ভাতিজা খুব একটা উরাধুরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো, ‘ফারুম নি মানে? ব্যা-ক বেছিয়া দিমু...’
এই হচ্ছে সেই ভাতিজার ‘ব্যাক বেছিয়া দেয়া’ গল্প। ভাতিজার প্রথম গল্প।
জব্বরের চোর ধরা
মুঃ মাঈন উদ্দিন
এক দেশে এক চোর ছিল। চোরটা প্রতিদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুরি করত। এরকম চুরি করতে গিয়ে চোরটা হঠাৎ একদিন ধরা খেয়ে গেল! চোরটা তো ভয়ে অস্থির! তখন পাবলিক তাকে ধরে বললো, ‘আমাদের এ পর্যন্ত যা কিছু চুরি হয়েছে সবই তুই চুরি করেছিস।’ এলাকার পাতি নেতা রতন ভাই বললো, ‘এই জব্বর, একে ধরে রশি দিয়ে বাঁধ।’
চোরের অবস্থা দেখে চোরের এক সাথী ভাই এসে বললো, ‘এই ভায়েরা, আপনারা ওকে এবারের জন্য ছেড়ে দিন।’ জব্বরের বস রতন ভাই বললো, ‘এই জব্বর, একে ধরেও বাঁধ।’ সাথী ভাই মন খারাপ করে বললো, ‘ও ভাই আমি কী অপরাধ করেছি? আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন।’ তখন লোকেরা ধমক দিয়ে বললো, ‘চোপ ব্যাটা, তুই চোরের দাদা, তোকে ছেড়ে দিব না!’
কি আর করা, লোকেরা তাদের বেঁধে রেখে দিলো। তখন তারা দুই সাথী ভাই বসে বসে কাঁদতে লাগলো! কাঁদতে কাঁদতে বেলা গড়িয়ে গেল। হঠাৎ তাদের মাথায় এলো এক বুদ্ধি! এক চোর বললো, ‘এই বেলাল, এক কাজ করতে পারি তো, দাঁত দিয়ে রশিগুলো ছিঁড়ে আমরা পালিয়ে যেতে পারি।’ তখন দুই জনে মিলে খুব কামড়াকামড়ি করে অবশেষে রশিগুলো ছিঁড়ে ফেললো! তারপর তাড়াতাড়ি তারা দুইজন পালিয়ে গেলো। তার পরে রাতের বেলা জব্বর এসে দেখে তারা নাই। তখন সে ভয় পেয়ে রতন ভাইকে এসে বললো, ‘রতন ভাই জানেন, ওরা না রশি ছিঁড়ে পালিয়ে গেছে।’ এ কথা শুনে রেগেমেগে রতন ভাই বললো, ‘এই অভদ্র ছোকরা, আমার বাড়ি থেকে বহিষ্কার হও! তোমাকে আমার চাকরিতে রাখাই ঠিক হয়নি।’ তখন জব্বর খুব দুঃখিত হয়ে রতন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো, ‘ভাই, আমাকে এবারের জন্য ক্ষমা করে দিন।’ রতন ভাই বললো, ‘আমি এক শর্তে মাফ করতে পারি। তুই তাদেরকে দুই দিনের ভিতর খুঁজে বের করতে পারলে ক্ষমা পাবি।’ ‘জ্বি রতন ভাই আমি ওদেরকে দুই দিনের ভিতর খুঁজে বের করব।’
তারপরে সে পরদিন ঘুম থেকে উঠে দুই চোরকে খুঁজতে বের হলো শহরে। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ দেখে একটা মাটির ঘরের ভিতর ঘন্ ঘন্ শব্দ শোনা যাচ্ছে। তখন সে সেখানে ঢুকে দেখে তারা দুই চোর দেখানে চুপে চুপে বিড়ি খাচ্ছে! জব্বর তো দিল এক ধমক! তখন তারা তাকে দেখে বিড়িটা তার গায়ে ছুঁড়ে দিলো। বিড়িটা জব্বরের হাতে পড়লো, সে গরমের চোটে ‘ও বাবা!’ বলে চিক্কুর দিয়ে উঠলো! চোরেরা বললো, ‘আয় বেটা ধরতে সাহস থাকলে, মজা দেখাইয়া দিমু!’ জব্বর রেগে-মেগে বলে, ‘মজা দেখাবি না দেখাবি, তোদেরকে আমি দুই দিনের ভিতর দেখাইয়ে দিব মজা!’
তখন দুই চোর ভারি ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। তারপরের দিন জব্বর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো, হঠাৎ দেখে সেই চোরের দল! জব্বর তাদেরকে তাড়াতাড়ি ধরতে গেল, তারা দুই বন্ধু তাকে দেখে দিল দৌড়। দৌড় দিতে গিয়ে দুই চোর বেখেয়ালে গোবরে পিছলে ‘ছোটাৎ’ করে পড়ে গেল।
তখন জব্বর ওদেরকে দৌড়ে ধরতে গেল। ওরা কোনমতে জব্বরের মুখে এক লাদা গোবর ছুঁড়ে পালিয়ে গেল। জব্বরের মুখে পটাৎ করে একটু গোবর ঢুকে যাওয়ায় সে ভুলে খেয়ে ফেললো! রাতে বাড়ি ফিরে জব্বর ভাবে আর বাকি আছে এক দিন মাত্র! জব্বর তো চিন্তায় পড়ে গেল। তারপর জব্বর খুঁজতে বের হল রাস্তায়। সে খুঁজতে খুঁজতে বহু জায়গায় গেল, কিন্তু কোথাও তাদেরকে পেল না। সে মনে মনে ভাবলো, ‘আয় হায় রে! আমার তো চাকরিটা যাবে আজই!’ তখন সে খুব মন খারাপ করে ঘরে ফিরছিল রতন ভাইয়ের বাড়ির পাশ দিয়ে। হঠাৎ রতন ভাইয়ের গোয়ালে কিসের শব্দ শোনা গেল। জব্বর আস্তে উঁকি মেরে দেখে তারা দুই চোর রতন ভাইয়ের প্রিয় লাল গাভীটা চুরি করার চেষ্টা করছে! জব্বর একবার ভাবলো ভিতরে যাবে কিন্তু তাদের হাতে ছুরি দেখে ভিতরে যাবার সাহস পেল না।
তার পরে জব্বর ভাবলো, ‘নাহ, এদেরকে চালাকি করে ধরতে হবে।’ তখন সে গোয়ালের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে গোয়াল ঘরের ভিতর ধোঁয়া ঢুকাতে লাগলো আর চিৎকার করে বলতে লাগলো, ‘আগুন! আগুন!’ তখন চারদিক থেকে লোকেরা এসে জমা হল। তারা বললো, ‘কী জব্বর, কী হয়েছে?’ রতন ভাই বললো, ‘এই গর্দভ, আজ তো তোর শেষ দিন। তুই চোর খোঁজা বাদ দিয়ে এখানে কি ঘোড়ার ঘাস কাটছিস?’ জব্বর এক গাল হেসে বললো, ‘রতন ভাই, চোর দেখতে চান? তবে দেখেন..’ এই বলে জব্বর গোয়াল ঘরের ঘরের দরজা খুলে দিল। তখন সবাই অবাক হয়ে দেখে ভিতরে সেই চোর দুইটা এককোণে বসে ভয়ে চিঁ-চিঁ করে কাঁপছে! তখন সবাই মিলে তাদেরকে চ্যাং দোলা করে এনে রাম ধোলাই দিল। রতন ভাই বললো, ‘জব্বর, আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম। আসলেই তুই একটা কাজের লোক।’ তারপর রতন ভাই তাকে একটি সোনার মুদ্রা দিল। তখন জব্বর খুশির চোটে সোনার মুদ্রা হাতে নিয়ে রতন ভাইকে সালাম দিয়ে বললো, ‘রতন ভাই, সবই আল্লাহর দয়া।’

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




