somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খা্বার

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বহু খাবার আছে। বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্রই এইসব খাবার ভীষণ জনপ্রিয়।


সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটা আইটেম হলো- সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস। সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস রান্না করলে একেবারেই আলাদা স্বাদ পাওয়া যায়। সাতকরা একটি লেবুজাতীয় ফল। টক-মিষ্টি স্বাদের ফলটি ঘ্রাণেও অনন্য। সাতকরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। শুধু গরুর মাংশই নয়, বড়মাছ দিয়েও সাতকরা রান্না করা হয়।


শৌখিন পরিবারের সদস্যদের জিবে জল আনে এই সাতকরা।সিলেটের বাইরের অন্যান্য জেলায়ও ‘সাতকরা’ নামক ঐতিহ্যবাহী এ খাদ্যটি পাওয়া যায় কদাচিত্। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি ও ব্যবসার জন্য বসবাসরত সিলেটিরা কাঁচা অথবা রোদে শুকিয়ে ‘সাতকরা’ নিয়ে যান প্রবাসে। বর্তমানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘সাতকরা’ চাষ হচ্ছে। আঠারো শতকে সিলেটের সীমান্তের ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যে ব্যাপকভাবে ‘সাতকরা’ চাষ হতো। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ‘সাতকরা’ চাষ শুরু হয় সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়। কমলালেবুর মতো ‘সাতকরা’র গাছ আকারে লম্বা ও বড় হয়। বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ‘সাতকরা’ চাষ হয়ে থাকে। এ তিন জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় ‘সাতকরা’ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। তবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চাহিদার তুলনায় ফলন কম এবং ‘সাতকরা’ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালি পরিবারে ঠাঁই করে নেয়ার কারণে বর্তমানে এ ফলটির বাজারমূল্য অত্যধিক। সিলেট অঞ্চলের শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এ ফলটির ব্যাপক কদর। সিলেটিদের কাছে ‘সাতকরা’ যেন এক অমৃত। বর্তমানে ‘পাতলা’ ও ‘ছোলা’ নামে দু’ ধরনের সাতকরা বাজারে পাওয়া যায়। রান্নার উপাদান ছাড়াও ‘সাতকরা’ চাষে খরচ কম এবং সাতকরার উচ্চমূল্যের কারণে এ ফলটি অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় তার মতো অনেকেই ‘সাতকরা’ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সাতকরা যে শুধু সুস্বাদু তরকারি ও টক তা নয়। এ ফলটি জনস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। বাত, শিরা-উপশিরা ব্যথায় যারা ভুগছেন তারা ‘সাতকরা’ খেলে এসব রোগ থেকে উপশম পেতে পারেন। সিলেট অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নে সাতকরা অদ্বিতীয়। ভারতের আসাম থেকে এদেশে এসে সাতকরা প্রায় ৩ কোটি সিলেটির প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সিলেট অঞ্চলের অনেক স্থানেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাতকরা চাষ করে কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সিলেটের প্রবাসীদের অন্যতম রসনাবিলাসের উপসঙ্গ ‘সাতকরা’ প্রচুর পরিমাণে বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বাজারে ‘সাতকরা’ পাওয়া যায় বলে প্রবাসীরা জানান। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ‘সাতকরা’ দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে গণ্য হবে বলে কয়েকজন রফতানিকারক জানান। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রেস্তরাঁয় সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস পাওয়া যায়।


প্রাচীন ঐতিহ্য সিলেটের পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপিঠা বা চুঙ্গাপোড়া। এ সময় বাজারে মাছের মেলাও বসে। হাওর নদীর বড় বড় রুই-কাতলা, বোয়াল, কঁই, মাগুর মাছ হালকা মসলা সহযোগে ভাজাকে মাছ বিরান বলে। আর সেই মাছ বিরান দিয়ে চুঙ্গা পিঠা খাওয়া ছিলো এক কালে সিলেটের ঐতিহ্য। বাড়ীতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গা পিঠা মাছ বিরান আর নারিকেলের মিঠা, বা ক্ষিরসা পরিবেশন না করলে বড়ই লজ্জার কথা ছিলো।
কিন্তু এখন আর সে দিন নেই। চুঙ্গা পিঠা তৈরীর প্রধান উপকরন ঢলু বাঁশ ও বিরন চালের ( বিন্নি) সরবরাহ এখন অনেক কমে গিয়েছে। বড়লেখা,পাথরিয়া পাহাড়, রাজনগড় উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড়, শ্রীমঙ্গলের কালাপুর পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে প্রচুর ঢলুবাঁশ উৎপাদন হতো। চুঙ্গাবাড়ী এক সময় ঢলুবাঁশের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো। এখন বনাঞ্চল উজাড় হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঢলুবাঁশ। ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরী করা যায়না। কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়েই ভেতরের পিঠা আপনাআপনি সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা হয়। কোনো কোনো মহিলা চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করেন। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গা পিঠা পোড়াতে খড়ের প্রয়োজন হয়।


বাকরখানীকে আমরা এখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বলে জানি। অথচ এই বাকরখানীর উৎপত্তি মূলত সিলেটে। সিলেট থেকে পরবর্তীতে এটি ঢাকা সহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেকালে শোখিন মানুষেরা বাকরখানী খুব পছন্দ করতো (এখনও করে)। ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্যরা হয়ে উঠে বাকরখানীর পৃষ্ঠপোষক। কালক্রমে এটি সিলেট থেকে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, মুঘল আমলে মুর্শিদকুলি খানের ছেলে আগা বাকর খান নর্তকি খানি বেগমের প্রেমে পড়েছিলেন। খানি বেগমের জন্য আগা বাকর মুর্শিদকুলি খানের উজিরের ছেলের সাথে যুদ্ধ করেন, বাঘের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। এই সব মারামারিতে একপর্যায়ে খানি বেগম নিহত হয়। আগা বাকর খান ও খানি বেগমের প্রেম কাহিনীর ইতি ঘটে। তবে পুরান ঢাকাবাসি তাদের নামকে ধারণ করেছে ঐতিহ্যবাহী খাবার বাকরখানির মাধ্যমে। তবে বাকরখানী সিলেটেরও ঐতিহ্যবাহী খাবার তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×