somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাখ টাকার গল্প

০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাজাহান সাহেব একজন মোটামুটি খ্যাতিমান রাজনৈতিক নেতা। তিনি দল করেন এবিসিডি পার্টির। তার দল ক্ষমতায় নেই, তবে তাই বলে ঠিক বিরোধী দলও বলা যায় না। কারণ দেশে চলছে সামরিক শাসন। কর্নেল লুটুপুটু আর তার চ্যালা-চামুন্ডাদের অত্যাচারে দেশবাসী মোটামুটি অতিষ্ঠ! কর্নেল লুটুপুটু মানুষটা দেখতেও কেমন পুতুলের মত। টেনেটুনে চার হাত লম্বা, ইয়া বড় মোটা ভুড়ি, মাথাজুড়ে চকচকে টাক আর নাকের আগায় মিশমিশে কাল গোঁফ। দেখেশুনে মোটেও সেরকম কেউকেটা গোছের কিছু মনে হয়না, কিন্তু যখন কথা বলেন, বাপরে বাপ! জলদগম্ভীর, গা হিমহিম করা অদ্ভুত হেঁড়ে গলা! সেই গলাতেই চেঁচাতে চেঁচাতে দেশবাসীকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছেন। বিদেশে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে তার নামে যে কয় হাজার কোটি টাকা আছে, তা আল্লাহ মালুম। দুই মাস পর পর একটা করে মস্ত মস্ত প্রকল্প নেন, আর তা থেকে অতিকায় অঙ্কের টাকা মেরে পুরো প্রকল্পটা ভেস্তে দেন! বাধা দেয়ারও কেউ নেই। যেই নেতাদের তাড়িয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন তারা সব বিদেশে জায়গাজমি কিনে নাতিপুতি নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে! আর দেশের কথা তো-চিঁ চিঁ! এই যখন অবস্থা, তখন শাজাহান ভাই ঠিক করলেন একটা কিছু করা দরকার। একটা আন্দোলন-টান্দোলন করে ফেললে কেমন হয়? দলের নেতাদের সামনে কথাটা তুলে তিনি চুপসে গেলেন। সবাই তার দিকে এমনভাবে চোখ ছানাবড়া করে তাকাল যেন তিনি সূর্যে ফ্ল্যাটবাড়ি বানানোর মত অসম্ভব কিছু বলছেন! কিন্তু শাজাহান ভাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধু সেই একাত্তর সালে অনভিজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পুরো পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিলেন আর এটা তো ডিজিটাল যুগ! শাজাহান ভাই কিছুটা সাহস পান বুকে। একটা আন্দোলন করতে হবে। সমস্যা হল তার বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতা খুব বেশি ভাল না। তাতে সমস্যা নেই, পাবলিক তো তার সাথে আছে, তো আর চিন্তা কি? শাজাহান ভাই গেলেন বক্তৃতা দিতে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন তার হাঁটুজোড়া ঠকঠক করে কাঁপছে! অনেক সাহস করে চোখমুখ খিঁচে তিনি গলার সবটুকু জোর ঢেলে বললেন, ‘প্রিয় ভাই স-ও-ব!!!’ মনে হল ময়দানে ঠিক যেন একটা বোমা পড়লো। পাবলিক সব কানে হাত দিয়ে পালাচ্ছে। শাজাহান সাহেব খুব অবাক হয়ে এই দৃশ্য দেখতে লাগলেন। একটু পর তিনি আরো অবাক হয়ে গেলেন হাতের মধ্যে হাতকড়া দেখে। লুটুপুটুর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। কারন??—“শব্দদূষণ”!!!

শাজাহান সাহেব অবশ্য দুই দিন পরই হাজত থেকে ছাড়া পেলেন। দুপুরবেলা দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে লক্ষ্য করলেন সবাই কেমন যেন বিদঘুটে রকম হাসি-হাসি মুখ করে তার দিকে চেয়ে আছে। ভাবখানা এমন-‘কি বলেছিলাম না!’ তিনি শুকনো মুখ করে অফিসে ঘুরতে লাগলেন।

সেদিন রাতে বাসায় এসে তিনি ঠিক করলেন এখন থেকে তিনি অনলাইনে আন্দোলন শুরু করবেন। দলের নামে একটা ফেসবুক গ্রুপ খুললেন। কিছুদিন পরই তিনি বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করলেন তার ফেসবুকে অনুসারী সংখ্যা প্রায় তিন লাখের কাছাকাছি! এত বিপুল ভক্তের কারণ কি অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি দেখলেন, এরা প্রায় সবাই তরুণ ছেলেমেয়ে। ঘরে বসে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করলেও রাজনীতি নিয়ে কিন্তু এরা কোন অংশে কম চিন্তা-ভাবনা করে না। শাজাহান ভাই মানুষটা একটু বোকাসোকা হলেও তারা জানে তার ভিতরটা দেশের প্রতি কত মমতায় পূর্ণ। শাজাহান ভাইয়ের চোখে গভীর আবেগে পানি এসে গেল। তিনি ইউটিউবে ছোটোখাট ভাষণ দিতে শুরু করলেন। যথারীতি এখানেও বাজিমাত! অন্তর্জালে শাজাহান ভাইয়ের এক বিরাট পরিবার গড়ে উঠলো। এবিসিডি পার্টি পরিণত হল তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে কাঙ্খিত রাজনৈতিক দলে। এবার অন্তর্জালের পাশাপাশি তিনি বাস্তবেও মাঠে নামলেন। বিভিন্ন স্থানে সামরিক সরকারের অন্যায় আচরণ সম্পর্কে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন। দলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীকে পুলিশ রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে গেল। কিন্তু শাজাহান সাহেবের আন্দোলন চললই। মানুষের বুকে সাহসের সঞ্চার করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। এ কাজে যত বাধাই আসুক না কেন।
কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার ঘটল তখন যখন কর্নেল লুটুপুটু এবিসিডি পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে দিলেন! পুরো দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ল। সামরিক বাহিনী শয়ে শয়ে এবিসিডি পার্টির লোকজনকে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। শাজাহান ভাই আত্মগোপনে গেলেন। পলাতক স্থান থেকেই তিনি ফেসবুক, ইউটিউবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে লাগলেন। দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তাল হতে লাগলো। কর্নেল লুটুপুটু বুঝলেন শাজাহান সাহেবকে না ধরতে পারলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। ওই লোকটাই যত প্রেরণার উতস। লুটুপুটু তার অধীনস্থ সামরিক অফিসারদের নির্দেশ যেখান থেকে সম্ভব শাজাহান সাহেবকে ধরে নিয়ে আসতে। এই লোককে সরিয়ে দিতে হবে।
শাজাহান সাহেব এত ধুরন্ধর সামরিক বাহিনীর সাথেও কিছুদিন চোর-পুলিশ খেলা চালিয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি জানতেন সামরিক বাহিনী তাকে ঠিক ধরে ফেলবে। তিনি চাইলে বিদেশ চলে যেতে পারেন কিন্তু দেশবাসীকে এ অবস্থায় রেখে তার পক্ষে বিদেশে পলায়ন অসম্ভব। মৃত্যুকে তার ভয় নেই। তিনি প্রচারণা চালিয়ে যেতে লাগলেন। এরকমই এক দিনের কথা। শাজাহান সাহেব বুড়িগঙ্গার তীরে এক গোপন স্থানে কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন। এমন সময় তিনি ঘরের বাইরে অনেকগুলো বুটজুতার আওয়াজ পেলেন। পরক্ষনেই কেউ ধড়াম করে প্রচন্ড বেগে তার ঘরের দরজায় লাথি মারল। আর্মির ট্রেনিং পাওয়া গোদা পায়ের লাথি খেয়ে বুড়ো দরজা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়লো। শাজাহান সাহেবের মনে চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর্মিরা তাকে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলবে। এ কথা এখনি সবাইকে জানানোর দরকার। আর্মির লোকেরা তার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। শাজাহান সাহেব কাঁপাকাঁপা হাতে ফেসবুকে লিখতে শুরু করলেন, ‘A…’ সময় যেন পাগলা ঘোড়ার মত লাফিয়ে লাফিয়ে পার হচ্ছে। শাজাহান সাহেবের চিবুক বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। তিনি আরেকটা অক্ষর লিখলেন-Arr…. আর্মির লোকেরা এখন ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। একজন তার দিকে এগিয়ে আসছে। শাজাহান সাহেবের হ্রৃতপিন্ড একেবারে লাফিয়ে উঠলো! হায় খোদা! তুমি সাহায্য কর! তিনি একটা ঘোরের মধ্যেই টের পেলেন আর্মির লোকেরা তাকে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি কিভাবে যে ‘Arrest’ শব্দটি লিখে enter চাপলেন বলতে পারবেন না। একজন অফিসার মনে হয় ব্যাপারটা বুঝে ফেলল। সে দৌড়ে এসে এক লাথি মেরে কম্পিউটারটা মাটিতে ফেলে দিল। কম্পিউটারের স্ক্রিন ফেটে ভেতর থেকে একটু ধোঁয়া মত বের হল। শাজাহান সাহেব বিস্ফোরিত চোখে সেদিকে চেয়ে ভাবতে লাগলেন, বার্তাটা পৌঁছেছে তো?
হ্যা, বার্তাটা পৌঁছেছে। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে থেকে লাখো মানুষ দেখেছে শাজাহান সাহেবের সেই বার্তা। তাতক্ষনিকভাবে রাস্তায় নেমেছে মানুষের ঢল। বিক্ষুব্ধ মানুষের স্রোত এগিয়ে আসছে সামরিক বাসভবনের দিকে। কর্নেল লুটুপুটু তার বিশাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে কোটী কোটী মানুষের স্রোত দেখে খাবি খেলেন। এত মানুষ কিভাবে আসে? তিনি চোখে ভুল দেখছেন না তো! শাজাহানকে তার লোক ধরেছে এটা মানুষ এত তাড়াতাড়ি জানল কেমন করে? তিনি বুঝলেন তার সময় শেষ হয়ে এসেছে। আজ জনতার কাছে তার ক্ষমা নেই। তার পুরো ঘরটা অত্যন্ত দামী আসবাবপত্রে সাজানো। সেদিকে তাকিয়ে হঠাত তার মনে হল, এত টাকা-পয়সা, এত প্রভাব-প্রতিপত্তি কি কাজে আসল? সব শূন্য! শাজাহানের এক শব্দের জোরে তার পুরো সাম্রাজ্য যেন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়লো! এক শব্দের অভ্যুত্থানে!!!
ততক্ষণে বাড়ির চারদিক ঘিরে ফেলেছে জনতার ঢল......







৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×