ঘর হতে যেহেতু বের হওয়া হয় না তবে বন্ধুদের সাথে ফোনেই কথা বলি কিছুন- নীলয় ভাবতে থাকে। আচ্ছা, এই শহরের বাইরে অজানা অচেনা একটি নম্বরে ডায়াল করলে কেমন হয়- ভাবনা দ্রুত বদলে যায়। অচেনা নম্বরে ডায়াল করবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সে ফোন সেটের বাটন প্রেস করতেই বুঝতে পারে এন.ডব্লিউ.ডি. লক করা। লকটা তার বাবাই করেছে নিশ্চয়। কারণ হচ্ছে, মাস শেষে বিলের বোঝায় যেন মাঝবয়েসী কাঁধ খসে না যায়। কিন্তু বাবার অগোচরে লক নম্বরগুলো নীলয়ের জানা। লক খুলেই সে একটি নম্বরে ডায়াল করে, রিং হচ্ছে (হয়তো কোন সুরেলা রিং টোন বেজে চলেছে)। চতুর্থ রিং হওয়ার সাথে-সাথেই ওপাশ হতে যান্ত্রিক কন্ঠের মতো কর্কশ ভাষায় কেউ একজন বললো- হ্যালো... কে বলছেন। নীলয়ের পছন্দ হয় না, সে নির্বাক থেকে রিসিভারটি রেখে দেয়। কেন যেন নিজেকে নিজেই দোষারোপ করল নীলয়, ভাবতে থাকল এই ভেবে যে, কথা না বললে অহেতুক ফোন করে বিল বাড়িয়ে লাভ কি? এবার যে হবেই হোক কথা আমি বলবই- মনস্থির করে নীলয় নতুন নম্বরে ডায়াল করে... প্রথমে লাইন পাওয়া যায় না, সে রিডায়াল বাটন প্রেস করে। এবার লাইন কীয়ার... রিং হচ্ছে, এক... দুই... তি..
- হ্যালো কে বলছেন প্লীজ
- হ্যালো আমি নীলয় বলছি
- কোন নীলয়, আমি কি আপনাকে চিনি?
- না, আমাকে আপনি চিনেন না, আমি রাঙামাটি হতে বলছি
- ও, তাই, আপনি আমার নম্বর পেলেন কই?
- আসলে আমি আপনাকে চিনি না, নম্বর পাবো কই?
- কি বল্লেন আমাকে চিনেন না!
- সত্যিই, আমার হঠাৎ কেন জানি মনে হলো একটি অপরিচিত নম্বরে ডায়াল করি, কথা বলি কিছুন
- আপনি কি আমাকে আপনার কথা বিশ্বাস করতে বলেন?
- হ্যাঁ, তাই বলছি। অচ্ছা, এবার বলেন তবে আপনিকে? কি করেন?
- প্রকৃতভাবেই আপনি না জেনে ফোন করেছেন
- হ্যাঁ
- তবে বলি আমি হচ্ছি নীলা। মডেলিং করি
- সত্যিই, আপনি নীলা বলছেন
- কেন আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না
- না তা অবশ্য নয়, তবুও কেন জানি খটকা লাগছে। আমি না জেনে একটা নম্বর চাপ দিলাম আর তা গিয়ে টোকা দিলো আপনার দরজায়
- এ রকমও হয় নাকি
- কেন হবে না, এই তো হয়ে গেল না
এভাবেই বেশ কিছুন চলতে থাকে ফোনালাপ। দু’জনই দু’জন সম্পর্কে জেনে নেয় বেশ কিছু তথ্য। আলাপের শেষ প্রান্তে নীলয় জিজ্ঞেস করে আমি কি পরে কখনো ফোন করবো?
কখনো কখোন মানুষ মানুষকে অকারণে পছন্দ করে ফেলে হয়তো নীলয়কে নীলার কাছে সে গোত্রীয় মনে হয়। অথবা তাদের নাম দু’টি কাছাকাছি হয়ে যাওয়ায় হয়তো নীলা নীলয়ের প্রস্তাবে শর্ত সাপেে রাজী হয়। এ বলে যে, নীলয় ফোন করতে পারবে ঠিক আছে, কিন্তু নম্বর কোন কাউকেই দেয়া যাবে না। নীলয় এক কথায় রাজি হয়ে যায়।
সেদিন নীলয় এক অদ্ভুত ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সবকিছুতেই সে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। ছোট বোনদের বিরক্তি তার মনে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে না।
পরদিন সকাল বেলা, নাস্তা শেষ হলে মা টাকা আর বাজারের থলেটা নীলয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। সে অন্য এক অনুভূতি নিয়ে বাজারে যায়। বাজার শেষ করে বাসায় ফিরে আয়নায় নিজেকে দেখে সে শেভ করার জিনিস পত্র নিয়ে বসে। মুখে অগোছালো দাঁড়ি-গোফ কামিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয় নীলয়। একটু বের হবে নীলয়। নীলয়ের এখন খুব একটা আজ নেই পরীা শেষ হয়েছে ক’দিন হয়। তবে এখনো সে মা-বাবার বাধ্য সন্তান। পৃথিবী অন্য গতিতে চলবে তারপরও বাবা-মার সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করে না কখনো, নীতি বিরুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের অভিমুখে। সয়ে গেছে সে। আসলে বেড়ে উঠার উপর জীবনের অনেক প্রভাব পড়ে। এভাবেই কেটে যায় দিনগুলো নিয়মের সুতোর টানাপোড়নে।
দিন দশেক পরে সে আবার নীলার সাথে কথা বলতে চায়। মনটা উদগ্রীব হয়ে উঠে অজানা আশঙ্কায়, বিশ্বাসহীনতায়। সে ডায়াল করতে থাকে গুপ্ত নম্বরে...
- হ্যালো, কে বলছেন প্লীজ?
- আপনাদের যান্ত্রিক শহরে হতে প্রায় ৫০০কিঃমিঃ দূরত্বে থাকা আমি বলছি। এর মাঝেই ভুলে গেলেন।
- ও আচ্ছা নীলয়, এতোদিন ফোন করেন নি কেন?
- করবো করবো করে করা হয়ে উঠেনি, পাশাপাশি একটা সংশয়ও ছিলো
- ভালো আছেন?
- হ্যাঁ, আপনি?
- এই তো ভালো, আপনি যেন কিসে পড়েন?
- এবার এইচ.এস.সি ফাইনাল দিয়েছি
- তবে তো আমরা কাশমেট
- দারুণ তো
- হ্যাঁ, এখন তবে আমরা তুমিতে চলে আসতে পারি
- ঠিক আছে। এখন কেমন কাজ তোমার?
- এই কয়েকদিন শ্যুটিং না থাকলেও সামনে কিন্তু কাজের চাপটা খুব বেশি। এইতো সেদিন ...........কোম্পানীটির ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হয়ে চুক্তিপত্রে স্বার করলাম
- অভিনন্দন তোমায়
- থ্যাঙ্কস
- রাঙামাটির দিকে কখনো আসা হয়নি তোমার?
- না, ভাবছি মা সহ এবার অবশ্যই আসব
- আমন্ত্রণ থাকল আমার শহরে
এভাবে চলতে থাকে ফোনালাপ, বয়েস বাড়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে সম্পর্কের ঋণ। তাদের মধ্যে দূরত্বের সীমারেখা বিলীন হয়ে গড়ে উঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। অনেক দূরে থেকেও পরষ্পর পরষ্পরকে চেনে খুব কাছ হতেই। তবুও একটা আড়াল রয়ে যায়। এটাই সত্যি, এই বাস্তবতা। খুব কাছাকাছি বসবাসরত দু‘জনের মধ্যেও একটা আড়াল রয়ে যায়। হয়তো সে আড়াল আমরাই আমাদের প্রয়োজন ভেঙ্গে ফেলতে পারি না।
নীলার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নীলয়দের বাসাতে সবাই জানে। বাসার সকলেরই একটা আগ্রহ কাজ করে এ সম্পর্ক নিয়ে। হয়তো নীলয়ের পরিবার আত্মীয়তার সুঘ্রাণ নিতে চাইছে। পরিবারের নীরব এই সম্মতিটা নীলয়ের বুঝতে অসুবিধা হয় না। সে সবকিছুই ছাপিয়ে এক ধরণের সাহস অনুভব করে, আত্মতৃপ্তির বর্ষণ হয় সর্বাঙ্গে। সে দ্বিধা দ্বন্ধ নিয়ে অন্যভাবে ভাবার চেষ্টা করে, যদিও বা অনিশ্চয়তার কলেবর সুগঠিত। সেদিন বৃষ্টিøাত রাত। বৃষ্টির শব্দের সাথে অনুভূতিগুলো খেলা করে অবিরাম। ফোন বেজে উঠে, হ্যালো বলতেই ওপাশ হতে ভেসে আসে কিছুটা আহলাদী গলায়- কি কর এখন তুমি?
- তোমাকে ভাবি?
- তাই, তুমিতো আমার শহরকে যান্ত্রিক শহর বলে আখ্যায়িত করলে এখন তুমি তোমার শহরের আবহ নিয়ে বলো-
- এ মুহুর্তে ভালো লাগছে না, পরে না হয় তোমাকে একটি কবিতা লিখে জানাব এ শহর আর জীবনের গতিপথ..
- তুমি কবিতাও লিখ নাকি, আগে কখনো বল নি কেন?
- হয়তো সুযোগ হয়ে উঠেনি, এখনতো বললাম
দুজনের টেলি-যোগাযোগ বন্ধুত্বের বয়স প্রায় ৭ মাস। মাঝখানে প্রায় প্রতিদিন আলাপ হতো। কিন্তু বিগত ৭দিন ধরে তাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ নেই। নীলয়ের ব্যাপারটা না হয় বোঝা গেল- তার ভীষণ জ্বর। একশ তিন, চার এ ধরণের। ডাক্তারের কথামতো বিভিন্ন টেস্ট করানো হয়েছে। তবে খুশির কথা হলো, টেস্টে খারাপ কোন রিপোর্ট আসে নি। ডাক্তার অবশ্য বলেছে- এটা ভাইরাস জ্বর। সুস্থ হতে আরও দিন তিনেক চারেক লাগতে পারে। নীলয় খুবই কান্ত, দূর্বল। তবুও আবেগের ঘুণপোকাগুলো তাকে কষ্ট দেয়, পিছু ছাড়ে না। এক চিলতে মেঘ ঠিক যেভাবে সূর্যকে ঢেকে রাখতে পারে, সেভাবে এক চিলতে অভিমান তাকে বিষন্ন নির্জনে নিয়ে যায়।
তারপরের দিন সন্ধ্যায় টেলিফোন বাজতে থাকে। ফোন ধরে নীলয়ের মা।
- হ্যালো, কে বলছেন?
- আমি নীলা, নীলয়কে একটু... (বলার সুযোগ হয় না)
- ও নীলা, মা তার তো খুবই জ্বর ক’দিন ধরেই
- তাই না কি?
নীলা জেনে নেয় অসুখের বৃত্তান্ত। নীলয়ের মাকে নীলা জানিয়ে দেয় সে এ ক’দিন ঢাকার বাইরে ছিলো। নতুন একটা বিজ্ঞাপনের কাজ শেষ করলো। এখন একদম ফ্রি। তাই নীলা ভাবছে তাঁর মাকে নিয়ে সে এবার রাঙামাটি আসবে- দিন কয়েক পর।
১০ তারিখ, সকাল ৬.৩০ মিনিটের সময় নীলয় নীলাদের রাঙামাটি এস আলম কাউন্টার হতে রিসিভ করলো। নীলয় পরিচিতি পর্ব শেষ করে সবাইকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। তাদের মধ্যে তেমন কোন কথাবার্তা আর হয় না, নীলয়দের বাসায় অতিথিদের সকল আয়োজন সম্পন্ন। তারপর বিশ্রাম। দিনটি চলে যায় এভাবে টুকটাক আলাপ-চারিতার মাধ্যমে। কখনো হয়তো পাশের বাসার আগ্রহী মানুষজন দেখতে এসেছে নির্জীব পর্দায় সদা হাস্য-উজ্জ্বল নীলা আর বাস্তবতায় রক্তে-মাংসে গড়া নীলার মিল-অমিল দেখতে। নীলয়ের সাথে তার উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই ঘটে নি। মাঝে মাঝে চোখা-চোখি আর কখনো আড়চোখে দেখাদেখি।
পরিদিন সকালে নাস্তার টেবিলে নীলা উদ্দেশ্যহীন ভাবে বললো- রাঙামাটির দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? কেউ কিছু বলার সুযোগ পাওয়ার আগেই নীলয়ের ছোটবোন রিয়া বলে আপু পর্যটন, শুভলং, পেদা তিং তিং, রাজবাড়ী, রাজবনবিহার, ডিসি বাংলো.......
নীলয়ের পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় সবাই মিলে একত্রে বের হবে আর একত্রেই বেড়িয়ে আসবে, তবে তা হবে আগামীকাল আর পরশুদিন। সেদিন সন্ধায় নীলা, নীলয় ও তাদের মা তবলছড়ির টেক্সটাইল মার্কেটে ঘুরতে যায়। টুকটাক কিছু কেনাকাটা সম্পন্ন করে তারা বড়ী আসার সময় নীলয় বনরুপা নেমে যেতে চাইলে নীলা বলে আমিও নামবো। সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরার শর্তে তারা দু’জন নেমে যায়।
নীলয় জানতে চায় কেমন লাগছে আমার শহর। নীলা আনমনা হয়ে বলে হ্যাঁ, ভালো খুবই ভালো। কিছুন ঘুরে বাসায় ফিরে আসে দু’জন। অগোছালো আলাপচারিতা চলতে থাকে তাদের মাঝে। শেষ হয় দিন, ণগুলো। সবাই মিলে বেড়িয়ে পরে সমগ্র রাঙ্গামাটির অনাবিল সোন্দর্য দর্শনে। নীলাও মফস্বলের এ পরিবারের সাথে নিজেকে খুব মানিয়ে নেয়। বাইরের কেউ মনে করবে, সে এই পরিবারেরই একজন। কোন এক সময় নীলা নীলয়কে মনে করিয়ে দেয় প্রতিশ্র“তিবদ্ধ কবিতার কথা। রাতগুলো ভোর হয়। তাদের ফিরে যাবার বেলা এসেছে।
নীলয়ের হৃদয় গহীনে যেন কাল বৈশাখীর ঝড়ে হওয়ায় বয়ে যায়। প্রমত্ত পদ্মার স্রোতে যেন ভাসিয়ে নেয় সবকিছু... কোন অজানা আশঙ্কায় স্বপ্নগুলো বুঝিবা লুট হয়ে যায়... সে কি তবে নীলার হাত ধরে পাড়ি জমাতে চায় জীবনের পথে? নীলার কি এ ধরনের কোন অনুভূতি হচ্ছে না। হয়তো না। নীলয়-ই-বুঝি বিপরীত স্বপ্ন বুনে।
তবু বিদায় বেলায়, নীলয় আবিষ্কার করে নীলার অশ্র“সিক্ত নয়ন যুগল। ঐ চোখগুলো কি কিছু বলতে চায়... আর জানা হয় না। শুধু দূরত্বটুকু বেড়ে যায়।
নীলা ঢাকা পৌঁছে ফোন করে। আর পড়ে নেয় নীলয়ের সেই কবিতাটিÑ
অনেক দূরে আমার বসতি-
তোমার যান্ত্রিক শহরের সুদীর্ঘ পিছনের স্থাপত্য এখানে
নিয়ম করে বেঁচে থাকা মফস্বলীয় গন্ডির
নিম্ম মধ্যবিত্ত আয় উৎসের পাশ ফেরা ছায়াতলে
এখানেই আমার সর্বস্ব- পাখির সুরেলা শব্দ
হাড্ডিসার শিশুর ছেঁড়া প্যান্টে ব্যস্ততা, অসময়ের নিপীড়ন
কুষ্ঠ রোগীর একাকীত্বতা, কৈশোরের উম্মাতাল দিনলিপি
রাত শেষে ভোরের আযান, সন্ধ্যায় দ্বীপ জ্বেলে প্রার্থনা
পারিবারিক দায়বদ্ধতা, কখনো মাঝরাতের তুমুল কলহ
আবৃত আমি, আবৃত করে রাখে আমায়-
হৃদয়ে সঞ্চিত গোপন অভিলাষ কখনো
ছুটে যায় তেরো নদী সাত সমুদ্দূর..
ভালোবাসার কোন আকর্ষণী মতায় আবিষ্ট হৃদয়!
দেখিনি কখনো, রাখিনি অপিটে আঁখি
তবুও মন বাঁশীতে সুর তোলে, মেঘেরা বর্ষিত হয়
আমি সারারাত ভিজতে থাকি মেঘময়ীর ছন্দে
স্বপ্নের আরাধণায় স্বপ্ন বুনে পথ হাঁটি ধূলোমাখা পথে
যদি সময়ের কোন ণে দূরত্বের সীমারেখা বিলীন হয়...
নীলয় যখন স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে সে নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছে। সে জানে সামঞ্জস্যতাহীন এ প্রেমের পরিণতি, আদ্যন্ত। তবুও ভালোবাসার গতি ভেঙ্গে দেয় যুক্তির রুদ্ধ দেয়াল। সে ভাবতে থাকে মানুষের সব খবরই তো চোখের মাঝে লেখা থাকে ইচ্ছে করলেই তো তা পড়া যায়। তবে কি নীলা আমার চোখের ভাষা পড়ে নি। নাকি পড়েই চুপ রয়েছে। এতকিছুর মাঝে এখনো টিকে রয়েছে শুধু ফোনালাপ। এ আলাপের বয়স আজ এক বছর পেরিয়ে গেছে। তবু নীলয় এখনো বলতে পারেনি কিংবা বলেনি ভালোবাসি। অথচ কত সহস্র রাত, ভোর, দিন, ণ শুধু নীলাকে ভেবেই শেষ হয়েছে।
আজ অকারণে মনটা ভালো নেই নীলয়ের। তেমন কিছুই ঘটেনি, তবুও কেন জানি মন খারাপ। নীলার কাছে ফোন করতে চায় সে। কিন্তু মোবাইল বন্ধ। কবিতা লিখবে বলে সে মনস্থির করে, কিন্তু কোন শব্দই সে খুঁজে পায় না যেন বাংলা অভিধাণে শব্দের দুর্ভি হয়েছে। বিরক্তিতে মন খারাপ ভাবটা আরও বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। পৃথিবীর যাবতীয় সবকিছুই এখন বিস্বাদ, তেতো। ফোন বেজে চলে.. সে ধরছে না। তিন, চার রিং পড়ার পর বন্ধ হয়। তার প্রিয় ফোনকেও এখন বিরক্তি লাগছে। কিন্তু তার মা ডেকে বলে, নীলয় ফোন ধরো- তোমার ফোন,
- হ্যালো, কে-
- কে বলতো দেখি?
- নীলা কেমন আছ তুমি, মোবাইল বন্ধ কেন?
- ভালো, চার্জ কমে যাওয়ায় বন্ধ করে রেখেছিলাম
- কি খবর?
- তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা ছিলো
- বলতে থাক, আমি শুনছি
- হেয়ালী রাখ, আমি কিন্তু সিরিয়াস
- আচ্ছা, ঠিক আছে
- নীল তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো, তা আমি স্পষ্ট জানি ও বিশ্বাস করি, তোমার আচরণ আর তোমার কবিতা তা প্রমাণ করে দেয়
- তুমিও কি নও সে পথিক?
- না, আমার ইচ্ছে থাকলেও আমি একটি চক্রবুহ্য থেকে বের হতে পারি না। আমি একটি নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে আটকা পড়ে আছি। বাবার প্রস্থানে তার দেওয়া কথামালার ছন্দে আমার পথের পরে অপোয় থাকে অন্য পুরুষ।
- তবে তাই হোক, সে পথই জয়ী হোক
- খুব অন্যায় হয়ে গেছে আমার, তাই না
- না কখনো না, আমার ভালোবাসা কিছুটা ভিন্ন পথে চলে
- কেমন শুনি
- আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা সত্য। তবে তার অর্থ এই নয় যে, তোমাকেও আমাকে ভালোবাসতে হবে। এমন কোন শর্ত দিয়ে তো তোমাকে আমি ভালোবাসিনি। নয় কি? আমার ভালোবাসাটুকু বেঁচে থাকে আমাকে কেন্দ্র করে নিভৃত নির্জনে... হ্যাঁ একথা সত্য যে প্রাপ্তির আনন্দটুকু অনাবিল, কিন্তু অপ্রাপ্তিতে ভালোবাসা হারিয়ে যাবে, ফুরিয়ে যাবে এ মন্ত্রে আমি বিশ্বাসী না।
- নীলয় আমাকেই আজ আমি অপরাধী মানি। তোমার স্বপ্ন বুননে আমারতো একটা প্রচ্ছন্ন ছায়া ছিলো। আবার সেই আমিই তো স্বপ্ন ভাঙ্গার সুর তুলি তোমার হৃদয় তানপুরাতে...
- না, তা হবে কেন? প্রয়োজন তো আমার ছিলো, আমিই খুঁজে বের করেছি তোমায়, দেখবে বয়ে যাওয়া সময়ের অন্তরালে তোমাকেই একদিন হারিয়ে ফেলব এই আমি
চলতে থাকে কথোপকথন আর আবেগের বর্ষণ। দুটি পাড় যখন পরষ্পর হতে দূরে সড়ে যায় তখন নতুন করে কাঠামো তৈরীর ভাবনা ভেবে কি লাভ? স্বপ্নের ভেঙ্গে যাওয়া টুকরাগুলো এলোমেলো ছড়িয়ে পরিধি অতিক্রম করে, বোঝা ভারী করে- তবুও এগুলো কুড়িয়ে নিপে করতে হবে বিবর্ণ প্রজাপতির দেশে- অনাগত দিনলিপির নিশ্চয়তায়, দায়বদ্ধতায়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৪:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



