১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ঠিক বিজয় দিবসের আগে রাজাকারদের তালিকার একটি অংশ প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যার সংখ্যা ১০ হাজার ৭৮৯ জন। এদেশের তরুণ প্রজম্মের মধ্যে এ বিষয় টি আগ্রহের বড জায়গায় পরিণত হয়েছে। তার কারণঃ
১. একটি দল একচেটিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাণিজ্য করে যাচ্ছে, যাতে মনে হচ্ছে তারাই মুক্তিযুদ্ধের সব ঠিকাদার
২. ক্ষমতাসীন দল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যা বলে, দলীয় ভাবনার মিডিয়া তা ঢাক ঢোল পিটিয়ে সত্য হোক মিথ্যা হোক তা প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে
৩. মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া আর একপেশে লেখনির কারনে মনে হচ্ছে বিরোধী দল, ইসলাম যারা মানে, লেবাসে যাদের ইসলামী মনে হয় তারাই দেশের স্বাধীনতা বিরোধী
৪. রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে এবং অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে
৫.সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের আবেগ এবং চেতনা আমাদের দেশের ঘৃণ্য রাজনৈতিক চালে পডে একটা যাতনার কারন হয়ে দাডিয়েছে।
আমাদের তরুণ সমাজ লেখাপড়া, স্টাডি, গবেষণা এগুলার চেয়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক নানাবিধ কাজে জডানো, তাই পডে গবেষণা করে সঠিক ইতিহাস এবং রাজাকারের হিসেব জানা আমাদের জন্য অনেকটা কস্টকর। রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেছেন উনারা কোন নতুন তালিকা করেন নাই, এগুলা সরকারি দলিলে ছিলো, উনারা জাস্ট প্রকাশ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে উনার এ সহজ সরল সত্য উক্তির সাথে সম্পুর্ণ একমত। কারন রাজাকারের তালিকা নতুন করে করার কোন বিষয় নয়, এবং সুযোগ ও নেই, নতুন করে তালিকা করলে তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হবেনা। এটি যুদ্ধের সময় সরকারি বিভিন্ন অফিসের দলীলে আছে এবং থাকার কথা।
আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারো সাথে স্বাধীনতা বিরোধী বা রাজাকার প্রসংগে আলোচনা হলে আমার দুটি আরজি থাকেঃ
১. রাজাকারের তালিকা সরকারি দলীল দস্তাবেজ এ আছে তা সম্পুর্ণ অপরিবর্তিত ভাবে প্রকাশ করা হোক
২. স্বাধীনতা পরবর্তী দালাল আইনে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বা যাদের শাস্তি হয়েছিলো সেই তালিকা প্রকাশ করা হোক। তাহলে লোকজন নিজ দায়িত্বে জেনে নেবে কারা রাজাকার এবং কোন দলের। এবং আমি এটাও বলতাম আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি কেউ এটা প্রকাশ করবেনা। কারন যারা ওই টাইমে রাজাকার ছিলো যারা বেচে আছে তারা এখন এসকল কোন না কোন দলের সাথে যুক্ত। তাই তারা কেউই চাইবেনা এমনভাবে থুতু মারুক যা আবার নিজের গায়ে পডুক। এবং আমি জোর দিয়ে বলতাম যে অন্যকেউ প্রকাশ করতে চাইলেও আওয়ামীলীগ করবেনা, কারন তারাতো নিজেদের হাডির খবর নিজেরা বেশী জানে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েত তারা মানুষের এবং তরুণ প্রজন্মের আবেগ নিয়ে খেলা করে, ভুল পথে পরিচালনা করে।
আওয়ামীলীগ প্রকাশ না করার কারন হিসেবে আমার যুক্তি ছিলোঃ
১। ন্যশনাল এ্যাসেম্বলীতে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ১৬২টি আসন এর মধ্যে ১৬০ টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শতকরা হিসাবে ১০০টি আসনের মধ্যে ৯৯ টিতেই জয় লাভ করে।
২। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক এ্যাসেম্বলীর ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে।
৩। ‘১৯৭০-এর নির্বাচনে ৯৭ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। (বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, পৃষ্ঠা-১২)
৪। মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন আওয়ামী লীগ ৯৮ শতাংশেরও বেশি মানুষের সমর্থন পেয়েছে , বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র : তৃতীয় খণ্ড (পৃষ্ঠা-৪৮)।
তাহলে বুজাই যাচ্ছে এ অংশের বেশির ভাগ মানুষই এ দলকে ক্ষমতায় চাইছে এবং সাপোর্ট করতো। অন্যদলের লোক ছিলো খুবই নগন্য। তাই হাজার হাজার রাজাকার এ অংশের মানুষ থেকে হয়েছে যাদের বেশীরভাগ আওয়ামীলীগই করতো। তাই রাজাকারের তালিকা প্রকাশে তাদের জন্য ক্ষতিকর ই হবে। হয়ত স্বাধীনতার পর অনেক রাজাকার তারা দল বা মত চেঞ্জ করতে পারে।
যাইহোক দীর্ঘদিন পরে কি মনে করে কি উদ্দ্যেশ্যে এ সরকার রিক্স নিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করতে গেলো তা তারাই জানে। তবে তালিকা সম্পুর্ণ অবিকৃত ভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আমার ১০০ ভাগ অবিশ্বাস রয়েছে যে আদৌ মুল তালিকা প্রকাশ হবে কিনা!!!। এবং এ অবিশ্বাসের পেছনে শক্ত যুক্তি এসে দাডিয়েছে, তা হলো আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন "আওয়ামীলীগে থাকা রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হোক"!!!। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও একই কথা বলেছেন। তার মানে রাজাকারের বিশুদ্ধ তালিকা প্রকাশ এর ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এ সরকার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ এর কারন হিসেবে আমার যা মনে হচ্ছে, তা হলোঃ
১. তারা একটা ক্রেডিট নিতে চাইছে যে আমরাই মুক্তিযুদ্ধের দল আমরাই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছি
২. বিএনপি এবং জামাতের লোক রাজাকারের তালিকায় আছে এবং এরা কখনো মন্ত্রী এমপি হয়েছে তা প্রকাশের মাধ্যমে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা
৩. বিএনপি জামাতের প্রভাবশালী কারো নাম থাকলে দালাল মিডিয়া দিয়ে তাদের ব্যপারে রিপোর্ট প্রকাশ হবে, সামাজিক ভাবে দল এবং ব্যক্তিকে বেকফুটে ঠেলে দেয়া যাবে।
এ সরকার ছাই দিয়ে ধরে তালিকা প্রকাশ করতে চাচ্ছে এরমধ্যে ও বাইং মাছের মত হাত পছকে বেরিয়ে এলো রাজাকার গোলাম আরিফ টিপুর নাম!!! যে কিনা রাজাকারদের বিচারের জন্য ফয়দাকৃত পুতুল আদালতের প্রধান আইনজীবী ।।। অন্যকারো নাম ও হয়ত প্রকাশ পেয়েছে বা পাবে ,, কিন্তু যার নামটা প্রথমে মিডিয়ায় আসলো সে হলো চেতনাবাহী দলের লোক এবং যে আদালতে একজনের অপরাধ আরেকজনের কাধে দিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে, সাক্ষী দিয়েছে তারা যাদের বয়স যুদ্ধের সময় ৩/৪/৫ বছর এমনকি যার বয়স ৯ মাস ছিলো তার সাক্ষ্যের মাধ্যমে (প্রথম আলোতে প্রকাশিত বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের লেখার থেকে তথ্য)। যারা বলছেনে আমি শুনেছি, এ এ ঘটনা হয়েছে,,,, যারা ঘটনা শুনেছেন কিন্তু যার বিচার হচ্ছে তার কোন সম্পৃক্ততার কথা বলতে পারেনাই। বিচার হতে হবে স্বচ্ছ এবং আইনগত বিষয় মাথায় রেখে, আবেগ দিয়ে নয়, যাতে কেউ এর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।
রাজাকারের তালিকায় সরকারি, বিরোধী দল, বিএনপি, জামাত, মুসলিম লীগ সহ অনেক দলের লোকের নাম থাকার কথা। সরকারি দলের লোক রাজাকারের তালিকায় থাকলে তারা তা মানতে চায়না। এরকম হলে সব রাজাকারই এখন আওয়ামীলীগ হইয়ে যাবে এবং দাবী করবে তারা রাজাকার ছিলোনা। সরকারি দলের লোক রাজাকারের তালিকায় থাকলেও অসুবিধা নাই কারন তারা চেতনা জাতক ক্যাপ্সুল খেয়ে চেতনাবাহী তাই উনাদের নাম আসলে যুক্তি হিসেবে আসবে এটা ভুলে আসছে, কেউ ষড়যন্ত্র করেছে বা বলা হবে উনি মুক্তিবাহিনীর গোয়েন্দা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি ।।
তবে তরুণরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর বিচারকের ভাষায় বলতে চাইঃ আমরা বর্রতমান এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু সাহেবের কথা বলছিনা, আমরা ৭১ সালের সেই যুবক আইনজীবী গোলাম আরিফ এর কথা বলছি এবং আমরা সেই যুবক গোলাম আরিফ এর বিচার চাই এ ট্রাইব্যুনালে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




