সক্কাল বেলায় উঠে মহা আনন্দে মোতাহার সাহেব মর্নিং ওয়াকে বের হলেন। তার মনে খুব আনন্দ আজ। আর হবেই বা না কেন, গতকাল রাতে রুদ্র, আনিস, অনিন্দ আর সৌরভকে থানায় ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। ভাবতেই আবার আনন্দে গদ গদ হয়ে উঠলেন মোতাহার। ভ্রু নাচিয়ে, মর্নিং ওয়াক থেকে ফেরার পথে চায়ের দোকানের সামনে এসে, দোকানদার ইস্কান্দারকে জিজ্ঞেস করলেন, "কি ইস্কান্দার? কেমন আছো?"
ইস্কান্দারের মন খুব উদাস। রুদ্র, আনিস, অনিন্দ আর সৌরভ তার রেগুলার কাস্টমার। তাছাড়া তারাই তো তাকে কত কি শিখিয়েছে। কাল রাতে ওদের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। ইস্কান্দার ভাবছে ওদের ক্রস ফায়ারেই দেয় নাকি!
মোতাহার সাহেব খুব ভালো করেই ইস্কান্দারের দুঃখটা জানতেন। তিনি কাঁটা ঘায়ে নূনের ছিটা দিতে ওস্তাদ কিনা। বললেন, "ভালো হইছে বদমাসগুলোকে পুলিশে ধরেছে, যত্তসব গুন্ডা মাস্তান, ছি ছি ছি...ভালো করে লাঠির বারি টা যখন পড়বে না...তখন বুঝবে শালার গুন্ডামি"।
ইস্কান্দার মনমরা হয়েই বলল, চা খাবেন?
মোতাহার বসলেন। বললেন, আরে এত খুশির সংবাদে চা খাবো না? জম্পেশ করে একটা চা বানাও তো ইস্কান্দার!
সাত সকালে ইস্কান্দার চা বানাতে বসে। তার চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে মোতাহার বলেই চলছেন, বুঝলে? তুমি যে ওদের সাথে তাল দাও ইস্কান্দার, ওরা তো তোমাকেও মেরে ফেলতে পারে, পুলিশে ধরাতে পারে, আরে মাস্তানদের কোন জাত ধম্ম আছে নাকি? এরা সব এক জাতের, দাগি...
ইস্কান্দারের মুখে হঠাৎ হাসি ফুটলো। হাসির কারণটা মোতাহার সাহেবের পেছনে রুদ্র, আনিস এসে দাড়িয়েছে। তারা মোতাহারের সব কথা শুনতেও পাচ্ছে।
মোতাহার তো সরল ভাষায় বলেই চলেছেন। ইস্কান্দারের হাসির হেতু তিনি জানেন না। তবু তার হাসি দেখে তার গা জ্বালা করছে। ইস্কান্দার চায়ের কাপটা দিতেই, রুদ্র মোতাহারের পাশে বসলেন। মোতাহার যখন টের পেলেন, তার পাশে আর কেউ নয় স্বয়ং রুদ্র আর আনিস তিনি একেবারে পাংশুটে হয়ে গেলেন। ইস্কান্দারের আনন্দ যেন সব ছাড়িয়ে গেল। রুদ্র ভাই? বসেন বসেন চা খান, নাস্তা করবেন?
রুদ্র বলল, না থাক ইস্কান্দার, শুধু চা দাও। বলে তিনি মোতাহার সাহেবের দিকে তাকালেন, মোতাহার তখন মৃদু কাপছেন। রুদ্র বলল, তো? কেমন আছেন মোতাহার সাহেব? কেমন চলছে দিনকাল?
-এইতো ভালো বাবা! তোমরা কেমন আছো?
রুদ্র তার ঈষৎ লম্বা চুল হাতড়ে বলল, এইতো বেশ আছি, কাল রাতে পুলিশ শালারা হুদাই ধরে নিয়ে গেল।
-পুলিশের কাজই ভালো লোককে হেনস্তা করা।
কথাগুলো কোনরকমে বললেন মোতাহার। রুদ্র মোতাহারের কথার উত্তরে বলল, তাই নাকি?
-হু!
-তো মোতাহার সাহেব, আপনি কি নিয়ে কথা বলছিলেন যেন?
মোতাহার গলা খাকারি দেন। একটু চা খান। ইস্কান্দার মিটিমিটি হাসে তার অবস্থা দেখে। তারপর বলেন, কিছু নিয়ে না বাবা, তোমাদের জন্য চিন্তা হচ্ছিলো।
রুদ্র একটু হেসে বলল, তাই না? আহারে আংকেল আমাদেরকে নিয়ে কত ভাবেন? ঐ ইস্কান্দার, আংকেলের কাছ থেকে বিল রাখিস না আজ, আমি দিয়ে দিমু।
ইস্কান্দার চুপ মেরে থাকে। আনিস বলে, তা আংকেল আপনার কথাগুলো আমরাও একটু শুনি।
মোতাহারের মনটা মুষড়ে গেল ভয়ে। এই দুই গুন্ডা এখন তার কি করবে তাই সে ভাবছিল। তাই আনিসের কথা তার কানেই গেল না।
রুদ্র মোতাহারের পাশে একটু সরে এসে বলল, আমার হাতটা দেখুন তো? বলে রুদ্র তার লম্বা লোহার রডের মত হাতখানা তার দিকে বাড়িয়ে দিল।
মোতাহার একদৃষ্টিতে রুদ্রের হাত দেখছেন, তার চোখের পলক পড়ছে না। রুদ্র বলল, বলুন তো আংকেল কি দেখা যায়?
মোতাহার সাহেব গলা আবার খাকাড়ি দিলেন। বললেন, কি যেন দেখা যায়...
রুদ্র এবার বলল, দাগ দেখেন দাগ, হাতকরার দাগ, আমার হাত দেখে আর কি করবেন, খালি খালি ভয় বাড়বে।
ইস্কান্দার চা দিল আনিস আর রুদ্রকে। মোতাহার চা খানা কোনরকমে খাচ্ছিলেন। বললেন, বাবারা আমার একটু কাজ আছে, যেতে হবে যে...
রুদ্র বলল, আরে বসেন বসেন আংকেল এত তাড়াতাড়ি কই যাইবেন? বলে সে সরাসরি মোতাহারের চোখে তাকাল। মোতাহার এবার কাপতে শুরু করল। তার চায়ের কাপটায় যেন মৃদু ভূকম্পন হচ্ছে। রুদ্র একটা হাসি এনে বলল, আংকেল আপনি এত ভালো মানুষ, সবাই আপনাকে এত মান্য করে, একশত পঞ্চাশ রাকাত করে নামাজ পড়েন, তা গীবতের স্বভাবটা কেন আংকেল?
মোতাহার তিরস্কারটা ভালো বুঝতে পারে। সে কি বলবে ভেবে পায় না। তবে, একটা কথা মুখ দিয়ে বের হলো, একশত পঞ্চাশ রাকাত?
-মানে মাসে একশত পঞ্চাশ রাকাত আরকি, এই বলে রুদ্র হাতটা মুঠি করে।
-বাবা তোমরা কিছু মনে কর না, আসলে আমি পুরানো দিনের মানুষ, বয়স হয়েছে, কি বলতে কি বলি...
রুদ্র স্বাভাবিক সুরে বলল, বুঝি বুঝি, বয়সের ভারে কখন যে কি বলেন? আরে আংকেল, আপনার তো দেখি মাথা দিয়ে ঘাম পড়ছে! ব্লাড প্রেসারটা কি বেড়ে গেল নাকি?
আনিস বলল, আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে হার্ট এটাকও হয়ে যাবে।
রুদ্র আনিসের কথায় একবার আনিসের দিকে তাকাল, তারপর আবার মোতাহারের দিকে ফিরল। কি আংকেল? আপনার তো বাসায় যেতেই হবে দেখছি।
-যাই?
-যান।
মোতাহার চা শেষ না করেই উঠে পড়ে। বেঞ্চি ডিঙ্গিয়ে বাসার পথ ধরতেই রুদ্র বলল, আংকেল ভয় পায়েন না। আমরা ভালো মানুষ। আপনারে কিচ্ছু করব না। ইউ আর ফ্রি টু গো!
মোতাহার সালাম দিয়ে কোনরকম বাসার দিকে হাটা দেয়। আনিস হেসে বলে, বেচারা বুড়োকে এতটা ভয় না দিলেও চলত। রুদ্র বলে, বেচারা বুড়োর মুখটা বড় বিশৃংখল।
ইস্কান্দার বলল, কাইল কি হইছিল? আর সৌরভ আর আনিন্দ ভাই কোথায়?
আনিস এ কথার উত্তরে বলল, কিছু না রে, রুটিন ইনভেস্টিগেশন আর কি। ওরা বাসায়। আমাদেরকে নিয়ে পুলিশ এক্সপেরিমেন্ট করে তা তো তুই জানোসই।
রুদ্র গম্ভীর হয়। আনিসকে বলে, চলো বাড়ি যাওয়া যাক। সারা রাত জেগে ছিলাম। এখন ঘুমানো দরকার।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



