
বিয়ে-সাদীর আলাপ আলোচনা হলে মেয়ে পক্ষের প্রথম প্রশ্ন স্বভাবতই হয় 'ছেলে কি করে?' মহল্লার মুরুব্বিদের চায়ের আড্ডাতেও অমুকের 'ছেলে কি করে?' খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। উত্তরে তো যে যা করে তাই বলার কথা। ছেলে হয় পড়াশোনা করে নয়তো বেকার কিংবা ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, সরকারি/বেসরকারি চাকুরে, শিক্ষক, ড্রাইভার ইত্যাদি ইত্যাদি।
আশি, নব্বই এর দশকে আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখেছি, 'ছেলে কি করে?', এই প্রশ্নের একটা উদ্ভুত উত্তর খুব 'মার্কেট' পেয়েছিলো। 'ছেলে কি করে?' এর উত্তর ছিলো, 'ছেলে বিদেশে থাকে।' [উন্নত বিশ্বের দেশ হলে তো কথাই নাই]
মজার ব্যাপার হলো সেই সময়কার সামাজিক প্রেক্ষাপটে 'বিদেশে থাকা' টাই হচ্ছে বিরাট একটা 'কাজ'। এই কারনেই, 'বিদেশে থাকে' এই উত্তর শোনার পর, 'কি করে' সেই প্রশ্ন আর কোন প্রশ্নের মধ্যেই পড়তো না। না পড়ার কারনটাও খুব সহজ। যে ছেলে বিদেশে থাকে সে অবশ্যই দেশে থাকা ছেলেটার চাইতে বেশি অর্থ উপার্জন করে। যার অর্থ উপার্জন বেশি, তাঁর তো জ্ঞানও বেশি। আর লাগে কি? অতএব কনে আলহামদুলিল্লাহ বলবার আগেই, কনের বাবা আলহামদুলিল্লাহ বলে বসে থাকতেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সহ বড় শহরগুলির মোটামুটি অর্থ সম্পদ ওয়ালা মানুষদের কাছে দেশ আর বিদেশের মধ্যে এখন আর তেমন কোন পার্থক্য নাই। চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড/সিংগাপুর, বিয়ের বাজার করতে কলকাতা/দিল্লি, হানিমুনে মালদ্বীপ, গ্রীষ্মের ছুটিতে ইউরোপ এখন অনেকের কাছে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়ার চাইতেও কম সময়ের রাস্তা।
বিগত তিরিশ পয়ত্রিশ বছরে আমাদের পরিবার, সমাজ, রাস্ট্র যন্ত্রে অনেক কিছুই পাল্টেছে। কিন্তু মফস্বল শহরগুলোতে বসবাস করা আমাদের বেশিরভাগ মানুষেরই 'বিদেশে প্রীতি' বিষয়ক মনস্তাত্ত্বিক অবকাঠামো সেই আশির দশকে যে অবস্থায় ছিলো, এখনো একই অবস্থায়ই আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



