somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গল্প ও আমাদের ধর্মে মতি...

২৯ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটি গল্প ও আমাদের ধর্মে মতি...

এক দেশের এক মাথামোটা রাজা আর তার অসহায় মন্ত্রী। রাজার চাপে মন্ত্রী বেচারা দৌড়ের ওপর থাকেন। সত্য কথা বলার আগে আগা-পাশ-তলা না ভাবলে গর্দান যাবার সমূহ সম্ভাবনা। এমনি একদিন মন্ত্রীর মুখ ফসকে বের হয়ে গেল যে রাজ্যের সব মানুষই মিথ্যেবাদী। আর যায় কোথায়! রাজা মন্ত্রীকে ক্যাঁক করে ধরে বসলো, 'তুমি আমাকেও মিথ্যেবাদী বললে?' মন্ত্রী বুঝলেন যে তার আয়ু শেষ। তাই শেষ সময়ে তার সাহস বেড়ে গেল, 'জ্বী মহারাজ, আপনাকে সহই বললাম'। রাজা মন্ত্রীর সাহস দেখে ঘাবরে গেল। তার গর্দান নেয়ার আগে একটু খেলিয়ে নিইয়ার লোভও সামলাতে পারলো না, 'ঠিক আছে, এক মাস সময় দিলাম, তোমার কথা প্রমান করো।

ইতোঃমধ্যে রাজ বাড়ীর পাশের মাঠে এক হুজুর কেবলা এসে আস্তানা গেড়ে বসেছেন। এমনি তার ক্ষমতা যে যে কোন মানুষকেই নাকি আল্লাহর দর্শন করাতে পারে। হুজুরের কেরামতি দেখতে মানুষজন দলে দলে হুজুরের আস্তানায় গিয়ে ভীড় করতে লাগলো। সবাই আল্লাহর দর্শন চায়। হুজুর বলেন যে সবাইকে আল্লাহ দর্শন দেন না। যারা আল্লাহর দর্শন চায়, হুজুর তাদের সবাইকে তার তাঁবুর ভেতরে আর একটি তাঁবুর মধ্যে পাঠিয়ে দেন, আল্লাহ সেখানেই দর্শন দেন। মানুষ জন আল্লাহর দেখা পেয়ে খুব খুশী। বাবার মহিমা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লো। আর মাঠ পেড়িয়ে রাজবাড়ীতেও চলে এলো সেই খবর। রানী গেল, রাজপূত্র গেল, রাজকন্যা গেল, পাত্র-মিত্র সবাই গিয়ে আল্লার দেখা পেয়ে ধন্য হয়ে ফিরে এলো। এই যখন অবস্থা, তখন রাজাই বা আর বসে থাকেন কি করে। রাজ্যময় লোক আল্লাহকে দেখে এলো আর রাজা দেখবে না! শেষে রাজাও তার পাইক পেয়াদা সহ হুজুরের দরবারে গিয়ে হাজির। হুজুরের লোক তাকে মহা সমাদরে হুজুরের সামনে নিয়ে গেল। রাজা অবাক হয়ে দেখে যে কিশোর বয়সী হুজুর, দাড়ি তো দূরের কথা, গোফের রেখাও গজায় নি এখনো। রাজা আল্লাহর দর্শন লাভে আগ্রহী শুনে পাশের তাঁবু দেখিয়ে দিলেন হুজুর। রাজা তাঁবুতে প্রবেশ করতে যাবে, এমন সময় হুজুর অমায়িক ও লাজুক স্বরে আস্তে করে বললেন যে অপবিত্র আর জারজ সন্তানেরা আল্লাহকে দেখতে পায় না। রাজার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ছোটা কাল থেকেই সে একটা গুজব শুনে আসছে, এবার তার প্রমান পেতে যাচ্ছে সে। একবার ভাবে আল্লাহ দর্শনের দরকার নেই, কিন্তু পরক্ষনেই ভয় পেয়েছে বলে কথা রটে গেলে তো রেপুটাশান লাল হয়ে যাবে। তাই চোখ বন্ধ করে দুরু দুরু বুকে তাম্বুস্থ তাম্বুতে প্রবেশ করেই বুঝে গেলেন যে গুজবটা সত্য। কিন্তু এই কথা তো কাউকে জানানো যায় না। রাজা বেশ কিছুক্ষন পর তাঁবু থেকে বেড়িয়ে এলেন। হুজুর তাকে আল্লাহদর্শনের কথা জিজ্ঞেস করলেন, রাজার পাত্র মিত্ররা সবাই আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে! রাজা তার আল্লাহদর্শনের নূরানী বর্ণনা দিলেন সবিস্তারে। সবাই আপ্লুত হলো রাজার রাজকীয় অভিজ্ঞতা শুনে(যদিও সবাই জানেন যে কেওই কিছু দেখে নি)।

রাজার আল্লাহ দর্শনের দিন কয়েক পর হুজুর তার আস্তানা গুটিয়ে চলে গেলেন নতুন কোন ঠিকানায়। রাজ্যে আবার স্বভাবিক জীবন ফিরে এলো। আর রাজারও মনে পড়লো মন্ত্রীর কথা। আর মাত্র দু'দিন সময় আছে মন্ত্রীর হাতে তার কথার প্রমান দেয়ার।

নির্দিষ্ট দিনে সকালে সভা বসার পর মন্ত্রী দরবারে হাজির। রাজা দেখলো মন্ত্রীর হাত খালি। রাজা মনে মনে মন্ত্রীর গর্দানের কথা ভেবে উল্লাসিত হলো। মন্ত্রী কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা রাজার সামনে গিয়ে দাড়ালেন, 'মহারাজ, প্রমান দেয়ার আগে আমি কি আপনার সাথে একান্তে কথা বলতে পারি?' রাজা মন্ত্রীর জীবনের শেষ ইচ্ছে ভেবে তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করলো, মন্ত্রীকে নিয়ে সে অন্য একটি কক্ষে এলো।

ওদিকে হয়েছিল কি, মন্ত্রী রাজার কাছ থেকে এক মাসের সমন নিয়ে ভগ্ন মনোরথে বাড়ী এলেন। মন্ত্রী কন্যা বাবার এহেন দশা দেখে জিজ্ঞেস করলো কী ব্যাপার? মন্ত্রী খুলে বললেন কী ব্যাপার। কণ্যা খুব বুদ্ধিমতি, বলে 'এটা আর এমন কী কঠিন কাজ। তুমি বাবা এক মাস ঘরে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও আমি তোমার প্রমান জোগার করে দিচ্ছি'। মন্ত্রী কন্যা কিশোর বয়সী হুজুর কেবলা সেজে রাজ বাড়ীর মাঠের ধারে আস্তানা গেড়ে বসলো তার পর দিনই।

একান্তে রাজা মন্ত্রীর তার কথার স্বপক্ষের প্রমান শুনে থ। মাথা মোটা রাজা মাথা দোলাতে দোলাতে বুঝলেন যে মন্ত্রীর কথাই ঠিক। আসলেই দেশের সব লোক মিথ্যেবাদী। মন্ত্রীকে আলিঙ্গন করে আবার রাজ সভায় ফিরতে ফিরতে অনেক ভাব নিয়ে চোখ মুখ কুচকে মহাজ্ঞানীর মতো গম্ভীর স্বরে বলে, 'তবে সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার কী জান উজির, আমি কিন্তু সেদিন সত্যিই আল্লাহকে দেখেছিলাম। কী নূরানী তার সেই সফেদ সুরত...'। মন্ত্রী মূর্খ রাজার কথা শুনে মুচকি হাসেন কেবল, কিছু বলেন না। যা বোঝার বুঝে গিয়েছেন তিনি।

৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×