আমি যেখানে ইন্টার্নশিপ করি সেখানে এই নিয়ে দুবার ছাটাই হয়েছে। কেন? বাজেট সংক্রান্ত সমস্যা। এটি একটি জুভেনাইল কারেকশন সেন্টার। ১২ থেকে ১৮ পর্যন্ত ছেলে মেয়েরা যখন ডেলিঙ্কুয়েন্সি করে ধরা পড়ে অনেকবার, তাদেরকে এক পর্যায়ে এখানে পাঠান হয়। আমরা তাদের মেন্টাল হেলথ ক্লাসিফিকেশন করি, অপটিমাম ইন্টারভেনশন সাজেস্ট করি এবং অ্যাপ্লাই করি। সোজা ভাষায় রোগ নির্নয় করে চিকিৎসা করা। আমার ইউনিটে পেশেন্টের সংখ্যা বাড়ছেই। কারন এরা অনেকগুলো ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে, অনেক ছাটাই হয়েছে। কিন্তু এবার প্রপোজ করা হয়েছে পুরো জুভেনাইল সিস্টেম তুলে দেবার জন্যে। কি যে স্ট্রেস সবার মাঝে। সেটা কর্মচারীদের থেকে শুরু করে সবার মাঝে ছড়িয়ে গেছে। পারসনালি আমাকে বা কোন ইন্টার্নদের সরাসরি এফেক্ট না করলেও বাকিদের স্ট্রেস আমাদের ছুয়ে যায়। আমাদের ইন্টার্নশিপ যাবার সম্ভাবনা নেই। এমনকি সেন্টার উঠে গেলেও আমাদের অন্য কোথাও ইন্টার্নশিপ দেয়া হবে। কিন্তু এসবের উর্দ্ধে আমাদের সবার মাঝে যে মানবতা আছে সেটা আহত হয় অন্যদের কষ্টে। অনিশ্চয়তা মানুষকে খুব স্ট্রেস দেয় এবং সেটা শুধু মানসিক নয়, শারীরিক সমস্যার রুপ নেয় বেশিরভাগ সময়। কি করা যায়?
আমি সুযোগ পেলেই কেস ম্যানেজার মহিলাটিকে বিভিন্ন অপটিমিস্টিক কথা বলি। সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার আগ্রহ জাগাই। আমি বলি যে আমরা প্রত্যেকে এই পৃথিবীর বিরাট পাজলের একটি পিস। নেচার সারাক্ষন প্রচেষ্টা চালায় প্রতি পিস-কে যথাযথ জায়গায় ফিট করতে। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আসে দুঃখ, কষ্ট, সুখ, অনিশ্চয়তা ইত্যাদী। এগুলোর কারনে তুমি তাড়িত হবে বা মটিভেটেভ হবে তোমার যথাযথ জায়গায় পৌছাতে। মানে হল, পৃথিবী শুধু তোমাকে নিয়ে নয়, বা তোমার জন্যে নয়। পৃথিবীর বড় চিত্রটির যে জায়গায় তোমাকে মানায়, পৃথিবী তোমাকে সেখানেই পৌছাবার চেষ্টা করে যাবে। মুশকিল হল, এই অপটিমিজম দীর্ঘ সময়ের জন্যে কাজ করে না যদি না তুমি সিস্টেমেটিক্যালি এটা এপ্লাই কর। আমার পেশেন্টের বেলায় আমি সিস্টেমেটিকভাবে এপ্লাই করতে পারি। কিন্তু সহকর্মীদের সাথে তা করা যায় না। তারা কিছুক্ষনের জন্যে বা দু একদিনের জন্যে বেশ সজীব থাকে কিন্তু তারপর তাদের অনিশ্চয়তাজনিত দুশ্চিন্তার চিহ্ন চোখে মুখে স্পষ্টতই দেখা যায়। আমার কষ্ট হয়।
মাসলোর হায়ার্কি অব নিড জান তো? সেখানে বেসিক হচ্ছে খাওয়া, থাকা, পড়া। আর এখানে সেটার জন্যে দরকার চাকরী। সেই চাকরী নেই মানে তোমার বেসিক নিয়ে টানাটানি। কতক্ষন তুমি সেটার মোকাবেলা করবে? আমার কেস ম্যানেজার, তার স্বামী এবং মেয়ে সবাই এই সেন্টারে কাজ করে। এই সেন্টার বন্ধ হওয়া মানে তাদের তিনজনের চাকরী যাবে। দুটি ফ্যামিলী পথে বসবে। এমন হাজার হাজার ফ্যামিলী পথে বসছে। কেউ কেউ বেচেঁ থাকার তাগিদে অসৎ পথে পা বাড়াচ্ছে, কেউ সুইসাইড করছে। এই অবস্থা হল কি করে? ক্লিন্টনের আমলে তো এখানকার বাজেট সারপ্লাস ছিল। বুশ সরকার নিজেদের পকেট ভারি করার জন্যে পুরো দেশটাকে ধ্বংস করে দিল। সেটার এফেক্ট পুরো পৃথিবী জুড়ে। কিছু মানুষের জন্যে পুরো পৃথিবী সাফার করে। সেই কিছু মানুষ নিজেদের ভবিষ্যত বাড়াবাড়ি রকমের নিশ্চিত করার জন্যে বাকিদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে দেয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



