প্রকৃত দেশপ্রেম না থাকার কারণেই বাংলাদেশে বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব বিস্তার লাভ করছে এবং রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মাঝে দেশপ্রেমের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা যায় বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিদগণ। আর এ জন্যই গত শুক্রবার বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান বাংলাদেশে ভারতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সেই অনুষ্ঠানে মেয়েরা অশালীন পোশাক পরে নৃত্য প্রদর্শন করতে পেরেছিলেন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন রেডিও তেহরানকে বলেছেন, শাহরুখ খান এদেশে এসে অনুষ্ঠান করেছেন এবং সে অনুষ্ঠানে ভারতীয় সংস্কৃতির রীতিনীতির প্রভাব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এতে শাহরুখ খানের কোন ভুল ছিল না। তিনি বলেন, ওপেন কনসার্টে কি কি অনুষ্ঠান করা হবে তা আগেই নির্ধারণ করা হয়। আর যারা পারফর্ম করবেন তাদের পোশাকও আগেই নির্ধারণ করা হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এসব কিছু জানার পরেও কর্তৃপক্ষ কিভাবে তা অনুমোদন দিল? তাছাড়া সে অনুষ্ঠানে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী,এমপিও উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইলিয়াস কাঞ্চন আরো বলেন, সেদিন খুব বেশী দূরে নয় যেদিন, এদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শন করা হবে। তিনি বলেন, আজকাল বাচ্চাদের হিন্দি ভাষা শেখানো হয়। ঘরে ঘরে হিন্দি সিরিয়াল দেখার জন্য হিড়িক পড়ে যায়। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বাংলা গানের পরিবর্তে হিন্দি গান ও নাচ প্রদর্শন করা হয়। আর এগুলোকে উৎসাহিতও করা হয়। তিনি বলেন, যাদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ দেশপ্রেম শিখবে, সেই রাজনৈতিক নেতাদের মাঝেই আজ দেশপ্রেমের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গড়বো বাংলাদেশের আহবায়ক ড.শাহেদা বলেন, বিজয়ের মাসে বিদেশীদের এদেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কখনোই মেনে নেয়া যায় না।মহান মুক্তিযোদ্ধারা সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছেন।তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে হলেও এই মাসে এরকম অনুষ্ঠান করা উচিত হয়নি। তিনি এটিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী কাজ বলে মনে করেন। ড. শাহেদা আরো বলেন, যেদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দিনে দুই বেলা খেতে পারে না, সেই দেশের কিছু নাগরিক কিভাবে শাহরুখ খানের সাথে ছবি তোলার জন্য তিন লাখ টাকা খরচ করে ? আর হাজার হাজার দর্শক সেই অনুষ্ঠান দেখার জন্য পঁচিশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ করে টিকিট কেনে। তিনি নৃত্য শিল্পীদের পোশাকের সমালোচনা করে বলেন, দেশে যুবকদের মাঝে মাদকাশক্তি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় এ ধরণের নৃত্য তাদের আরো বেশী উৎসাহিত করবে। তিনি দুঃখ করে বলেন, অথচ সরকার এবং বিরোধী দলের মন্ত্রী এমপিরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তা উপভোগ করেছেন।
ড. শাহেদা বলেন, আমাদের দেশে অনেক গুনিশিল্পী জীবনের শেষ সময়ে এসে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।এখনো অনেক শিল্পী অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বিদেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে টাকা খরচ না করে তাদের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে তিনি দেশবাসীর কাছে আহবান জানান। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি এধরণের আর কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তাহলে সচেতন নাগরিক সমাজের উচিত হবে তা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা।
গতকাল বুধবার সিলেটের পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নভুক্ত এলাকা পাদুয়া বিএসএফের দখল করা এবং সৈন্য জমায়েতের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে।এ ধরনের ঘটনার জন্য সরকারের কুটনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে বিডিআরের সাবেক ডিজি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান রেডিও তেহরানকে বলেছেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর পাদুয়া দখল করা এবং সীমান্তে সৈন্য বৃদ্ধি করা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ ধরনের ঘটনা ভারতীয় আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন বিডিআরের সাবেক এই ডিজি। তিনি বলেন, বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের যৌথ জরিপ কাজকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে । তবে সরকারের উচিত বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে তা মোকাবেলা করা। নইলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পুরোপুরিই ভারতের কাছে বিকিয়ে দিতে আর বেশি কিছু বাকী থাকবে না। তিনি বলেন, পাদুয়া, রৌমারী, ডিবির হাওর বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোন ভাবেই এসব এলাকা হাতছাড়া করা যাবে না। আর এজন্য বিডিআর ও স্থানীয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও প্রতিরোধের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। নইলে এ ভুলের জন্য বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে এ জাতিকে, এমন আশংকা নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিডিআরের সাবেক ডিজি আ ল ম ফজলুর রহমানের। তিনি ভারতকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, আর যা কিছু সম্ভব হলেও বাংলাদেশকে কোন ভাবেই সিকিম বানানো যাবে না। এ প্রসঙ্গে সিলেটের স্থানীয় সাংবাদিক কাদের তফাদার রেডিও তেহরানকে বলেছেন, ১৯৭১ সালের পরে থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা অযুহাতে ভারত বাংলাদেশের সিলেট সীমান্ত এলাকায় হামলা, সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি ও দখলের অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু স্থানীয় জনগণ ও বিডিআরের প্রতিরোধের মুখে তাদের বারবার ফিরে যেতে হয়েছে। কিন্তু এই মহাজোট সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারত আবারো সেই দখলের অপচেষ্টা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এ সাংবাদিক। তিনি বলেন, সিলেট সীমান্তের খনিজ সম্পদ আর ভুসম্পদ ভারতকে আগ্রাসী করে তুলেছে। এর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে ভারতের আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশ তার অনেক ভূমিই হারাতে পারে। গতকাল বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, এটা ভারতের নির্লজ্জ আগ্রাসন ছাড়া আর কিছুই নয়। সীমান্তে একের পর এক মানুষ হত্যা, লুটপাট, অপহরণ এবং সবশেষে পাদুয়া দখল- এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের ভারত তোষণ ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ।বুধবার বিকেলে কয়েক'শ বিএসএফ সদস্য ভারতীয় লোকজন নিয়ে আকস্মিকভাবে সীমান্তের ১২৭০ ও ১২৭১ নম্বর পিলার অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রায় ৫০০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিএনপি মহাসচিব ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানানোর এবং পাদুয়া উদ্ধারে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
রেডিও তেহরান

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




