এক হাতে বিড়ি আরেক হাত উঁচু করে বাস থামিয়ে রাস্তা পার হওয়ার মাঝে একটা লর্ডনেস কাজ করে। মনে হয় বাস নয়তো আমি- জো জিতেগা ওহি সিকান্দার।
আমি মাঝে মাঝে বাসে ইচ্ছে করে ঘুমিয়ে পড়ার ভান ধরি। শুধু কান খোলা রেখে শুনি- এই ভাইয়া কিছু হেল্প করো, এই সুন্দরী ভাইয়া হেল্প করো, এই যে রঙিন ছেলেটা তুমি ঘুমাচ্ছো কেন? তারপর ঠাস ঠাস দুই তালি। অদ্ভুতভাবেই হিজরা দেখলে আমার ঘুম চলে আসে।
নিসর্গ বাসটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে সেটাকে খুব মিস করছিলাম। কিন্তু মতিঝিল ৬ নাম্বার বাসে ওঠার পরে সেটার কথা আর মনে নেই। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে যাত্রা শুরু করে এই যান বাড্ডা, গুলশান, নেপচুন, প্লুটো, ইউরেনাস, শনি, মহাখালি, মালিবাগ হয়ে তারপর গুলিস্তান যায়। এর মাঝে হেলপারের হাতে স্টিয়ারিং দিয়ে লিংকরোডের পাশে খোলা লেকে ড্রাইভার ত্যাগকর্ম সারেন। সেটা দেখে আমারও শখ জাগে, কিন্তু সাধ্যি হয় না।
প্রত্যেক লোকাল বাসেই একজন যাত্রী থাকবেন যিনি সারাটা পথ ফোনে বিশাল ব্যবসায়ী আলোচনা করবেন। তার গলার ভয়েসের তীব্রতা এত থাকবে যে তার ব্যবসা সম্পর্কে অন দ্যা স্পট আপনার সুস্পষ্ট ধারণা হয়ে যাবে। আপনি শুধু বলতে পারবেন না- ভাই ফোন রাখেন, ওপাশে যে আছেন সে এমনিতেই শুনতে পাচ্ছেন।
যাত্রাপথে আজকের আবিষ্কার ছিলো, 'ওস্তাদ সাইডে রাইদা, বাম্পারে আকাশ ভরা তারা; ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স; বোনাই স্যানিটারি; সাইয়্যাদুল আ'ইয়াদ, অনন্তকালব্যাপী মাহফিল।'
এবার আসি পোস্টের পাঞ্চ প্যারায়। গুলিস্তান মোড়ে রাস্তার পাশে হালিমের দোকান দেখে ইচ্ছে করলো একটু চেখে দেখি। কাছে গিয়ে তার পরিবেশ দেখে ভালোই লাগলো। পিচ্চিকে বললাম কত করে? উত্তর আসলো ২০, ৩০, ৫০। চেখে দেখবো যেহেতু তাই একটু কার্পণ্য করে বললাম ২০ টাকারই দাও। খাওয়া শেষে ঝাল মুখে বললাম পানি দাও। ছেলেটা একটা গামছা ঢাকা বালতির দিকে ইশারা দিয়ে বললো ওখান থেকে খান। কালচে পানির ভেতরে লাল মগ ডোবানো। এবার তো নাক সিটকানোর পালা। বললাম, এই বাংলা পানি ছাড়া আর নেই? উত্তর আসলো- ২০ টাকার হালিম খাইয়া বাংলা ইংলিশ খুঁজলে হইবো মামা?
বিশ্বাস করেন, আমি ওর দিকে ১০ সেকেন্ড স্থির তাকিয়ে ছিলাম। রাগ হচ্ছিলো তবে হাসি দিয়ে ফিরে এলাম। এত পাঁকনা পিচ্চি আমি জীবনেও দেখিনি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:২৪