আমি সাধারণত ঈদের আগের দিন ভোর রাতে পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। এইবারও তাই হয়েছে। ঢাকা ফিরে ঢাকার অবস্থা দেখে ঢাকার জন্য মায়া হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে বৃষ্টির জন্য আহাজারি করে করে এখন আশানুরূপ বৃষ্টি হচ্ছে, তবে এই বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকা শহরের সড়ক কাঁদা পানিতে সয়লাব অবস্থা! আর সেই কবে থেকে দেখছি সমস্ত ঢাকা শহরে সড়ক মেরামত ও কি কি কাজ হচ্ছে। যার কারণে ঢাকার রাস্তার অবস্থা মনে হয় না আগামী দুই এক বছরে কোনো কূল কিনারা পাবে। অথবা এই রাস্তা মেরামতের কাজ হয়তো কোনোদিন কোনোকালেই আর শেষ হবে না।
শিরোনাম নিয়ে প্রসঙ্গে আসি। গত কয়েক বছরে কাঁচা বাজারের বেশ কিছু কেলেংকারী দেখার সুযোগ হয়েছে। যেমন: - পেঁয়াজ কেলেংকারী, গোল আলু কেলেংকারী, করোনার কারণে আদা কেলেংকারী - করোনা লকডাউন সময়ে মানুষ বাজারের ব্যাগ ভরে কিলো কিলো আদা কিনেছেন। আদা পানি, আদা জুস, আদা চা, আদা নুডুলস, আদা বিরিয়ানী সহ এমনি এমনি লবন মেখে আদা খেয়েছেন! উপকার পেয়ে থাকলে ভালো, উপকার না পেয়ে থাকলেও কিছু বলার নেই, এটি এখন অতীত। আদার দাম খুব সম্ভব ৪০০-৪৫০ টাকা কিলোগ্রাম হয়েছিলো। মনকে শান্তনা দেওয়া যায় এই কারণে যে, করোনা কালীন সময়ে গরম পানি, গরম চা, আদা চা খাওয়ার প্রয়োজন ছিলো। চিকিৎসকগণ তেমন পরামর্শই দিতেন।
পেঁয়াজের বিষয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। আমরা বাংলাদেশী ভাত না খেয়ে থাকতে পারবো। কিন্তু পেঁয়াজ কিছু কম বেশী না খেয়ে থাকতে পারবো না, মনে হয়। পেঁয়াজু, পেঁয়াজের বড়া, পেঁয়াজের ভূনা, দো পেঁয়াজা, মাছ মাংস মোরগা মোসাল্লাম, কাবাব, পেঁয়াজের সালাদ, পোলাও ভাত বিরিয়ানীর সাথে পেঁয়াজে কামড় দিতে হবে। বেগুনী, সিঙ্গারা, সমুচা, ডাল পুরি, কিমা পুরি, মোগলাই, আলুর চপ, ডিম চপ, চটপটি, ফুসকা করতেও পেঁয়াজ দিতে হয়। তারপরও এইসব তৈলে ভাজা খাবার খেতে সাথে অতিরিক্ত কাঁচা পেয়াজ নিতে দেখা যায়। এক কামড় সিঙ্গারাতে আর এক কামড় পেঁয়াজে! - শেষ কামড় বাইপাস সার্জারি।
কিন্তু কাঁচা বাজারে কাঁচা মরিচ কেলেংকারী কিভাবে হলো সঠিক বুঝতে পারছিনা বা কিছুটা বুঝতে চেষ্টা করছি। জেট প্লেনের গতিকেও হার মানিয়েছে কাঁচা মরিচের দাম! রকেটের গতি কতো? কাঁচা বাজার এলাকা বিশেষ কাঁচা মরিচের দাম ৭০০-১,০০০ টাকা কিলোগ্রাম!
মানুষ কাঁচা মরিচ ঠিক কিভাবে খাচ্ছেন, পেঁয়াজের মতোই? পেঁয়াজের ওজন আর কাঁচা মরিচের ওজন ও স্বাদ ভিন্ন। পেঁয়াজের তুলনায় সম পরিমাণ কাঁচা মরিচ খাওয়া সম্ভব হবার কথা না। তাছাড়া ঈদের বন্ধের কারণে চপ কাটলেট রেস্টুরেন্ট, ফুটপাতের পুরি পেঁয়াজু বেগুনী দোকান ও ঠেলাগাড়ির ভ্রাম্যমান দোকানও বন্ধ। তাহলে এইভাবে কাঁচা মরিচ কারা খাচ্ছেন? কিভাবে খাচ্ছেন?
বাংলাদেশে যৌথ পরিবার প্রায় নাই বলা চলে। দেশের সাধারণ পরিবারগুলোতে সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫-৬ জন। আর ৫/৬ জন সদস্যর পরিবারে যেমন তেমন তরকারিতে কাঁচা মরিচের সর্বোচ্চ চাহিদা ৫-৬ টি। একটি যেমন তেমন তরকারিতে ৫/৬টির বেশী কাঁচা মরিচ দেওয়াও যায় না। এক পাতিল তরকারি ও এক পাতিল ডালে মোট কাঁচা মরিচ লাগবে ৭-৯টি। এক পাতিল তরকারি ও এক পাতিল ডাল মোটামোটি তিন বেলার খাবার। তাহলে কাঁচা বাজারের একটি পঁচনশীল দ্রব্য কাঁচা মরিচের বাজারে এমন কেলেংকারী কিভাবে হয়?
কাঁচা মরিচ জমি থেকে উত্তোলনের পর বাজার ও বাসাবাড়ি পর্যন্ত তার আয়ু সর্বমোট চার থেকে পাঁচ দিন (যদি ব্লেন্ড করে ফ্রিজে না রাখা হয়)। তাহলে আবারও প্রশ্ন থেকে যায়, এই চার পাঁচ দিনের মতো অল্প সময়ের মধ্য এমন কেলেংকারীর সাথে কে বা কারা জড়িত?
উপসংহার: উপসংহারে আমার প্রায় লেখাতে আমি নিজের আলাদা একটি মতামত দিতে চেষ্টা করি। বাংলাদেশের নিত্যপণ্যর বাজার সহ কাঁচা বাজারে যেইদিন থেকে দেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সহ পত্রিকা মিডিয়া জড়িত হয়েছে - ঠিক সেইদিন থেকে দেশের নিত্যপণ্যর বাজার থেকে শুরু করে কাঁচা বাজার "ওলটপালট" করে রেখে দিয়েছে। "শিক্ষিত মানুষ বুদ্ধিজীবী মানুষ অর্থ ভালো মানুষ হবেন" এই চিন্তাটি ভুল প্রমাণ করে দিয়ে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সহ নিউজ মিডিয়াগুলোতে কর্মরত শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী মানুষজন সমগ্র দেশের ও জনগণের দিনের পর দিন ক্ষতি করে যাচ্ছে! - যার কোনো সালিশ বিচার নেই।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইনব্লগ।
সংবাদ:
এক কাঁচা মরিচের দাম এক টাকা, দাম বাড়ার কারণ কী?
আকাশচুম্বি কাঁচা মরিচের দাম কমবে কবে?
আমদানির খবরে অর্ধেকে নামল কাঁচা মরিচের দাম
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:১৯