উপর্যুপরি ফিল্ড ভিজিটের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে এক রবিনহুডের বাসায় গিয়েছিলাম। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোর আলাদা রিকভারি এজেন্ট থাকে, তবুও কর্মকর্তা হিসেবে আলাদা দায়বোধ থেকেই যায়। সে কারণেই সুযোগ করে সপ্তাহে দু' একদিন বের হওয়া।
সে যাই হোক, কড়া রোদ মাথায় শাখার কিছু ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে একেবারে যুদ্ধ ঘোষণা করেই বেরিয়েছি। রবিনহুডেরা আমাদের ধরে পেটায় কিনা সেটাও একটা চিন্তার বিষয়।
খেলাপি সাহেবের বাসায় গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। মফস্বলের বাসা। মাটির দেয়াল আর বেড়া দেখলাম। বুঝতে পারছিলামনা ঢুকব কোথা দিয়ে, উঠোনে নানা সবজি, নারকেল গাছ আর বাঁশ টানা দড়িতে ভেজা শাড়ি- কাপড়ের দোলন... বেশ গ্রাম গ্রাম অনুভূতি। হৃদয়ে কোথায় নিষ্ঠুরতা ঢুঁকাবো, উল্টো বাড়িটার প্রেমে পড়ে গেলাম।
প্রেমের এই পর্যায়ে রবিনহুডের ছোট্ট মেয়েটা আসলো। জানালো বাবা বাড়ীতে নেই। এবার মেজাজ বিগড়ে গেল। বাচ্চা মেয়েটাকে দিয়ে মিথ্যে বলানো হচ্ছে বলে নিসন্দেহ ছিলাম। অম্মাহহহহ... উঠোন পেরিয়ে, মাটির দেয়ালের মাঝের আধকুজো দরোজার ভেতর চিড়ে- চ্যাপ্টা হয়ে ঢুকে দেখি ভেতরে আলিবাবার চিচিংফাক পাকা বাড়ি। অত্যাধুনিক। কি নেই তাতে!!!!
মাগো মা... মাথাই নষ্ট!!!!!
বেচারা রবিনহুড উদোম গায়ে টাইলস বিছানো মেঝেতে অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে শুয়ে একখান দারুণ গান উপভোগ করছেন। সনি ব্রাভিয়া ইঞ্জিনের মনিটর। বিশাল মনিটর। আমার ঘরের দেয়ালের সমান। এত বড় বড় নায়ক নায়িকা আমি আমার জীবনে দেখিনি!!!!
আমায় দেখে, তিনি লাফ দিয়ে উঠতে গিয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থা থেকে আরেকটু হলে পুরোই হয়ে যেতেন। তাই মাথা পিছন দিকে ঘুরিয়ে কিছুই হয়নি ভাব করে টাকা চাইলাম। টাকার বদলে তিনি নাস্তা আনতে দিলেন।
ঋণখেলাপিদের নাস্তার বহর আবার ঋণের চেয়ে বেশী পরিমাণের হয়। নাস্তার টাকা দিয়ে তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিতে পারবেন বলে আমার ধারণা। তাই, এদের বাসার পানি না ছোঁয়াও একটা রিকভারি টেকনিক।
নাস্তা আনতে মানা করে তাকে টাকা দিতে বলাতে তিনি হুড ফেলা রবিন হয়ে গেলেন। ইয়াক্কুউউউ করে কেঁদে দিলেন। আমি ইমোশনাল হয়ে তাকে আবার টাকা দিতে বললাম। তিনি খপ করে আমার হাত ধরে বললেন,
" স্যার, অনে আর ল ভিতুর মিখ্যা আইয়ুন। আর আলমারিৎ কিছু আছেনা চউন!!! থাইলে লই যউন...!!!!!!"
পেশার খাতিরে আমি কতবড় নির্লজ্জ হতে পারি তার ধারণায় ছিল না, নিজে না গেলেও রিকভারি এজেন্ট কে পাঠালাম। তিনি ভাবতে পারেন নি তার আমন্ত্রণ আমরা গ্রহন করব।
পরিশেষঃ আলিবাবার রবিনহুড গুহা থেকে পুরো ঋণের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছিল সেদিন। এবং, তাতে ঐ গুহার সামান্যতম ক্ষতি হয়নি। অথচ গত নয়মাস ধরে অদ্ভুত সব মিথ্যায় ভরা ছিল এই লোকের মুখ।
আসার সময় বাচ্চা মেয়েটার মুখে হাসি ছিল। ওকে একটা চুমু খেয়ে আসলাম। ওর রবিনহুড বাবার মিথ্যা ওকে স্পর্শ না করুক।
সামনের বার ও মাথা উচু করে আহুত- অনাহুত অতিথিদের বলুক..." আব্বা ঘরত "