মাগো তুই কাঁদছিস
তোর দামাল ছেলের জন্য?
বর্ণমালা আনবে বলে
যে হয়েছিল বন্য৷
বুকে পিঠে বুলেট লেগে
ঝাঁঝরা হল বক্ষ
মায়ের ভাষা আনবে কেড়ে
এ ছিল তার লক্ষ৷
একাত্তরেও তোর ছেলেটি
অস্ত্র নিল তুলে,
জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য
সবই গেল ভূলে৷
তোর ছেলেরই রক্তস্রোতে
পদ্মা মেঘনা ভাসে
ভাষা এল, স্বাধীনতাও
লাল সবুজে হাসে৷
ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে
তোর ছেলেরই ত্যাগ,
তোর ছেলেরই সতেজ দ্রোহে
লাল-সবুজের ফ্ল্যাগ৷
সবাই আজ সুখে আছে
পুত্রকন্যা নিয়ে
শুধু তোর ছেলেটি হারিয়ে গেল
মুক্তি আনতে গিয়ে৷
আজ বেজন্মা বেনিয়াদের
বেজায় বড় সুখ
ভাবতে তোর কষ্ট হয় মা
ভেঙ্গে যায় তোর বুক?
তোর কৃষাণ ছেলে ফলায় ফসল
রোদ বৃষ্টি ঝড়ে,
তারি ছেলে তিলেতিলে
অন্ন কষ্টে মরে৷
বীরাঙ্গনা মুক্তিসেনা
অভাব-দুঃখ-লাজে
পলে পলে ক্ষয়ে মরে,
সকাল-দুপুর সাঁঝে৷
পোশাক শিল্পী যে মেয়েটি
অর্থনীতির ভীত,
ছেঁড়া কাপড় পরেই কাটায়
পৌষ-মাঘের শীত৷
বিসুবিয়াস বুকে মা তোর
মাল্টিকালার কষ্ট,
দূষণ চক্রেও তুই খাঁটি মা
অন্য সবাই নষ্ট৷
আকাশ সমান জ্বালা নিয়েও
তুই মা জেগে থাক
বুকের মধ্যে অগ্নিসূর্য
ঠাঁই জ্বালিয়ে রাখ৷
এক ছেলেকে হারিয়ে পেলি
লক্ষ ছেলের ঝাঁক
তোর বুকেতে সূর্যসেন আর
তিতুমীরকে রাখ৷
তোর বুকেতেই শহীদ মিনার
তোর বুকেতেই ভাষা,
তোর বুকেতেই সবুজ-শ্যামল
স্বপ্ন-সুখের আশা৷
[কবিতাটি লিখেছেন অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টাচার্য, চবি]