ঘটনা আজ থেকে নিয়া প্রায় ছয় মাস আগের। একদিন বন্ধু সাকিব বাসায় আইসা কয় দোস্ত, দেহরক্ষীর ট্রেইলারটা দেখ! যদিও তখন ট্রেইলার শুনার দশায় নাই! বীভৎস অবস্থা! এক মেয়েকে পছন্দ করতাম দুই বছর ধরিয়া। আমি গাধা বলিয়া প্রপোজ করি নাই। তয় গত বছরের শেষাংশে প্রপোজ করতে গিয়া নগদে রিজেক্ট হইয়া মাথায় যা বুদ্ধি ছিল তাহাও হারাইছি। তার দুই দিন পর ভার্সিটি থিকা ফুন আসিল, “ভাইয়া, আপনি লেভেল ড্রপ খাইয়াছেন!” আমি গম্ভীর গলায় তাহাকে বলিলাম, “এইবার আসল খেলা জমছে!” সে কন্ঠ আরও গম্ভীর করিয়া বলিল, “ভাইয়া, খেলা টেলা না, আপনার সেমিস্টার ড্রপ হয়েছে!” আমি ক্ষীণ স্বরে বলিলাম, ও আচ্ছা। তার দুই দিনের মধ্যে কম্পুটারে দেখা দিল সমস্যা!! এমন ভগ্ন হ্রদয় নিয়া মুভির ট্রেইলার দেখা যায় না। তাও বেস্ট ফ্রেন্ড বলিয়া কথা। ছাড়িলাম। ট্রেইলারও দেখিলাম। কিন্তু কাক অথবা কোকীলতালীয় ভাবে সুহানা আপুর দিওয়ানা হওয়া ছাড়া মাথায় তেমন কিছু ঢুকে নাই।
ললনা এবং শিক্ষক দুইজনের দেওয়া ছ্যাঁকের ইফেক্ট বহন করিতে করিতে প্রায় ছয় মাস ধরিয়া যখন অর্ধমৃত প্রায় তখন গতকাইলকা বন্ধু বাসায় আইসা কয় দোস্ত, চল সুহানার মুভি দেইখা আসি। আমিও কিঞ্চিত বিনুদুন পাওনের আশায় আর মাথটা ঠান্ডা রাখনের লাগিয়া চলিয়া গেলাম মুভি হলে!
ঢুকিতে অল্পক্ষণ দেরী হইল। যখন শুনিলাম বান্ধুবীও আছে তখন ভাবিলাম কিঞ্চিত লেট করিয়া ঢুকি! আইটেম সংটা এট লিস্ট শেষ হোক! কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে যখন ঢুকিলাম ঠিক তৎক্ষণাৎ ইশটারট হইল আমার সবচেয়ে ফেবারিট গানখানা! “দিওয়ানা কত দিওয়ানা, ঘুরে আগে পিছে হয়ে মস্তানা”!
যা হোক, গান শেষ হওনের লগে লগে আমাগো আসলাম ভাইজান সুহানা আফার হাত ধইরা ভালুবাসার কথা জানাইয়া দিলে নগদে আফামণি রিজেক্ট করিয়া দেন। অতঃপর সুহানার বাবাকে ভাইজান কিডন্যাপ কইরা লইয়া যান। কিডন্যাপ করার সময় ভাইয়া তার বাবাকে বলেন ভাইয়া দেশের কালো জগতের ডন! সুহানাকে বিয়ে না করে ডন তার বাবা অথবা মেয়ে কাউকে ছাড়বে না! এদিকে সুহানাকে বারে বারে নাচানোর জন্য ভাইয়া সুহানার বাবার তীব্র সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য, আপু বারে বারে নেচে যেই টাকা পেত তা দিয়ে তার বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করত! আসলাম বলে, সুহানাকে বিয়ে করলে আর নাচানাচি করা লাগবে না। তাও সুহানার বাবা বলেন যে তার মেয়ে তাকে কিছুতেই বিয়ে করবে না!
এদিকে আসলাম সুহানার বাসায় গিয়ে সুহানাকে থ্রেট দিয়ে আসে। সুহানা প্রেম করিতে অস্বীকার করিলে আসলাম তার বাবার ওপর টরচারের অডিও ক্লীপ সুহানাকে শুনালে সুহানা সুরসুর করে চলে আসে!
ঘটনা প্যাঁচ খাইল যখন আসলামের চিরশত্রু সিজারের ভাইকে আসলাম মেরে ফেলাতে সিজার প্রতিশোধ নেওয়ার আশায় সুহানাকে তুলে নিতে চায়!
এদিকে তীব্র মহান দায়িত্ব নিয়ে আসলামের বাসায় থেকে সুহানার দেহরক্ষা করতে থাকে। সিজার একসময় বাসায় হামলা চালালে তীব্র বাড়ির চাকর বাকর সহ সুহানাকে নিয়ে পালিয়ে তার নিজের বাসায় চলে যায়! এদিকে সুহানার মুক্তি পাওয়ার অনেক উপায় খোঁজে কিন্তু মুক্তির কোন উপায় দেখে না! উপরন্তু তীব্র ভাইয়া বাড়ির সব জায়গায় এমনকি বাথরুমেও সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখে!
যা হোক, এই মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে সুহানা তার সব কিছুই তীব্রকে দিতে চাইলেও তীব্র নেয় না!
এদিকে সিজার অর্ধমৃত তীব্রকে বাচিয়ে তোলে তার শত্রু আসলামকে মারার জন্য!
সুহানা আসলামকে ভালবাসে না বলে আসলাম সুহানাকে বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য নিলামে তোলে! এরই মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সুহানা বিক্রি হয়ে যায়! বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর তীব্র ছুটে আসে। কিন্তু তার আগেই সুহানা বিক্রি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তীব্র আসলামকে মেরে তক্তা বানিয়ে জানতে পারে সুহানাকে নিয়ে ওরা এয়ারপোর্টে আছে! তীব্র এয়ারপোর্টে উল্কার বেগে ঢুকে সুহানাকে উদ্ধার করে! অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল!
ছবির সিনেমাটোগ্রাফী বেশ ভাল লেগেছে। ডিরেক্টরের কাজও মোটামোটি মানের! আসলাম চরিত্রে মিলনের অভিনয় অসম্ভব রকমের ভাল ছিল। বলা যায় জিরো ফিগারের ববির পরই ছবির আকর্ষণ ছিল মিলন। প্রথম দিকে একটু বেখাপ্পা লাগলেও শেষাংশে এসে মিলনের অভিনয় মুগ্ধ চোখে দেখেছি। মিলনের অভিনয় দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছি মারুফের কাজ দেখে ততটা হতাশ হয়েছি! আরও অনেক ভাল করতে পারত! আর ববিই যেহেতু ছিল ছবির জান ছবির প্রাণ, কাজেই তাকে নিয়ে কিছু বলতে পারছি না!
সবচেয়ে ভাল লেগেছে ছবির কাহিনীটা দেখে! প্রচলিত বাণিজ্যিক ছবি থেকে বের হয়ে এসে বেশ ভিন্ন একটা থীমে বানানো এই অ্যাকশান নির্ভর ছবিটি। এতদিন সাধারণত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের একটা বৃহৎ অংশ শুধুমাত্র আর্টফিল্ম দেখার জন্য সিনেমা হলে যেত। “চোরাবালি” দিয়ে মধ্যবৃত্ত সম্প্রদায়কে বাণিজ্যিক ছবি দেখাতে হলে ফিরিয়ে আনার সূচনা করেছেন রেদওয়ান রনি! দেহরক্ষী হয়ত তা কিছুটা এগিয়ে দিবে!
ছবির সবচেয়ে বড় সমালোচনা করতে গেলে বলতেই হয় পোশাকের কথা! এখনো বাঙ্গালি কালচার এই ধরণের ট্রেডিশন আমাদের দেশের তৈরী ছবিতে দেখতে পুরো প্রস্তুত হয় নি! কয়েকটি জায়গায় মেয়েদের সেক্সের বস্তু হিসাবে দেখানো হয়েছে। ছবির কয়েকটি সংলাপও ছিল অত্যন্ত সস্তা! হয়ত ইংলিশ ছবিতে অবলীলায় সেক্সুয়েল ভায়োলেন্স কিংবা নায়িকার নায়ককে আকর্ষণ করার উপায় আমরা অবলীলায় দেখে থাকি, হয়ত বলিউডের শিলার উদ্দাম নাচ, মুন্নীর বদনাম টিভি স্ক্রীণে সবার সামনে দেখতে আমাদের সমস্যা হয় না কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের কালচারে দেশীয় মুভিতে এক লাফে এতকিছু দেখাটা একটু কেমন যেন! তবে স্বীকার করে নিতেই হবে ববির খোলামেলা থাকাটা ছিল পুরো ছবির সুহানা চরিত্রটির দাবী। তারপরও পরিচালক এ ব্যাপারে একটু বিশেষ নজর দিতে পারতেন!
একটা কথাই বলা যায়, পরিচালক দেহরক্ষী ছবিটাতে আইটেম গান দিয়েই দর্শকের পয়সা সব উসুল করে দেওয়ার একটা ট্রাই করেছেন মাত্র!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




