স্কুল জীবনটাকে মিস করেনা এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। কত মজার, কত ভয়ে, কত রোমাঞ্চকর স্মৃতি যে রয়েছে আমাদের এই স্কুল লাইফকে কেন্দ্র করে তার ইয়াত্তা নেই। অভিভাবকের নিষেধ, শিক্ষকের শাসন থাকার পরেও আমরা কেও কি দমে গেছি? কোন কিছু করার চেষ্টা বা কোন নিষিদ্ধ অভিযানের কথা বা ভীষণ দুষ্টুমির কথা কি আমরা ভুলতে পারব? সেরকম এক নিষিদ্ধ অভিযানের বর্ণনা এখন দিব।
তখন ক্লাস নাইনে পড়ি, উঁচু ক্লাসে পড়ি তাই ভাবের শেষ নেই। বড়ভাই ভঙ্গিতে চলাফিরা করি সবসময়। সেসময় আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল ক্লাস টেন কারণ তারা আমাদের বড়ত্বে ভাগ বসাত। তাদের কিভাবে ঘায়েল করা যায় সেই চিন্তাতে সবসময় বিভোর থাকতাম। যাক ঘটনাতে আসি, তখন “পার্টনার” বলে একটা এনজিও থেকে আমাদের সপ্তাহে একটা ক্লাস নিত। ক্লাসটা হত বয়ঃসন্ধি কাল, এইডস এইসব বিষয়ের উপর। আমরা বেশ আগ্রহ করে ক্লাসে যেতাম কারণ সেই ক্লাসটাই একমাত্র ছেলে মেয়ে একসাথে হত । তারপরে আবার ঐসব বিষয়ের উপর ক্লাস । বিভিন্ন ধরনের ছবি থাকত, বুঝেন তো কিসের ছবি ! আমাদের সেই ক্লাসে আসার আগ্রহের আরও একটা প্রধান কারণ ছিল সেটা হল, তারা ক্লাস শেষে সবাইকে এক প্যাকেট করে বিস্কুট দিত। যাহোক আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সে সকল বিষয়ে ব্যপক জ্ঞান অর্জন করে ফেললাম। অন্য সকল ইস্যু বাদ দিয়ে আমরা কেবল ঐ ক্লাসের বিষয় নিয়েই আলোচনা করতাম। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কয়েক জন মেয়ের সাথেও বেশ আলাপ হল। ক্লাস ভালই চলছিল কিন্তু গ্রীষ্মকালীন অবকাশের (আমরা বলি আম খাওয়ার ছুটি) জন্য স্কুল এক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। মেয়েদের সাথে ক্লাস করতে পারব না, বিস্কুট পাব না, ঐসব বিষয়ে আর জ্ঞান ভান্ডার বাড়াতে পারব না এ নিতে আমাদের সবার মধ্যেই চিন্তার ছাপ।
যথারীতি এক মাস পর স্কুল খুলল এখন অপেক্ষা কবে বৃহস্পতি বার আসবে। প্রথম সপ্তাহে ক্লাস হলোনা। পরের সপ্তাহের বৃহস্পতি বারে দেখি স্যার মোটরসাইকেলে চড়ে আসছে পেছনে এক বক্স বিস্কুট। আজ মনে হয় আমাদের এখানেই প্রথম আসছে! আমাদের গ্রুপের চার পাঁচ জন মিলে স্যারের সাথে দেখা করার জন্য বের হলাম, স্যার হেড স্যারের রুমে ঢুকেছেন। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় চোখ চলে যায় স্যারের মটর সাইকেলের পেছনের দিকে। কু বুদ্ধি চেপে যায় আমাদের মাথায়। মোটর সাইকেল্টা দেওয়ালের পাশে একটা গলির মত যায়গায় ছিল। ব্যাস যেই ভাবা সেই কাজ পুরা কার্টুন সহ বিস্কুট গায়েব করে দিলাম । বিস্কুটের বক্স নিয়ে দিলাম দৌড় পাসের আঁখ খেতের মাঝখানে। তারপর সে কি খাওয়া! কিন্তু পাঁচ জনে কি আর অত গুলা বিস্কুট খাওয়া যায়? আমি সব প্যাকেট গুলা পাঁচ ভাগে ভাগ করলাম তারপর সেই জমির মধ্যে লুকিয়ে রেখে বের হলাম। দুরু দুরু বুকে স্কুলের দিকে যাচ্ছি “কি আছে যে আজ কপালে!” পেছন দিক দিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়লাম। ততক্ষণে পুরা স্কুলে তুলকালাম কাণ্ড বেধে গেছে। স্যারের সন্দেহ ক্লাস টেনের ছাত্ররা এই কাজ করেছে কারণ তারা স্যারকে একদিন বিস্কুট চুরির হুমকি দিয়েছিল। যাক বাঁচা গেল। হেডস্যার ততক্ষণে কয়েকজনকে এক তরফা শাস্তি দিয়ে ফেলেছেন। আর আমাদের ক্লাসে এসে বললেন ‘ওদের মত যদি এসব কাজ করার চিন্তাও কর তাহলে সোজা স্কুল থেকে বের করে দিব।’
আমাদের কারণে বেচারাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। সরি বড় ভাইয়ারা ।
এই ছিল বিস্কুট চুরির ঘটনা। আপনারা কারা কি কি করছেন বলেন?
উৎসর্গঃ স্কুলের সকল দোস্তদের, কেমন আছিস তোরা?
অনেক দিন পর লিখলাম এই সিরিজটা। আমি লেখালিখিতে চুড়ান্ত রকমের অলস! এ থেকে মুক্তি পাব কিভাবে?
এর আগে কিছু লিখেছিলামঃ
আত্মকথন০১- পলিটেকনিক এর ঘুষখোর ডিজিটাল মাস্টার ও আমার কম্পিউটার কেনা
আত্মকথন ০২- কিছু মজার ঘটনা। না পড়লে পুরা মিস!!!