somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইনউদ্দিনের গল্প.......

১০ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইন উদ্দিন আমার এক রকম দূঃসম্পর্কের ভাই হয়। তবে আমি তাকে ডাকি ভাতিজা বলে। চালচলনে বড় ঘাঘু হলেও লেখালেখিতে এখনও ভারী শিশুতোষ। একদিন বিকেলবেলা আমি তাকে ডেকেকে বললাম, ‘বাথিঝা, হাইরবিনি এককানা গইলফো লিকতে?’
ভাতিজা খুব একটা উরাধুরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো, ‘ফারুম নি মানে? ব্যা-ক বেছিয়া দিমু...’
এই হচ্ছে সেই ভাতিজার ‘ব্যাক বেছিয়া দেয়া’ গল্প। ভাতিজার প্রথম গল্প।





জব্বরের চোর ধরা
মুঃ মাঈন উদ্দিন

এক দেশে এক চোর ছিল। চোরটা প্রতিদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুরি করত। এরকম চুরি করতে গিয়ে চোরটা হঠাৎ একদিন ধরা খেয়ে গেল! চোরটা তো ভয়ে অস্থির! তখন পাবলিক তাকে ধরে বললো, ‘আমাদের এ পর্যন্ত যা কিছু চুরি হয়েছে সবই তুই চুরি করেছিস।’ এলাকার পাতি নেতা রতন ভাই বললো, ‘এই জব্বর, একে ধরে রশি দিয়ে বাঁধ।’
চোরের অবস্থা দেখে চোরের এক সাথী ভাই এসে বললো, ‘এই ভায়েরা, আপনারা ওকে এবারের জন্য ছেড়ে দিন।’ জব্বরের বস রতন ভাই বললো, ‘এই জব্বর, একে ধরেও বাঁধ।’ সাথী ভাই মন খারাপ করে বললো, ‘ও ভাই আমি কী অপরাধ করেছি? আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন।’ তখন লোকেরা ধমক দিয়ে বললো, ‘চোপ ব্যাটা, তুই চোরের দাদা, তোকে ছেড়ে দিব না!’
কি আর করা, লোকেরা তাদের বেঁধে রেখে দিলো। তখন তারা দুই সাথী ভাই বসে বসে কাঁদতে লাগলো! কাঁদতে কাঁদতে বেলা গড়িয়ে গেল। হঠাৎ তাদের মাথায় এলো এক বুদ্ধি! এক চোর বললো, ‘এই বেলাল, এক কাজ করতে পারি তো, দাঁত দিয়ে রশিগুলো ছিঁড়ে আমরা পালিয়ে যেতে পারি।’ তখন দুই জনে মিলে খুব কামড়াকামড়ি করে অবশেষে রশিগুলো ছিঁড়ে ফেললো! তারপর তাড়াতাড়ি তারা দুইজন পালিয়ে গেলো। তার পরে রাতের বেলা জব্বর এসে দেখে তারা নাই। তখন সে ভয় পেয়ে রতন ভাইকে এসে বললো, ‘রতন ভাই জানেন, ওরা না রশি ছিঁড়ে পালিয়ে গেছে।’ এ কথা শুনে রেগেমেগে রতন ভাই বললো, ‘এই অভদ্র ছোকরা, আমার বাড়ি থেকে বহিষ্কার হও! তোমাকে আমার চাকরিতে রাখাই ঠিক হয়নি।’ তখন জব্বর খুব দুঃখিত হয়ে রতন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো, ‘ভাই, আমাকে এবারের জন্য ক্ষমা করে দিন।’ রতন ভাই বললো, ‘আমি এক শর্তে মাফ করতে পারি। তুই তাদেরকে দুই দিনের ভিতর খুঁজে বের করতে পারলে ক্ষমা পাবি।’ ‘জ্বি রতন ভাই আমি ওদেরকে দুই দিনের ভিতর খুঁজে বের করব।’
তারপরে সে পরদিন ঘুম থেকে উঠে দুই চোরকে খুঁজতে বের হলো শহরে। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ দেখে একটা মাটির ঘরের ভিতর ঘন্ ঘন্ শব্দ শোনা যাচ্ছে। তখন সে সেখানে ঢুকে দেখে তারা দুই চোর দেখানে চুপে চুপে বিড়ি খাচ্ছে! জব্বর তো দিল এক ধমক! তখন তারা তাকে দেখে বিড়িটা তার গায়ে ছুঁড়ে দিলো। বিড়িটা জব্বরের হাতে পড়লো, সে গরমের চোটে ‘ও বাবা!’ বলে চিক্কুর দিয়ে উঠলো! চোরেরা বললো, ‘আয় বেটা ধরতে সাহস থাকলে, মজা দেখাইয়া দিমু!’ জব্বর রেগে-মেগে বলে, ‘মজা দেখাবি না দেখাবি, তোদেরকে আমি দুই দিনের ভিতর দেখাইয়ে দিব মজা!’
তখন দুই চোর ভারি ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। তারপরের দিন জব্বর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো, হঠাৎ দেখে সেই চোরের দল! জব্বর তাদেরকে তাড়াতাড়ি ধরতে গেল, তারা দুই বন্ধু তাকে দেখে দিল দৌড়। দৌড় দিতে গিয়ে দুই চোর বেখেয়ালে গোবরে পিছলে ‘ছোটাৎ’ করে পড়ে গেল।




তখন জব্বর ওদেরকে দৌড়ে ধরতে গেল। ওরা কোনমতে জব্বরের মুখে এক লাদা গোবর ছুঁড়ে পালিয়ে গেল। জব্বরের মুখে পটাৎ করে একটু গোবর ঢুকে যাওয়ায় সে ভুলে খেয়ে ফেললো! রাতে বাড়ি ফিরে জব্বর ভাবে আর বাকি আছে এক দিন মাত্র! জব্বর তো চিন্তায় পড়ে গেল। তারপর জব্বর খুঁজতে বের হল রাস্তায়। সে খুঁজতে খুঁজতে বহু জায়গায় গেল, কিন্তু কোথাও তাদেরকে পেল না। সে মনে মনে ভাবলো, ‘আয় হায় রে! আমার তো চাকরিটা যাবে আজই!’ তখন সে খুব মন খারাপ করে ঘরে ফিরছিল রতন ভাইয়ের বাড়ির পাশ দিয়ে। হঠাৎ রতন ভাইয়ের গোয়ালে কিসের শব্দ শোনা গেল। জব্বর আস্তে উঁকি মেরে দেখে তারা দুই চোর রতন ভাইয়ের প্রিয় লাল গাভীটা চুরি করার চেষ্টা করছে! জব্বর একবার ভাবলো ভিতরে যাবে কিন্তু তাদের হাতে ছুরি দেখে ভিতরে যাবার সাহস পেল না।
তার পরে জব্বর ভাবলো, ‘নাহ, এদেরকে চালাকি করে ধরতে হবে।’ তখন সে গোয়ালের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে গোয়াল ঘরের ভিতর ধোঁয়া ঢুকাতে লাগলো আর চিৎকার করে বলতে লাগলো, ‘আগুন! আগুন!’ তখন চারদিক থেকে লোকেরা এসে জমা হল। তারা বললো, ‘কী জব্বর, কী হয়েছে?’ রতন ভাই বললো, ‘এই গর্দভ, আজ তো তোর শেষ দিন। তুই চোর খোঁজা বাদ দিয়ে এখানে কি ঘোড়ার ঘাস কাটছিস?’ জব্বর এক গাল হেসে বললো, ‘রতন ভাই, চোর দেখতে চান? তবে দেখেন..’ এই বলে জব্বর গোয়াল ঘরের ঘরের দরজা খুলে দিল। তখন সবাই অবাক হয়ে দেখে ভিতরে সেই চোর দুইটা এককোণে বসে ভয়ে চিঁ-চিঁ করে কাঁপছে! তখন সবাই মিলে তাদেরকে চ্যাং দোলা করে এনে রাম ধোলাই দিল। রতন ভাই বললো, ‘জব্বর, আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম। আসলেই তুই একটা কাজের লোক।’ তারপর রতন ভাই তাকে একটি সোনার মুদ্রা দিল। তখন জব্বর খুশির চোটে সোনার মুদ্রা হাতে নিয়ে রতন ভাইকে সালাম দিয়ে বললো, ‘রতন ভাই, সবই আল্লাহর দয়া।’






৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×