somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে যে কথাগুলো না বললেই নয়....

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে ফতোয়া নিয়ে ফতোয়াবাজী বন্ধ হবার কোনো লক্ষণ দেখি না। উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়াবার পর নানা ঘটনা পরম্পরায় শেষ পর্যন্ত ফতোয়া বহালই রইল। তদ্যপি ইসলাম বিষয়ে অজ্ঞতা কিংবা বিদ্বেষবশত বেশ কিছু ইসলামী পরিভাষার মতো ফতোয়া শব্দকেও কলঙ্কিত করার ধারা বজায় রেখেছে কতিপয় মিডিয়া। ক’দিন পরপরই দেখা যায় গ্রাম্য শালিসকে ফতোয়াবাজী হিসেবে চালিয়ে ইসলামের এই পরিভাষাটির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়।
৩১/০১/২০১৩ ইং রোজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকের নারী পাতায় রহিমা আক্তার নামে এক লেখিকা ‘ফতোয়ার কালো অধ্যায় হিল্লা বিয়ে’ শীর্ষক একটি ফিচার লিখেন। লেখাটি শুধু আমাকে নয়, আমার মতো লাখ লাখ ইসলামপ্রেমী পাঠককে তীব্র ব্যথিত এবং প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে। বলাবাহুল্য একটি দায়িত্বশীল জাতীয় দৈনিকের কাছে এমন হঠকারী ও অবিবেচনাপ্রসূত লেখা একেবারেই অনভিপ্রেত।
লেখিকা রহিমা আক্তার ধর্ম সম্পর্কে শুধু অজ্ঞই নন, একজন ধর্মবিদ্বেষীও বটে। ফতোয়া কী, ফতোয়া কেন এবং কারা ফতোয়া দিতে পারবেন- এ সম্পর্কে ইসলামের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি না জেনে ফতোয়া শব্দ নিয়ে বিষোদ্গার অনভিপ্রেত। ফতোয়া বন্ধের দাবীও চরম হঠকারী বৈ কী। সমাজে যেসব লোক অনধিকার চর্চা করে ফতোয়া দেন তার জন্য তাদের নিন্দা হতে পারে না। ফতোয়া বন্ধের দাবী তোলা তো আরও হাস্যকর। হাতুড়ে ডাক্তারের অপরাধে সব ডাক্তারের চিকিৎসাসেবা বন্ধের দাবী চূড়ান্ত মূঢ়তা এবং কাণ্ডজ্ঞানহীনতা বটে।

বিকৃত হিল্লা বিয়ে নিয়ে শরীয়তের সমালোচনা!!

রহিমা আক্তার শুরুতেই লিখেছেন, ‘সভ্য পৃথিবীতে অসংখ্য সঙ্কটের মধ্যে ফতোয়া একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা বা ঘটনা। ফতোয়া হচ্ছে একটি লাইসেন্সবিহীন রাষ্ট্রবিরোধী অস্ত্র, যা ধর্মের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ লাইসেন্সবিহীন ধর্মাস্ত্র বর্তমানে নিঃসন্দেহে সভ্য মানবসমাজের জন্য বিপজ্জনক তো বটেই, তার সঙ্গে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজের জন্য এক ভয়ানক রূপরেখা। আর এ ফতোয়ার একটি কালো অধ্যায়ের নাম হলো হিল্লা বিয়ে।’
ইসলাম সম্পর্কে যারা ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন তারাও জানেন, নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় ইসলামই একমাত্র বাস্তবসম্মত গ্যারান্টি দিয়েছে। ইসলামই প্রথম নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে শান্তির সমাজ কায়েম করেছে। ইসলাম শুধু নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই শেষ করে নি, নারীর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে যার পর নাই গুরুত্ব দিয়েছে। যখন আরবে নারীদের অধিকার দূরের কথা, কন্যাসন্তানদের জীবিত কবর দেয়া হতো, তখন ইসলাম ধর্মই নারীদের পূর্ণ মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি তাদের অধিকার সংরক্ষণ করেছে।

হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে জানা যাক....

‘হিল্লা’ শব্দটি সঠিক নয়। আরবীতে শব্দটি হলো ‘হীলাহ্’; অর্থাৎ কৌশল, ফন্দি, ছল, চাতুরী ইত্যাদি। পরিভাষায় হিল্লা বলা হয় : ‘কোনো স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে; যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়। আর পূর্বস্বামী তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে’। অনেক অজ্ঞ, মূর্খ ও ইসলামবিদ্বেষী লোক এই হিল্লা বিয়েকে ইসলামের একটি বিধান বলে চালিয়ে দিতে চায়। অথচ ইসলামের সঙ্গে এর দূরতম সম্পর্কও নেই। শরীয়তে হিল্লা বিয়ে বলে কিছু নেই। বিশুদ্ধ মতানুসারে এ বিয়ে বাতিল ও অশুদ্ধ, এর ফলে নারী তিন তালাকদাতা স্বামীর জন্য হালাল হয় না। হিল্লাকারী এবং হিল্লাপ্রার্থী উভয়কে হাদীসে অভিশম্পাত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
«لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ»
‘হালালকারী ও যার জন্য হালাল করতে আগ্রহী, তাদের উভয়কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন।’ [আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৩৬১৯০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,
«لَا أُوتِيَ بِمُحَلِّلٍ وَلَا مُحَلَّلٍ لَهُ إِلَّا رَجَمْتُهُمَا»
‘আমার কাছে যে কোনো হালালকারী ও যার জন্য হালাল করতে আগ্রহীকেই আনা হোক না কেন, আমি তাদের প্রতি ‘রজম’ তথা প্রস্তর নিক্ষেপের শাস্তি প্রয়োগ করব।’ [আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৩৬১৯১; বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা : ১৪১৯১]
শায়খ ইবন তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, এর উদাহরণ হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে, তখন স্ত্রী তার ওপর হারাম হয়ে যায়, যাবৎ না স্ত্রী সে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিয়ে করে। আল্লাহ যেমন কুরআনে উল্লেখ করেছেন, যেরূপ এসেছে তাঁর নবীর সুন্নাহে এবং যার ওপর সকল উম্মতের ঐক্যমত। যখন কোনো ব্যক্তি এ নারীকে তালাক দেয়ার নিয়তে বিয়ে করে, যাতে সে তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, তখন এ বিয়ে হারাম ও বাতিল বলে পরিগণিত হয়। এভাবে বিয়ে করার পর তাকে রাখুক বা আলাদা করুক কিংবা আকদের সময় শর্ত করুক বা তার আগে শর্ত করুক অথবা শাব্দিক কোনো শর্ত ছাড়া উভয়ের মধ্যে শুধু প্রস্তাব আকারে থাকুক আর পুরুষ ও নারীর অবস্থা এবং মোহর থাকুক শর্তের ন্যায় বা এসব কিছুই না থাকুক; এমনকি নারী ও তার অভিভাবকের সম্পূর্ণ অজান্তে যদি পুরুষ ইচ্ছা করে যে তাকে বিয়ে করবে আর তালাক দেবে, যেন তিন তালাকদাতার জন্য সে হালাল হয়, তবে তিন তালাকদাতা জানুক বা না জানুক- সর্বাবস্থায় এ তালাক বাতিল হবে।
যদিও হিল্লাকারী এ ধারণা করে যে, এটা একটা ভালো কাজ এবং তাকে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিলে তাদের ওপর বিরাট অনুগ্রহ হবে; কারণ তালাকের কারণে তাদের নিজেদের, তাদের সন্তানের ও তাদের দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বিষহ হয়েছে ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিতে এ বিয়ের কোনো মূল্য নেই, এটা বিয়ে হিসেবে গণ্য হয় না, এ বিয়ের ফলে তিন তালাকদাতার তাকে বিয়ে করা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না কোনো ব্যক্তি তাকে চুক্তি, প্রতারণা ও লুকোচুরি ছাড়া আগ্রহসহ বিয়ে করে, সহবাসে লিপ্ত হয়ে একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করে। অতপর যখন তাদের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয় মৃত্যুর কারণে অথবা (কোনো প্রকার পূর্বচুক্তি কিংবা বুঝাপড়া ব্যতীত) তালাক বা খুলা‘ করার কারণে, তখনই শুধু প্রথম স্বামীর জন্য এ নারীকে বিয়ে করা বৈধ। আর যদি এ হিল্লাকারী তাকে তালাক না দিয়ে স্থায়ীভাবে রাখতে চায়, তাহলে নতুনভাবে আকদের মাধ্যমে বিয়ে করা জরুরী। কারণ পূর্বের আকদ ছিল (নিয়্যতের অশুদ্ধতার কারণে) বাতিল ও ফাসেদ। তা দিয়ে এ স্ত্রীর সঙ্গে অবস্থান করা বৈধ নয়। এটাই আল-কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য। এটাই সাহাবায়ে কিরাম, সকল তাবেঈ ও তৎপরবর্তী আলেমগণের অভিমত।
তাই হিল্লা বিয়ের সঙ্গে শরীয়তকে জড়িয়ে নির্বিচার সমালোচনা অবিবেচনাপ্রসূত। এদিকে শরীয়তে তালাক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বিকল্পহীন অবস্থায় উপনীত হলে সংসার মুলতবির একটি সুষ্ঠু পথ হিসেবে। তালাকের পূর্বাপর বিধান ও শরীয়তে করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় সমাজে যেভাবে তালাক দেয়া হয় তার অধিকাংশই আল্লাহর বিধানের সঙ্গে চরম বেয়াদবী ও ধৃষ্টতা প্রদর্শনের পর্যায়ে পড়ে। তাছাড়া শরীয়ত সব সময় তালাককে নিরুৎসাহিত করে।:)

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪৮
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×