এক শ্রেণীর লোক যাদের বামেদের নামে এলার্জি আছে।তাদের দৃষ্টিতে বাম রাজনীতি অর্থহীন।কিছু পত্রিকা বামেদের নামে বিষেদাগার করে চলেছে।কিছু ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বামেদের হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন। আমি বরং বামেদের প্রশংসা করি,তাদের ভূমিকার জন্য।১৯৯০ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে যতগুলোমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন হয়েছে তার দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে আমার কথার যৌক্তিকতা।
বামেদের সাংগঠনিক কাঠামোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তারা বেশ দুর্বল। হাতে গোনা ১৫টি বাম দল আছে বাংলা দেশে। তন্মধ্যে, জাসদ(ইনু),কমিউনিস্ট পার্টি ,বাসদ(খালেকুজ্জামান),গনফোরাম,ওয়ার্কাস পার্টিও সাংগঠনিক
কাঠামো মোটামুটি ভালো। বাকীরা নামসর্বস্ব,যাদের কথা বলা হলো তারাও ব্যক্তিসর্বস্ব।
তবে সুশীল সমাজে বামেরা যথেষ্ঠ শক্তিশালী।
এবার আসা যাক ,বামেদের অবদানের কথায়। বাংলাদেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বামেদের অবদান আছে। দুর্নীতি থেকে উত্তরণের পথে টি আই বি নামে যে সংগঠনটি সোচ্চার ছিল , তার বাংলাদেশ অধ্যায়ের প্রধান মোজাফ্ফর আহমেদ একজন বামপন্থী। ফুলবাড়িয়ায় এশিয়ান এনার্জির বিরুদ্ধে যে গণ বিক্ষোভ দেখেছি,তার নেতৃত্বে ছিল আনু মোহাম্মদ, যাকে মাকর্সবাদী বাম ভাবুক বলা হয়।সমপ্রতি, বাংলাদেশের দুই বিজ্ঞানী আর্সেনিক সোধনকারীযন্ত্র আবিষ্কারের জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে পুর®কৃত হয়েছে। যন্ত্র টিকে নামমাত্র মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ বাংলাদেশ মুক্তি কেন্দ্র নামে যে এনজিওটি করেছে,তার অন্যতম নেতৃত্বে আছেন আবুল
বারাকাত। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যারা নিরলস কাজ করছেন, মোজাফ্ফর আহমেদ, খালেকুজ্জামান,আবুল বারাকাত, এ, এম, আকাশ,আতিউর রহমান সকলেই বাম বুদ্ধিজীবি। বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ ড: কামাল হোসেন গনফোরামের সভাপতি। বাংলাদেশের নারী আন্দোরনের নেতৃত্বে যারা আছেন, হেনা দাস,আয়েশা খানম,ফরিদা আকতার,শিরিন আকতার,খুশি কবির প্রমুখ সকলকে দুর্জনেরা বামপন্থী হিসেবে গালিদেয়।স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রণয়নে ও তার চলমান চেতনাকে ধারণ করার আন্দোলনে বামেদেরভূমিকা অপরিসীম।স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার কার্য সম্পাদনের বিষয়ে সোচ্চার সংগঠন ঘাতক দালাল নির্মূল
কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির কি বামপন্থী নন?
নির্মূল কমিটির প্রধান কবির চৌধুরীকে দুর্জনেরা বামপন্থীহিসেবে গালি দেয়।তাছাড়া স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে যে দুজন ব্যাক্তি স্ব স্ব পদ থেকেপদত্যাগ করেছেন তারা বামপন্থী ছিলেন। তাদের একজন সৈয়দ আবুল মকসুদ,যিনি বিসিবির উপসম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং অপরজন সিরাজুল ইসলাম স্বাধীনতার ইতিহাস প্রণয়ন কমিটি থেকে
পদত্যাগ করেছেন।
স্বাধীনতার ইতিহাস সকল স্তরে পৌঁছে দেয়ার কাজ যারা করছেন ড:জাফরইকবাল,সুলতানা কামাল,মুনতাসীর মামুন,বদরুদ্দিনউমর,মুশতারীশফি,আবুলমোমেন,ড:অনুপম সেন প্রমুখ বামপন্থী। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বামপন্থী। বাংলাদেশে ইরি ,বিরির পরিবর্তে দেশীয় প্রযুক্তিরধান উৎপাদনের গবেষণায় যিনি অগ্রগন্য ফরহাদমাজহার খাঁটি বামপন্থী।
এছাড়াও সামপ্রতিককালে,কানসাট গণবিক্ষোভে নেতৃত্ব দান কারী গোলাম রব্বানী একসময় জাসদের রাজনীতি করতেন।
ডেমরায় গণবিক্ষোভে নেতৃত্ব দানকারী জনৈক ব্যক্তি ডেমরার ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।আমরা এখন বড় দুদলের মধ্যে ঐক্যের কথা শুনছি,১৯৯০ সালে ১৫ দলীয় জোট এবং ৭দলীয় জোটের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় যাদের ভূমিকা অগ্রগন্য ছিল সেই প্রয়াত মো: ফরহাদ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ও অপরজন হাসানুল হক ইনু জাসদের সভাপতি আছেন।
এতসব অবদানের পরও তাদের সমর্থন কমার কারণ বিশ্ব পরিস্থিতি ,মুক্তবাজার অর্থনীতির সাথে খাপ খাইয়ে না নেওয়া।
শ্রমিকের অধিকারের কথা বললেও মালিক তৈরী করতে পারেনি ।অর্থহীন বামেরা বাংলাদেশেরপ্রচলিত রাজনীতিতে অসহায় হয়ে পড়ে।এমনকি তারা তাদের বিপরীত শক্তি ধর্মান্ধ দলগুলোর থেকেও জনসমর্থনেপিছিয়ে পড়ে।আমাদের কি বামেদের অবদান ফিরিয়ে দেয়ার সময় এসেছে? নাকি আমরা ঋণী হয়ে থাকব?মন্তব্য চাইলাম আপনাদের।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




