গতকাল রাতে যে মেয়েটা ভিডিও কলে আপনার সামনে যৌবন জ্বালায় কাঁতরাচ্ছিলো সেই মেয়েটা আজ আপনার ফ্ল্যাটে এসে কাকুতি মিনতি করছে কিছু না করার জন্য। অথচ মিনিট দশেক আগেও যার চোখ থেকে উত্তেজনা বেয়ে বেয়ে পড়ছিলো।
আপাতদৃষ্টিতে এগুলো পড়তে আপনার কাছে আপত্তিকর মনে হলেও চলে যাবো মূল আলোচনায়।
চার পতিতাকে এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেছি। একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা আপনি তো উপভোগ করেন না। তারপরেও এভাবে কিভাবে সামাল দেন? সে জানালো, 'আমরা আসলে উপভোগ কিংবা বিরক্তি কোনভাবেই এটাকে নেই না। মানে কোনটাই লাগে না ওই সময়ে। এটাকে সাধারণ কাজ হিসেবে নেই বলেই শরীর তখন যথেষ্ট সাড়া দেয়। মানে অবশ্যই একটা উদ্দেশ্য থাকে। তবে সেটা অবশ্যই উপভোগ্য নয়।'
আপনি জেনে অবাক হবেন যে শিশুদের ভেতরেও সেক্স ডিসায়ার থাকে। এবং সেটা মাত্র ৩-৭ বছরের মধ্যেই পাঁকাপোক্তভাবে সৃষ্টি হয়। মানে ৭ বছরের একটা শিশুর ভেতরে এই আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরিই বাসা বাঁধে। আচ্ছা কখনো ভেবেছেন কী, আপনাকে হাতে ধরে খাওয়া শেখানো হলো, পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটা শেখানো, মুখে মুখ মিলিয়ে কথা শেখানো হলো, কমোডে বসে ত্যাগ করা শেখানো হলো কিন্তু ওটা শেখালো কে? কোন ধরণের শিক্ষা ছাড়াই তো দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটিতে নিয়ে পৌঁছেছেন।
উপরের কথাগুলো আপনাকে একটু ইজি করে নেয়ার জন্য বলা। এবার আসুন আসল কথায়।
প্রতিটা পরিবারেই মেয়েদের টুকটাক সেক্সুয়াল শিক্ষা দেয়া হয়। পিরিয়ড পরবর্তী একটা প্রাইমারি শিক্ষা প্রতিটা মেয়েই পেয়ে থাকে। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, তখন করা যাবে না, এভাবে করা যাবে না। এই শিক্ষা হোক মায়ের কাছ থেকে, নয়তো বড় বোনের কাছ থেকে, নয়তো ভাবীর কাছে- মোটামুটি কোন না কোন সোর্স থেকে মেয়েরা এই শিক্ষা পেয়ে থাকে।
এবার আসেন আসি ভাই/বন্ধু আপনার কথায়। যে বাবাকে দেখলে ভয়ে প্যান্ট ভেজাতেন তিনি কী এ বিষয়ে কিছু বলেছিলেন? যে বড়ভাইটা আপনার পছন্দের জিনিসটা কিনে দিতেন সবসময়ে- তিনি কী কিছু বলেছিলেন? আচ্ছা এ বিষয়ে কী আপনার দুলাভাই আপনাকে কিছু বলেছিলেন?
আমি শতভাগ নিশ্চিত তারা কিছুই বলেননি। সুতরাং ছোটবেলা থেকেই আপনি বুঝে এসেছেন, এটা দিয়ে এটা হয়, ওটা দিয়ে ওটা করতে হয়, এভাবে ওভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে করা যায়। কিন্তু কার ক্ষেত্রে 'না', ঠিক কখন 'না' এবং কোন পরিবেশে 'না' এই শিক্ষা কিন্তু আপনার জ্ঞানের বাইরে।
মেয়েটা হুট করেই যখন না বললো, তখন আপনার কিন্তু মাথায় ভিসুভিয়াস চড়ে আছে। এটা আপনার দোষ না। এটা ওই মেয়েরও দোষ না। এটা প্রাকৃতিক। উদ্দেশ্য প্রণোদিত (সাম্প্রতিক কিছু ন্যাক্কারজনক ঘটনা) ব্যাতীত এ সবই প্রাকৃতিক। কারণ মিনিট দশেক আগে সেই মেয়ে জানতো না ঠিক দশ মিনিট পরে তার মনে কী ঘটতে চলেছে? আর হুট করে 'না' মেনে নেয়ার শিক্ষাটাও আপনি পরিবার কিংবা সমাজ থেকে পাননি। তাহলে দায় কার?
প্রিয় ভ্রাতা। দায় আপনার না হয়েও দায়টা কিন্তু আপনার ওপরেই চাপানো হয়। কারণ মাহফিলের ময়দানে মাকে রেখে মেয়েটা কী উদ্দেশ্যে পাশের বাগানে আপনার সাথে দেখা করতে গেলো সেটা পত্রিকা লিখবে না। বিয়ের প্রলোভন কী কুরআনের মতই সত্য কিনা সেটা ভদ্রসমাজ ক্রসচেক করবে না। বিয়ের দাবি নিয়ে আপনি মেয়ের বাসার সামনে গিয়ে অনশন তো দূরের কথা, মিনিট পাঁচেক বসে দেখবেন। হাড্ডি আস্ত নিয়ে আসতে পারলে বেনসন আমার, দিয়াশলাই আপনার।
কারণ দিন শেষে পুরুষকেই সংযমী হতে হয়, দিনশেষে পুরুষই অভিযুক্ত। সকল দায়ভার এই গাধার। কারণ এর কাধটা প্রশস্ত।
পরিশেষে ধর্ষণের মত ঘৃণ্য বিষয় আমরা কখনোই সমর্থন করতে পারি না, করিও না। প্রতিটা নাগরিকেরই উচিৎ এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়া এবং পারিবারিক শিক্ষাটা শিশুকাল থেকেই কার্যকর করা। শুধু নারীর ক্ষেত্রেই নয়, পুরুষেরও মানসিকভাবে 'না' বলা ও মেনে নেয়ার অনুশীলন আবশ্যক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৩:৪৯