আপনি অনলাইনে মাধ্যমে তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা নিউজ পোর্টালে কুৎসা রটনার কারণে মানহানির শিকার হচ্ছেন। এখন ভাবছেন, আপনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু কীভাবে আইনি প্রতিকার পাবেন, তা জানেন না। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ্যণীয়ঃ
মানহানির অভিযোগ এনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা বা মোকদ্দমা করা যায়। ফৌজদারি আদালতে মানহানির মামলা করার ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ দায়ের কিংবা কোর্টে জবানবন্দি দায়ের করে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযোগ থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন। কিন্তু মানহানি অনলাইনে হলে তার জন্য সাইবার মামলা দায়ের করা যায়।
কিভাবে হয় মানহানিঃ
যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হবে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। এমনকি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বললেও তা মানহানি হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মানহানির অভিযোগ আনতে পারবেন। অনলাইনে ফেসবুক বা অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা যেকোনো ওয়েবসাইটে যদি মানহানিকর ছবি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয় তাহলে মানহানির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৯ ধারার অধীনে মামলা করা যায়।
**মানহানি যদি হয় অনলাইনেঃ
অনলাইনে ফেসবুক বা অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা যেকোনো ওয়েবসাইটে যদি মানহানিকর ছবি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয় তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৯ ধারার অধীনে মামলা করা যায় এবং পুলিশ এ ধারার অভিযোগে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারও করতে পারে। অর্থাৎ মানহানিকর বক্তব্য যদি অনলাইনের বাইরে হয় তাহলে এক ধরনের শাস্তি আর অনলাইনে হলে আরেক ধরনের শাস্তি। মানহানি অনলাইনে হলে তার জন্য সাইবার মামলা দায়ের করা যায়।
অনলাইনে মানহানি হলে আইনের আশ্রয় কীভাবে নিতে হয়ঃ
অনলাইনে বা যে কোন ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যদি মানহানির শিকার হন কেউ, তাহলে থানায় এজাহার দায়ের করা যায় কিংবা কোর্টে সাইবার মামলা দায়ের করা যায়।
সুতরাং অনলাইনে মানহানি জনিত সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইমে আক্রান্ত হয়ে গেলে আপনার করণীয় :
করণীয় বা প্রতিকার দুই ভাবে পেতে পারেনঃ
১। থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে মামলা করে
২। সরাসরি সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করে। ( দেশের সাইবার ট্রাইবুনাল সমূহ বিভাগীয় শহরে রয়েছে )
****থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে মামলা করার ক্ষেত্রে করণীয়ঃ
প্রমাণগুলো সঠিকভাবে কালেক্ট করা। বাচাই করে সেগুলো প্রিন্ট করে ফেলা। স্ক্রিন ভিডিও এবং লিংকসহ প্রমাণ যোগাড় করা। তারপর থানায় যাবেন। অভিযোগ দায়ের করবেন।
থানা অভিযোগ আমলে না নিলে তখন আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে সরাসরি সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করতে হবে।
**মানহানির শাস্তি:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৯ ধারার অধীনে মামলা করা হলে এবং মানহানিকর কোনও তথ্য-উপাত্ত প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য ৩(তিন) বছরের কারাদণ্ড ও ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই মানহানিটা ডিজিটাল মাধ্যমে হতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে ৫ (পাঁচ) বছরের কারাদণ্ড ও ১০ (দশ) লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবেন।
- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ (এম টি উল্যাহ)
আইনজীবী
০১৭৩৩৫৯৪২৭০
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:০৮