somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিত্রনায়ক অনন্তের ইংলিশ : কিছু কথা লিখেছেনঃ নিঝুম মজুমদার

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিত্রনায়ক অনন্তের ইংলিশ : কিছু কথা
লিখেছেনঃ নিঝুম মজুমদার

অনন্ত জলিলের একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে। এর আগে আরেকটা ঈদের অনুষ্ঠানে হাস্যকর উচ্চারনে ইংরেজী বলে আমাদের মন কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। তাকে নিয়ে ব্যাক্তিগতভাবে আমিও বেশ হাসি ঠাট্টা করেছি। তার কথা বলা, উচ্চারণ, আর ইউ পোম গানা, ইউ ইট বাংলাদেশী ফুড, এই জাতীয় কথা হাজার ঝামেলার মধ্যে বেশ আনন্দ দিয়েছে বলা বাহুল্য। গত দুইদিন ধরে অনন্ত সাহেবের দুইটা সিনেমা দেখলাম। একটি হচ্ছে খোঁজ-দা সার্চ এবং অন্যটি হচ্ছে দা স্পীড। সিনেমা দেখেছি, গভীর রাতে প্রাণ খুলে হেসেছি, এই লোকটার পিন্ডি চটকে খানিকটা স্বর্গসুখ লাভ করেছি। কিন্তু ঘটনা ঘটলো গত শনিবার। ব্যাপারটা চোখ খুলে দেবার মত, এবং পুরো ঘটনাটি আমাকে আসলে লজ্জাই দিয়েছে।

গত শনিবারে হার্ডফোর্ডশায়ারে গিয়েছিলাম আমার এক ভাতিজার বিয়ে খেতে। ভাতিজা ব্রিটিশ বাঙালী, শিক্ষিত এক যুবক। তার বিয়ে হচ্ছে এক ইংলিশ মেয়ের সাথে। স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহ ছিলো দেখবার যে বাংলাদেশী ছেলে এবং ইংলিশ মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানটা কেমন হয়। যাকে বলে বিরাট আয়োজন। ফাইভ স্টার হোটেলে এ এক ভয়াবহ অর্থ ব্যায়ের অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিতদের দুই অংশে ভাগ করে ফেলা যায়। এক অংশ ইংলিশ আরেক অংশ বাংলাদেশী। এই বাংলাদেশী অংশে আবার রয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশী যারা জন্মের অনেক পরে এখানে এসে সিটিজেন হয়েছেন, এখানে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ বাংলাদেশী। আর ৪ থেকে ৫ জন ছিলেন পাকিস্তানী, আফ্রিকান এবং ভারতীয়।

ডিনার পর্ব শুরু হোলো বিরাট হলঘরে। হলঘরের এক পাশে ৫ জন মেয়ে বিরাট বিরাট ভায়োলিন আর সামনে নোট নিয়ে বিভিন্ন সুর বাজিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে মন দিয়ে শুনিনি। একটু ভালো করে শুনে প্রথম গানটার সুর ধরে ফেললাম। কাল হোনা হো সিনেমাটির মিউজিক। এরপর যত শুনি তত বেশী চমকে যাই। একে একে বেজে উঠলো হিন্দি সিনেমার সব পরিচিত গান গুলো। এদেশের মেয়েদের হাত ধরে ধরে বেজে উঠলো হিন্দি ছায়াছবির সুর ঝংকার। মনটা এত খারাপ হলো, বলার মত না। মনে হচ্ছিলো, একটা বাংলা গানের সুরও কি হতে পারতোনা এই বিয়েতে? আসলে বাংলা গানের চেয়েও এই ছেলে মেয়েরা বেড়ে উঠেছে হিন্দি গানের প্রভাবে, সারাটি জীবন ইংল্যান্ডে থেকেও।

ঠিক তখনই আমার মনে পড়লো নায়ক অনন্তের কথা। এই ভঙ্গুর ও সম্পূর্নভাবে ঝুঁকিপূর্ণ একটা ইন্ড্রাস্ট্রিতে এই ছেলেটি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। খরচ সাশ্রয় করেছে নিজে ও স্ত্রীকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে, অপরিচিত ছেলে মেয়েদের কাস্ট করে। মন দিয়েছে ভালো প্রিন্ট, ভালো একশন তৈরীর দিকে। নিজের প্রতিই এক ধরনের খারাপ লাগা শুরু হয়ে গেলো। কত মক করেছি অনন্তকে নিয়ে। আর "ইউ পোম গানা, ইউ ইত বাংলাদেশী ফুড" বলে ফেসবুকে কত ইয়ার্কি করেছি। অথচ একবারও ভাবিনি যে, এই ছেলেটি বাংলাদেশি সিনেমাকে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেবার জন্য এই রাস্তায় নেমেছে। অথচ আমরাই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে রক্তাক্ত করেছি। সে নিজেই স্বীকার করেছে তার উচ্চারণ, অভিনয় খারাপ, এই দিকে তাকে ভালো করতে হবে। তারপরেও আমরা আসলে তাকে ছাড় দেই নি। আমরা চাই এখন, এই মুহুর্তেই। আমরা কি এই ছেলেটিকে উৎসাহ দিয়ে পারিনা তার থেকে ভালো কাজটি, তার সর্বশ্রেষ্ঠ পারফরমেন্সটি বের করে আনতে? হিন্দী ছবি আজকের এই অবস্থানে কি একদিনে এসেছে?

আমরা আসলে এমনটাই করি সব সময়। নিজেদেরকেই নিজেরা মারি, নিজেদেরকেই নিজেরা খোঁচাই, হত্যা করি। একজন ভারতীয়কেও আমি দেখিনি যে তারা তাদের হাস্যকর অভিনেতা (যেমন গোবিন্দ), অভিনেত্রীদের নিয়ে এইভাবে সারাদিন ফেসবুকে লেগে থাকে? এমনকি বুয়েটের আন্দোলনের মত এত জরুরী একটি বিষয়েও আমরা অনন্তকে মক করতে ছাড়িনি, বুলি (bully) করতে ছাড়িনি। আমরা এতই মারাত্নক এক জাতি। আমাদের আর কোনো শত্রুর দরকার নেই। নিজেরাই আমরা নিজেদের পিন্ডি চটকাবার জন্য যথেষ্ঠ।

আর এই সুযোগেই আমাদের বাচ্চাদের মনে ঢুকেছে "ডোরেমন, ছাম্মাক ছাল্লো, মাই নেম ইজ শীলা" আর যতসব গারবেজ। কে জানে একদিন আমাদের মৃত দেহ সৎকারের সময় বেজে উঠবে করুন কোনো হিন্দি ছবির গান। সেদিন আর খুব বেশী দূরে নয়।

কৃতজ্ঞতা - ফেইস বুক - আমাদের বাংলাদেশ পেইজ.।.।.।।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×