গ্রামে গিয়েছিলাম।
ঢাকায় যখন দম ফেলবার জায়গাটুকুও নেই, ভাবলাম একটু গ্রামে গিয়ে জিরিয়ে আসি। (যেহেতু আমার এ সুযোগ আছে,আফসোস অনেকের তা নেই)
দুই-এ দুই-এ চার হয়ে গেল। সময় কলিং বেল বাজাতে শুরু করলো,করলো মনটাও- আহ্ কি শান্তি, কি পরশ, কি মমতা আমাকে যেন গ্রাস করতে লাগলো প্রতিনিয়ত। ভাবলাম, ভাবনাতেই এতো সুখ! পেলে তো.....
ক্যাম্পাসে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল,কয়েকদিন এসব নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়া মাত্র আমাকে পায় কে? মনের টান কি আর ক্লাসের টানে বেধে রাখা যায়? তাই পরদিন ক্লাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ছুটে চললাম আমার হাতছানি দিয়ে ডাকা গ্রামের দিকে।
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল বেশি দূরে না,কিন্তু সময় ঘড়ি এমনভাবে চলছিল যেন এ পথ দিগন্তে চলার পথ! ধৈর্য্যের নাকি মেওয়া পাওয়া যায়- আমিও পেলাম। কিন্তু সস্তি কোথায় যার জন্য এতোদূর আসা?
প্রচন্ড ঘামের বৃষ্টিতে ভিজলাম প্রকৃতির একপশলা বৃষ্টিতে ভিজবো বলে, সিক্ত হব উত্তর হাওয়ায়,প্রজাপতির মতো হারিয়ে যাব অনাবিল আনন্দে,মন নাচবে বাধন হারা তালে! আমি ব্যক্তি হিসেবে নিরাশাবাদী নই,বোধয় প্রকৃতিও এ জন্য আমাকে খুব নিরাশ করে নি। বৃষ্টিস্নান করতে না পারলেও কিছুটা বৃষ্টিমুখরতা তো পেয়েছি, সিক্ত হাওয়া না পেলেও গায়ে তো লু হওয়া জড়িয়েছি,অনাবিল আনন্দ না পাই মনটা তো কিছুক্ষণের জন্য প্রজাপতি হতে পেরেছে। গ্রামে এসে এই আমার পাওয়া।।
যাই হোক একটা কথা না বলে পারছি না,তা হলো আমরা ইদানিং যে পরিবর্তনের ধুয়া তুলছি তার সবচেয়ে মনোযোগী ছাত্র বোধকরি প্রকৃতি। এ পরিবর্তনের লাগাম আজ টেনে নিয়ে গেছে গ্রাম অব্দি! এখন আমাকে গ্রামে গিয়েও দেখতে হয় সূর্যের সাথে কালবৈশাখীর লুকোচুরি, যেন এরা একটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে নিয়েছে নিজেদের মধ্যে। এসব দেখে মনে পড়ে ”মেঘ হচ্ছে পানি হচ্ছে খেঁকশিয়ালীর বিয়ে হচ্ছে”-ছড়াটিও।গ্রাম এখন আর প্রকৃতিক নেই বরং অতিপ্রাকৃতিক! এই বোশেখেও আমাকে সঁন্ধ্যার আকাশের চাঁদ খুজতে হয় রাতের কুয়াসাকে ভেঙচি দিয়ে,দিনে যেখানে দিনের বেলা গরমে হাসফাস করতে হয় সেখানে রাত যেন পৌষ মাস! সত্যিই অনেক কিছু বদলে গেছে.......
সুনীলের কবিতা পড়লে আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে প্রকৃতি হতে, তাহলে যেতে পারতাম ওদের কাছাকাছি, তাহলে দেখার চেষ্টা করতাম ওদের সরূপ,বোঝার চেষ্টা করতাম ওদের অভিমানগুলো। হয়তো বা দেখতে পেতাম মানুষ নামের প্রাণীগুলো সত্যিকারের কুৎসিত চেহারা যারা খুব সচেতন ভাবেই ছিঁড়ে ছিঁেড় খাচ্ছে নিজেদের বেঁেচ থাকার ভবিষ্যত।।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১০ বিকাল ৩:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



