঞাসা করবেন । তার আগে বলুন আজ আপনি কি খেলেন ? মুলা শাক দিয়ে রুটি আর ডিম ভাজা, গরীবের খাবার, সামান্য রসিকতা করতে চাইলাম । মহল স্বাভাবিক করার জন্য । কিন্তু কাজ হলো না আমাকে একা ফেলে উনি চলে গেলেন । আমি শুয়ে শুয়ে হাসপাতালের ছাদের সৌন্দর্য দেখে বিমহিত হলাম । তেমন কিছু না সাদা রঙের চুনকাম । তারপরেও কেন বিমহিত হলাম কে জানে ।
কিছুক্ষন পড়ে একটা হুইল চেয়ারে ঠেলে আমাকে ডাক্তারের সামনে নেয়া হলো । ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে আপনার। আমি বললাম রক্ত । উনি চমকে উঠে বললেন কোথায় রক্ত । জ্বী না , মানে আমার পিঠে রক্ত বের হচ্ছে । ডাক্তার সরু চোখে দেখে বললেন এটা সার্জারির কেস । ওখানে যান । আমি বসে রইলাম হুইল চেয়ারে । এবার আর কেউ এলো না আমাকে ঠেলে সার্জারি বিভাগে নিয়ে যেতে । কিছুক্ষন বসে থেকে যখন কাজ হলো না ভাবলাম কাউ কে ডাকবো এমন সময় ডাক্তার নিজেই বললেন আপনার পায়ে তো কোন সমস্যা নাই উঠে চলে যান বসে আছেন কেনো । লজ্জার মাথা খেয়ে নিজ দায়ীত্বে উঠে সার্জারি বিভাগে চলে এলাম। ডাক্তার ওটি তে আসতে সময় লাগবে । বসে বসে ফেইসবুকে নতুন যুগের লেখকদের লেখা পড়ছিলাম যা কিছুক্ষন পড়ে ইচ্ছা উবে গেলো । চটি সাহিত্যের পর্দানশীল ভার্শান । না ঘার কা না ঘাট কা । হালকা ঝিমের মতো এলো । এমন সময় দেখলাম এক রহস্যময়ী ওড়না আমাকে পাশ কাটিয়ে চেম্বারে ঢুকে গেলো । মনের মধ্যে কিঞ্চিৎ ব্যাথা বোধ করলাম । দুনিয়ার সব রহস্যময়ীদের কেন ডাক্তার হতে হবে। এদের দেখতে আমাকে অসুস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নাই দেখছি ।
কে যেনো আমার নাম ধড়ে ডেকে যাচ্ছে । ঝিম ভাব থেকে স্বজ্ঞ্যানে ফিরে উঠে ডাক্তারের কাছে চলে গেলাম । হুজুরেরা বলে বেহেস্তের হুর নাকি দুনিয়াতে একবার উঁকি দিলে দুনিয়া তছনছ হয়ে যাবে । কিন্তু আমার সামনে যে ডাক্তার উনি তাকালে কি হবে জানি না তবে রুগী যে আজীবন রুগীর খাতায় নাম লেখাবে এটা নিশ্চিত । খুশি মনে বসে গেলাম মুখের উপর একখানা তেল তেলে হাসি নিয়ে । কারন পরের পর্বটা আরো রোমান্টিক । আমার ক্ষত দেখাতে আমাকে আমার শার্ট খুলতে হবে । ইমোশনে আমার বুকের ছাতি ফুলে উঠেছে । বুকের ভেতর আফ্রিকান ঢোলের ডাবল বাজানা বাজতে লাগলো । মৃদু সঙ্গীতে সুরে কেউ আমাকে যেনো ডেকেই যাচ্ছে । হঠাত করে সঙ্গীত বজ্রবান হয়ে কর্ন গহবরে এসে ধাক্কা খেলো । চমকে উঠলাম । বজ্রপাতের কারন খুজতে লাগলাম । দেবীর আরালে যে অসূর আছে উহা দেখার সুজুগ হয় নাই কিন্তু এবার হলো । কি সমস্যা ? আমার দিকে মাথা নেড়ে জিজ্ঞাসা করলেন। জ্বী পিঠ থেকে রক্ত বের হয় । বজ্রবানের কারনের গলার আওয়াজ কিছুটা ভড়কে গেছে। জোরে বলেন শুনি না। এইবার খানিক জোর গলায় বললাম পিঠ থেকে রক্ত বের হয় ।
জামা খোলেন । আচমকা বলে উঠলেন সেই বজ্রবানধারী ।
জামা খুলবো ? ইশারায় সুন্দুরী কে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ।
হ্যা খোলেন, না খুললে বুঝবো কি করে ।
আমি খুশি মনে জামা খানা খুলে বুক উঁচিয়ে পেট টা কে চেপে শ্বাস বন্ধ করে থাকলাম । ডাক্তার খপ করে মাথা টা ধড়ে টেনে নিচে নামিয়ে পিঠ দেখতে লাগলেন । আমি মাথা নিচু অবস্থায় যতোটা সম্ভব সুন্দুরীর রি-একশান দেখতে লাগলাম । হায় সুন্দুরী আমার অমন গোলগাল পিঠের দিকে চেয়েই দেখলো না । মাথাটা আর একটূ কাত করে চোখের সব শক্তি ব্যয় করে ভালো করে সুন্দুরীর মুখের মায়া দেখতে লাগলাম কারন আমাকে চেপে ধরা ডাক্তারের বগল থেকে শুটকি পচার গন্ধ আসছে । সৌন্দর্য মাঝে মাঝে যে এনেস্থিসিয়ার কাজ করে এইবার হাড়ে হাড্ডিতে টের পেলাম । পিঠের উপর কিছু কারুকাজ করে আমাকে সোজা দাড়াতে বললেন । কিচ্ছু হয় নাই আপনার একটা আচিল ছিলো যা আপনি খুটিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছেন । ঔষাধ দিলাম ঠিক হয়ে যাবে । সেই সাথে ভুড়ি আর ওজন কমান । অতঃপর সুন্দুরী হাসিলো । সে কি খিলখিল হাসি , আমি চোখ পেতে রই , ও আমার আপন হৃদয় গহন দ্বারে বাড়ে বাড়ে চোখ পেতে রই গান খানার নিজ ভার্সানে মনে মনে গুন গুনাতে ইচ্ছে হলো । নিজের ভুড়ি খানার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে হাতে ঔষাদের ফর্দ নিয়ে খুশি মনে বেড়িয়ে এলাম । কাল আবার যেতে বলেছে । মাঞ্জা মেরে যেতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৯:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



