ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিয়ো না প্রবাদটি এতদিন শুধু শুনিয়াই আসিতেছিলাম। সামুর কল্যাণে এবার তাহা উপলব্ধি করিবার সৌভাগ্য হইল। এতদিন ব্লগে ব্লগাইয়া শেষমেষ কপালে এমনটা আছিল জানিলে কার বাপের সাধ্য আমারে ব্লগে ঢুকায়!!

বাংলা ব্লগের জগতে ঢুকিয়া প্রথমেই যাহা অনুধাবন করিতেছিলাম তাহা হইল, এইখানে জ্ঞানের বিয়াফক্ সমাবেশ মেলা দিন পূর্ব থেকেই ঘটিতেছে। জ্ঞানের মেলায় এত দেরিতে আমার পদার্পণে আমি যার পর নাই ব্যথিত হইয়াছিলাম। বহুদিন ঘাঁটাঘাটি করিয়া,মেলা চড়াই-উৎরাই পার হইয়া অবশেষে সামুতে আসিয়া থিতু হইবার সিদ্ধান্ত লইলাম।

দিন যতই বহিতে লাগিল,ভাবিতে লাগিলাম আরো পূর্বেই যদি এইখানে আসিতাম,তবে এতদিনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হইয়া বাড়ি ফিরিতাম। অজস্র ফালতু, ক্যাচাল সমৃদ্ধ, উস্‌কানিমুলক ও অজ্ঞানীয় পোস্টের মাঝেও অগণিত অসাধারণ, যুক্তি সমৃদ্ধ, উৎসাহমুলক ও জ্ঞানী পোস্ট আমাকে জ্ঞানের এক অসীমরেখা প্রদর্শন করিতে লাগিল। তখনি আমি ভাবিতে লাগিলাম কি করিয়া আমার আশেপাশের মানুষের মাঝে এই জ্ঞান ছড়াইয়া দেওয়া যায়।

অবশেষে ভাবনা শেষে সিদ্ধান্ত লইয়া আমি আমার কতেক বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র ও জুনিয়র ভ্রাতাকতেক কে সামুতে রেজিষ্ট্রেশন করিবার অনুরোধ করিলাম। বাংলা ব্লগ কি, কেন, কীভাবে জানাইয়া তাহাদের মুগ্ধ করিয়া ফেলিলাম। পূর্বেই তাহারা অল্পদিনে আমার বিয়াফক পরিবর্তন দেখিয়া (জ্ঞানগর্ভমূলক ) মনে মনে হতবাক হইয়া ছিল। অবশেষে আমার অনুরোধে তাহাদের কতেক আগ্রহী হইয়া কিছুদিনের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন করিয়া ফেলিল।

মনে মনে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলিয়া আমি ভাবিয়াছিলাম, 'যাক, এতদিনে বুঝি একটা কাজের কাজ হইল। ' কিন্তু আমি কস্মিনকালেও ভাবিতে পারি নাই, ইহা ছিল আমার এক চরম ভ্রান্ত অনুসিদ্ধান্ত। :-< আমি আমার নিজের প্রারম্ভিক অবস্থার কথা ভুলিয়া গিয়াছিলাম। আমি ভুলিয়া গিয়াছিলাম, সামুতে রেজিষ্ট্রেশন করিবার পরে সামান্য মন্তব্য করিবার সুযোগ পাইতেও মানুষের মাসকে মাস অপেক্ষা করিতে হয়!!

ধৈর্যের বাধ ভাঙ্গিয়া আমার বন্ধুরা আমায় সামনাসামনি, ফোনে, মেইলে, স্বপনে যেখানে যেই অবস্থায় পাইল, সেখানে সেই অবস্থায়ই তাহাদের এতমাসের জমানো ক্ষোভ গালিতে রূপান্তরিত করিয়া উগ্‌রাইয়া দিতে লাগিল। আর আমি কপাল চাপড়াইতে চাপড়াইতে আকাশের দিকে তাকাইয়া কাঁদিয়া কহিতে লাগিলাম, 'হে সামু, জ্ঞানের জাহাজ হইতে চাহিয়াছিলাম,গালিতে Ph.D নয়!! '