কলেজের প্রধান ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বি. কে. পনোয়ার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত৻ সামরিক প্রশিক্ষক হিসাবে কাটিয়েছেন অনেকটা সময়৻ আলাপ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে নিজের সম্পর্কে এমন একটা তথ্য দিলেন যা চমকে দেওয়ার মতো৻
“বহু বছর আগে শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদেরও (এলটিটিই) আমি প্রশিক্ষণ দিয়েছি৻ সে সময়ে ভারতের সেনাবাহিনী তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতো৻” কথাটা বলে নিজেকে খানিকটা সামলে নিলেন ব্রিগেডিয়ার পনোয়ার৻ “বিষয়টি নিয়ে প্রচার চাই না, ” বললেন তিনি৻
ব্রিগেডিয়ার পনোয়ারের মন্তব্য মনে পড়িয়ে দিলো আর একটি মন্তব্যের কথা৻ অগাস্টের গোড়ায় দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের অরণ্য অঞ্চলে প্রবেশের কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিলো মাওবাদীদের শীর্ষ নীতি নির্ধারক কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের৻
শ্রীকান্ত নামের ওই মাওবাদী নেতা আমায় বলেছিলেন, ৮০‘র দশকের শেষাশেষি উত্তরাখণ্ডের চাকরাথা এলাকায় এলটিটিই-র একটি দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী৻ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিলো অন্ধ্রপ্রদেশের অরণ্য অঞ্চলেও৻ বর্তমানে যাদের বলা হচ্ছে মাওবাদী, সে সময়ে তাঁদের একটি অংশ পিপলস ওয়ার গ্রুপ (পিডব্ল্যুজি) বলে একটি সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলো৻ পিডব্ল্যুজি-র কিছু সদস্য সে সময়ে যুক্ত ছিলেন এলটিটিই-র সঙ্গে৻
“যদিও এর কিছুদিন পরে আমরা এলটিটিই ছেড়ে বেরিয়ে আসি, কিন্তু এটা অস্বীকার করা যাবে না যে একেবারে গোড়ার দিকে আমাদের ট্রেনিং দিয়েছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী,” বলেছিলেন শ্রীকান্ত৻
আজকের মাওবাদীদের প্রাথমিক ট্রেনিংটা অতএব হয়েছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে৻
শক্তির ফারাক
প্রথমত, এরা রাষ্ট্রের ফৌজ৻ ফলে এদের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি৻ শুভাশিষ দাস নামে একটি আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য বললে, ৪৫ দিনের ট্রেনিং-এ তাঁরা পান ২৫০টি গুলি, অনুশীলন করার জন্যে৻ অন্যদিকে, মাওবাদীরা কোনও গুলিই পান না, অনুশীলনের জন্যে৻ তেমনটাই তাঁরা আমায় বলেছিলেন৻
তবে মাওবাদীদের সুবিধা হলো গ্রামের মানুষ এবং জন-মিলিশিয়ারা গেরিলাদের ঘিরে রাখেন এবং ফৌজের মুভমেন্টের খবর তাঁরা দ্রুত পৌছে দেন৻ রাষ্ট্রীয় ফৌজকে এই খবরের জন্যে পেশাদার ইনফর্মারের সাহায্য নিতে হয়৻ কিন্তু সেই ইনফর্মার ভুল করলে অবস্থা কি হয় তা শোনা যাক ছত্তিশগড়ের নকশাল অধ্যুষিত নারায়ণগড় জেলার আধা-সামরিক বাহিনীর সাব-ইন্সপেক্টর মহম্মদ কলিমউল্লার কাছে৻
“নারায়ণপুরে গত ২৯শে জুন যে হামলায় ২৭ জন মারা যায় সেটা হয়েছিলো দুটো কারণে৻ এক, একজন স্পেশাল পুলিশ অফিসার, যার বাড়ি ওই অঞ্চলে, সে এসে আমাদের খবর দেয় যে আশঙ্কার কোনও কারণ নেই৻ আমরা এগোতে থাকি ও মাওবাদীদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি৻ আর দ্বিতীয়ত, গ্রামের মানুষ প্রায় কখনই মাওবাদীদের সম্পর্কে আমাদের কোনও খবর দেয় না৻ অথচ আমাদের গতিবিধির যাবতীয় খবর মাওবাদীদের দিয়ে দেয়৻ আমাদের বিপদে পড়ার এটাও একটা বড় কারণ৻”
বিবিসি
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




