আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগের কথা। আমি এস এস সি পরীক্ষা শেষ করেছি। আম্মাকে বললাম অনেকদিন মামা বাড়ি যায় না চলো এবার ঘুরে আসি। আম্মা বললেন ঠিক আছে চল কিন্তু বেশিদিন থাকা যাবে না। আমি আমার মা ও ছোট ভাই মিলে মামার বাড়িতে গেলাম। তখন এপ্রিল মাস। আমরা প্রায় দুই বছর পর মামা বাড়ি গিয়েছিলাম বলে আমাদেরকে নিয়ে অনেক হৈচৈ শুরু হয়। সব খালারা আসে। মামাদের বাড়িটা দেখলেই ভয় লাগে বলতে গেলে বাড়িটা কবরস্থানের মধ্যেই, বাড়ির উত্তর ও পূর্ব দেওয়াল ঘিশেই গোরস্থান দক্ষিনে বড় পুকুর এবং পশ্চিমে পাকা রাস্তা, রাস্তার ধারেই বড় একটা তেঁতুল গাছ। প্রথমে ভয় ভয় লাগলেও পরে অবশ্য সেরকম ভয় লাগছিল না।
মামার বাড়ি হতে দুই কিমি দূরে নওদাপাড়া নামক স্থানে একটি ইসলামিক মহাফিল হচ্ছিল। মামা আমাদেরকে ঐ মহাফিল শুনতে যাবার প্রস্তাব দিলেন, আমি রাজি কারণ বাইরে যেতে পারব বলে। আমি, বড়মামা, ছোটমামা, বড়খালা এবং মামার এক বন্ধু মিলে রওনা দিলাম। আপনারা জানেন যে ইসলামিক মহাফিল অনুষ্ঠান গুলো রাতে শুরু হয় এবং গভীর রাতে শেষ হয়। আমরা ঐ স্থানে পৌঁছুলাম রাত আট টার সময়। মহাফিল শেষ হতে প্রা য় রাত দেড়টা বেজে যায়। আমরা ওখানে গিয়ে ছিলাম ভ্যানে চড়ে কিন্তু আসার সময় কোন ভ্যান বা রিকশা না পেয়ে আমরা পায়ে হেঁটে বাড়িতে আসতে লাগলাম। আমরা যে রাস্তাটা দিয়ে যাচ্ছিলাম তার একটু বিবরণ দিই, রাজশাহী তো আমের জায়গা মামাদের এলাকায় প্রচুর আমআগান রয়েছে। যেগুলো আনেক বড় বড় রাতের বেলা এগুলোকে দেখতে রীতিমত দৈত্যের মত দেখায়। আমগাছের ফাঁক দিয়ে এঁকে বেঁকে গেছে চিকন রাস্তাটা। চারিদিক খুবই নীরব ছিল কোন প্রকার শব্দ হচ্ছিল না এক অস্বস্তিকর নীরবতা বিরাজ করছিল। আমরা পাশাপাশি হাঁটছিলাম। আমি মোটামুটি সাহসী একটা ছেলে তারপরও ঐসময় প্রচন্ড ভয় লাগছিল। সে সময় আমার আম্মা আমাকে ফোন দিলেন, বললেন- তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় আমার শরীর প্রচন্ড খারাপ। বলে তিনি ফোন রেখে দিলেন। আমি মামাদেরকে বললাম এবং বাড়ির দিকে দৌড় দিলাম। সে সময় আমার মধ্যে কোন ভয় কাজ করছিলনা মায়ের কাছে যাবার প্রচন্ড ঘোর কাজ করছিল। আসতে আসতে এক সময় আমার মনে হলো আমার পেছনে কে যেন দৌড়ে আসছে আমি মনে করলাম মামারা মনে হয় আসছে। এক সময় আমি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলাম। দেখলাম আমি এক বাঁশ ঝাড়ের নিকট পড়ে আছি আর বাঁশ গুলো সব রাস্তার উপর শুয়ে আছে কোন ভাবেই তা পার হওয়া যাবেনা। আমার শরীর তখন অবশ হয়ে গেছে। আমি উঠে দঁড়াতে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। মনে হচেছ আমি কোন পুরানো স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে দাঁড়িয়ে আছি ঠিক মত দাঁড়াতেও পারছিনা পড়ে যাচ্ছি কার মেঝেটা অসম্ভব রকমের পিচ্ছিল। কিন্তু আমি তখনও সেই রেডের উপর দঁড়িয়ে আছি। তারপর সবচেয়ে ভয়ংকর জিনিষটা দেখলাম। দেখলাম যে, আমার চারদিকে চারটি কাল রংয়ের কুকুর দাঁড়িয়ে আছে যাদের চোখ গুলি জ্বল জ্বল করছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, কুকুর গুলোর আকার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপর আমার ঘাড়ের কাছে একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলাম। চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম। মনে হলো আমি জ্ঞান হারাচ্ছি কিংবা মারা যাচ্ছি। জ্ঞান ফিরে আমি দেখি আমি মামার বিছনায়। পরে জানতে পারলাম মামারা আমাকে ঐ স্থান হতে নিয়ে এসেছে। তবে তারা নাকি দেখেছে আমার মাথার কাছে একটা সাদা রংয়ের বিড়লি বসে আছে। এই ছিল আমার ঘটনা। এটা ভৌতিক বা এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আছে কি না সেই তর্কে যাব না। এটা ভৌতিক ব্যাপারও হতে পারে আবার হ্যালুসিলেশনও হতে পারে। তবে এটা অত্যান্ত ভয়ংকর অভিজ্ঞতা কেও যেন এরকম পরিস্থিতির স্বীকার না হন। আল্লাহ্ হাফিজ।