বাংলাদেশের তাবত মানুষই ভন্ড, ভয়ংকর লোভি ও নিজেদের লোভ সংবরণের জন্য এরা কিই না করতে পারে।
আজকের বিষয়, সমাজতন্ত্রবাদিদের হিপোক্রেসি।
২০০৯ সালের শেষদিককার কথা। তখন আমার মনে আছে, তেল গ্যাস নিয়ে আন্দোলনে আত্মহারা হইলেন, আমাদের জাতীয় তেল গ্যাস রক্ষা কমিটি। তাদের কল্যাণে এই সরকারের আমলে প্রথম সারাদেশজুড়ে আধাবেলা হরতাল পালিত হয়েছিল। সেদিন, হরতালের চিত্র খুব একটা ভয়াবহ ছিল না। তবে, ঘটনার পরেরদিন তাহারা মুক্তাঙ্গন থেকে একখানা মিছিল বাহির করলেন। এই মিছিল ছিল বিশালাকার!
আমি যানজটে পড়ে বাসায় যাওয়ার প্রহর গুনছিলাম। এমনি সময় মেজাজটা কার না খারাপ লাগে। সবাই জানেন, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব নেন আমাদের তথাকথিত সমাজতন্ত্রবাদীরা। যারা নিজেদেরকে একেকজন চে'গুয়েভেরা ভেবে থাকেন।
তা সেদিনই, আমি আমার এক সমাজতন্ত্রী বন্ধুকে বলছিলাম, কি দরকার রাস্তার মানুষকে কষ্ট দেবার? কথা সংসদে বলতে পারেন না? তার উত্তর ছিল, সংসদে কারও কথা কেউ শুনে না। কথা আমাদের দেশের কন্টেক্সে সত্য। বিরোধীদলের কথা সরকারী দল শোনে না। তখন আমি বললাম, আপনাদের নেতারাই তো এবার এমপি, মানে সরকারী দল, তাহলে আপনারাই কথা বলতে পারছেন না?
তিনি উত্তরে, বললেন, আজকে যে মানুষ কষ্ট সহ্য করছে, এইটুকু কষ্ট তাদের সহ্য করতে হবে জাতির বৃহৎ স্বার্থে। তা না হলে আমাদের সমস্ত জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হস্তগত হবে। বললাম, বেশ কথা বলেছেন, বিদেশিরা তো সর্বদাই আমাদের নিয়ে চক্রান্তে ব্যাস্ত, আমরা তো ধোয়া তুলসি পাতা, সে যাকগে, আগে বলেন, আপনারা তো গলা ফাটাচ্ছেন, কিন্তু সরকারকে কোন পথ বাতলাচ্ছেন না। বিদেশি কোম্পানির সাহায্য ছাড়া সমুদ্রবক্ষ থেকে কেমন করে তেল গ্যাস উত্তোলন করা হবে? পথটা বলেন না কেন?
তিনি বললেন, আমাদের বুয়েট আছে না? আমাদের প্রকৌশলীদের সাহায্য যদি সরকার করে, তাহলে কি বিদেশিদের লাগে?
উদ্ভট কথা, যে দেশের প্রকৌশলিরা একটা ব্রীজ বানাতে পারে না, যে দেশের প্রকৌশলিরা একটা ফ্লাইওভার বানাতে পারে না, তারা কি করে সমুদ্রবক্ষ থেকে তেল বেড় করবে?
উত্তর আরও সুন্দর, আপনারা এসব বুঝবেন না, আপনারা হলেন সরকারের চামচা, আপনারা জানেন না কিছু বোঝেনও না।
আমি বললাম, বেশ, আমরা সরকারের চামচা, ঠিকাছে মেনে নিলাম, তা কন তো, রাশেদ খান মেনন (ওয়ার্কারস পার্টি) হাসানুল হক ইনু (জাসদ) ইহারা নৌকায় পা দিয়ে ক্ষমতায় গেলেন কেন? ইহাদের যদিই এতই বুকের পাটা, তা খাড়াইতো সমাজতন্ত্রের লাঠি লইয়া?
এবার উনি চুপ। কথা না বলে থেমে থাকলেন কিছুক্ষণ,
পাঠক, আর বেশিদূর যেতে হবে না, তাদের আন্দোলন সহসাই থেমে গেল। তাহারা কিসের লোভে যেন আর উচ্চবাচ্য করে না। কদাচিৎ দুই একটা অনুষ্ঠানে তাহাদের (আনু মোহাম্মদ এন্ড গং) এর দেখা যাইতে লাগল। আর আমি আস্তিক গালি খাইতে লাগলাম।
তা গালি খাইতে আমার বিশেষ কোন অসুবিধা নাই। সত্য বলে গালি খাইতে আমার তিলমাত্র কষ্ট হয় না। এবার একটা কথা বলি,
এই যে গার্মেন্টস মালিকেরা তাদের শ্রমিকদের দুই পয়সা করে বেতন দেন, সেই বেতন আবার মাসের পর মাস বকেয়া রাখেন, এই শ্রমিকদের পক্ষে এই সমাজতান্ত্রিকেরা একটিও কথা বললেন না? একটিবারও উচ্চবাচ্য করলেন না? মনে হয়, সেই যে উৎকোচ দিয়া সরকার তাদের ফালাফালি বন্ধ করেছিল, তাহা এখনও শেষ হয় নাই?
তা বাপু, দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই কর যে চিল্লাও, তা মজদুর কারা? আনু মোহাম্মদেরা?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



