somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্বুস্থতার দিন

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে অস্বুস্থ হলে বড্ড ঝামেলা। কেউ নেই দেখার। তাছাড়া কোন কিছু তোমার জন্যে বসে থাকবে না, মাঝ থেকে তুমি পিছিয়ে পড়বে। কিন্তু সেটা বুঝে তো আর অস্বুস্থতা তোমাকে ছাড় দেবে না। আমাকেও দেয় না। আমার প্রায়শই মাইগ্রেনের ব্যাথা হয়। মাঝে সাঝে সে ব্যাথা এত ভয়ংকর হয় যে জীবন যাপন অসহ্য হয়ে দাঁড়ায়। সেসব দিনে যাদুকরী ইমিট্রেক্স তার যাদু হারিয়ে ফেলে। আমার বমি পায়। আমি জোরে জোরে শ্বাস নেই বমি বন্ধের উদ্দেশ্যে। তেমন একটি দিন ছিল গতকাল আর আজ।

গতকাল আমি ক্লাসে গেলাম মাথা ব্যাথা নিয়ে। কি ব্যাথা! অষুধ খেলাম। কমল, তবে গেল না পুরোপুরি। এর মানে হল ব্যাথা আবার বাড়বে। জোর করে একটু সয় মিল্ক দিয়ে ওট মিল খেলাম। না খেলে আরও কষ্ট হবে তাই খাওয়া। তিন ঘন্টার ক্লাসে আমি অন্তত একবার স্ন্যাকস খাই। সেটাও ইচ্ছে হল না। পেশেন্টের এসেসমেন্টের সময় আমি দু একবার এলোমেলো উত্তর দিলাম। আমার প্রফেসর একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমার কি হয়েছে। আমি এড়িয়ে গেলাম। দুপুরে যেহেতু কাজে যেতে হবে, আমি তাই জোর করে লাঞ্চ করলাম। জীবনে কত্ত সময় কত্ত দিন বা রাত না খেয়ে থেকেছি কারনে অকারনে। কিন্তু আজকাল দীর্ঘক্ষন না খেয়ে থাকতে ভয় হয়। এসিডিটি হবে, মাথা ব্যাথা আরও বাড়বে ইত্যাদী। খেলাম স্যামন দিয়ে হোল হূইট বান। এই খাবারটি খাওয়া আমি নতুন শুরু করেছি। আমার যেহেতু মাছ পছন্দ তাই কোন অসুবিধে হয় না। এতে ক্যালোরীও খুব কম। একটি বান ১০০ ক্যালোরী আর স্যামন এক প্যাক ৮০ ক্যালোরী। যাহোক খেয়ে দেয়ে কাজে গেলাম।

কাজ তো করি জেলখানায়। কাজ মানে ইন্টার্নশিপ। তো সেখানে আমার ইউনিটের নাম হল কাচিনা। এরা উচ্চারন কিরে খাছিনা। হি হি হি। এতদিন ভাবতাম এটার মানে হল কিচেন এবং শব্দটি ভাবতাম স্প্যানিশ। একটু আগে এনকার্টাতে দেখলাম কাচিনা নেটিভ আমেরিকান স্পিরিট/এনসেসটরস অব হিউম্যান বিয়িংস। হুম। যাহোক তো আমার ইউনিটটি মেইন এন্ট্রেন্স থেকে অনেক ভেতরে। হেটে যেতে ৮ মিনিট মত লাগে। গতকাল যদিও ৭৪ ডিগ্রী তাপমাত্রা ছিল কিন্তু খরখরে রোদ ছিল। মাথা ব্যাথা হলে রোদটাকে খরখরে লাগে, সেটাও হতে পারে। তো সেই রোদে হেটে হেটে ইউনিটে গেলাম। সেখানে আমার পি এস এ আমাকে বললেন এত্তগুলো পেপার গ্লোবাল স্ক্যান করে তাকে ইমেইল করতে। তার পেপার ওয়ার্ক করা আমার কাজ নয়। তবে ইন্টার্ন হলে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়, এটা তার মাঝে একটি। স্ক্যান করার জন্য অ্যাডমিনে গেলাম। সেটা মেইন এন্ট্রেন্সের কাছাকাছি। অর্থাৎ আবার ৮ মিনিট খরখরে রোদে হেঁটে যাওয়া। সেখানে যেয়ে ঠিক বুঝতে পারলাম না কি করে গ্লোবাল স্ক্যানিং করতে হয়। অন্য একটি ইউনিটের কেস ম্যনেজার ছিলেন সেখানে। এই ইউনিটের কিছু পেশেন্ট আমি দেখি বলে এই কেস ম্যানেজার আমাকে চেনেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি জানেন কিনা কিভাবে গ্লোবাল স্ক্যানিং করতে হয়। এই ভদ্রলোক অন্য কোন দেশের। হয়ত রোমানিয়ান। কথায় ভারী একসেন্ট। খুবই হেল্পফুল। তিনি দেখিয়ে দিলেন। তো আমি স্ক্যান করলাম আর করলাম আর করলাম। তখন আরেক ভদ্রলোক এলেন সেই রুমে। তিনিও কিছু কপি করবেন। জিজ্ঞেস করলেন কেমন লাগছে স্ক্যানিং করতে। আমি জানালাম যে কাজে বুদ্ধির প্রয়োগ নেই সে কাজ আমার ভাল লাগে না। তিনি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে কথাটি প্রসেস করলেন নিজের মনে। তারপর বললেন, চমৎকার কথা। আমি এটা মনে রাখব। যাহোক আমার কাজ শেষ হলে আবার ৮ মিনিট হেটে নিজের ইউনিটে গেলাম।

এতবার খরখরে রোদে হেটে আমার মাথা ব্যাথা বেড়ে গেল। আমার গ্রুপ কাউন্সিলিং দেবার কথা, ইনডিভিজুয়াল কাউন্সিলিং দেবার কথা। সমস্ত মাথায় উঠল। আমি ছুটি নিয়ে বাসায় চলে এলাম। ছুটি পাওয়া দুরুহ না। কিন্তু আমার যে প্রথম ইন্টার্নশিপে ১০০০ ঘন্টা পুরো করার কথা সেটা থেকে সময় কাটা গেল। আমাকেই পুরো করতে হবে। ওই যে বললাম অস্বুস্থ হলে বড্ড ঝামেলা, এটা হল তার নমুনা। পৃথবী এগিয়ে যাবে। আমাকে কষ্ট করে আবার আমার না করা কাজগুলো করতে হবে। বাসায় ফিরে ছুটি নেই। মেয়ের আমার অনার্সের ফাই থেটা কাপার মেম্বার হিসেবে ইন্ডাকশন হবে, সেখানে যাও। না গেলে মেয়ের মনে অনেক কষ্ট থাকবে। অতএব ইয়াকি ফিলিংস নিয়ে গেলাম। না, ওর জন্য ইয়াকি নয়, নিজের মাথা ব্যাথার জন্য।

আজ সকাল থেকে একইভাবে মাথা ব্যাথ। আজ একটি ফ্যামিলি ইন্টারভেনশন ট্রেনিং ছিল। আমি ফ্যামিলি থেরাপী ক্লাস করেছি, আমার কাছে এই ট্রেনিং তাই তেমন গুরুত্বপুর্ন মনে হল না। তবু পার্টিসিপেট করতেই হল। আমি ইমিটেক্স খেয়ে বসে রইলাম। লেকচারগুলো মনে হচ্ছিল মাথার মাঝে বজ্রপাত। সময় যেন কাছিমের চেয়েও ধীর গতিতে যাচ্ছিল। ইমিট্রেক্সে কাজ হল না। একসময় বাধ্য হয়ে দুটি মাইডল খেলাম। তখনই জানলাম আজকের ট্রেনিং এখানেই শেষ। আহ শান্তী। আমি একহাতে মাথা টিপে ড্রাইভ করলাম সাবধানে। বাসায় আসতে আসতে ব্যাথা কমে গেল। চলে গেল না, কমে গেল। সেটা নিয়েই স্টুডেন্ট লোনের এপ্লিকেশন পুরো করলাম। একসময় ব্যাথা পুরোপুরি চলে গেল। মেঘ কেটে গেল যেমন ভাল লাগে তেমন ভাল লাগল। ইচ্ছে হল ব্লগে লিখি। তাই লিখে ফেললাম।
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×