রাজনীতিতে এসে নিজেকে নয় বরং রাজনীতিকেই অলঙ্কৃত করেছেন দেশে এমন রাজনীতিবিদের সংখ্যা এখন হাতেগোনা। মহান স্বাধীনতার তরে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে নিবেদিত হয়েই ক্ষান্ত না হয়ে বরং স্বাধীন দেশকে গড়ার জন্য নিজের তিলে তিলে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার তথা বিচরণকে বিসর্জন দিয়ে নাম লিখেছেন জনতার কাতারে। এই ভূখণ্ডের এমনই একজন রাজনীতিবিদ শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
স্বাধীনতা পূর্বেই ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্যার বিলেতে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, স্যারের স্ত্রী বিলকিস আক্তার ম্যাডামেরও সুনির্দিষ্ট সম্মানজনক ক্যারিয়ার ছিলো ওখানে। সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে দেশে এসে স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা আর দেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেন এই ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানীকে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নামের সাথে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী এসব শুধু বলার জন্য বলা নয়। ওনাকে বুঝার জন্য বলে রাখা ভালো, তাঁর ভূ-তত্ত্ব বিষয়ে ষ্ট্রাকচারাল এ্যানালাইসিসে নতুন উদ্ভাবন `হুসেইন’স মেথড অব এক্সটেনশন' আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি লাভ করে এবং ভূ-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা ও অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তার জীবন বৃত্তান্ত “হু ইজ দি ওয়ার্ল্ড” কেমব্রিজ বায়োগ্রাফী জার্নাল এবং আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনিষ্টিউশন প্রকাশিত পুস্তকে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে '৬৮ সালে এমএসসি, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে '৭০ সালে এমএসসি, '৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা ও '৭৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। '৭৫ সালে বিলাত থেকে ফিরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। '৮৭ থেকে '৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূ-তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। '৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য তিনি ঢাবি'র শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করেন। এই আলোকিত রাজনীতিক ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাবি'র সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এ.জি.এস ও ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষার্বষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ভি.পি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে তিনি '৭১- এ বিলাত প্রবাসীদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন।
রাজনীতিতে এসেও তিনি আলো ছড়ানো শুরু করেন। বারবার সাংসদ, একাধিক বার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বিএনপির মতো জনপ্রিয় দলের প্রায় তিন দশক ধরে স্থায়ী কমিটিতে এবং বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলছেন তিনি। তিনি কুমিল্লা -২ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। '৯১-৯৬ সময়ে বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, '৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। "প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ" পদ্ধতির উদ্ভাবক এর জন্য তিনি জাতীয় পুরষ্কার স্বর্নপদক লাভ করেন। তিনি ২০০৩ সালে ৫৬ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
৭৮ বছর বয়স্ক এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, শুধুমাত্র দেশকে ভালোবেসে জনগণের প্রেমে অন্ধ হয়ে নিজের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে নিবেদিত রেখেছেন নিজেকে।
দেশাত্মবোধকে ধারণ করে রাজনীতি করেন বলেই তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭, ২০১২ ও ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ বছর কারান্তরীণ ছিলেন। এখনো জেল-জুলুম সহ্য করে চলছেন, তাঁর সারাজীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চয় অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি পারিবারিক সদস্যদের প্রতিষ্ঠান সমূহ অকার্যকর করে রাখা হয়েছে, প্রতিনিয়ত মানসিক এমন কোন কষ্ট নেই যা দেওয়া হচ্ছে না, এ বয়সেও সপ্তাহে ৩/৪ দিন কাটাতে হয় কোর্টের বারান্দায়। হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলার গ্লানি প্রভাবে ভর করেছে অসুস্থতাও। তবুও অদম্য তিনি, রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা হয়ে নেতৃত্ব দিয়ে চলছেন দেশের তরে।
আমার মতো তরুণরা ক্লান্ত হয়ে গেলেও বিগত ১০ বছরে (আইন অঙ্গনের সুবাদে স্যারকে কাছ থেকে ১০ বছর যাবত দেখার সুযোগ হয়েছে) কোনদিন স্যারকে রাজনীতি নিরাশ হতে কিংবা কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতেও দেখিনি। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা রাজনীতিতে আছেন বলেই মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখে দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে কলুষিত হওয়া রাজনৈতিক অঙ্গন সুস্থ ধারায় ফিরে আসবে। আজ স্যারের ৭৮তম জন্মদিন। বরেণ্য এই রাজনীতিক ১৯৪৬ সালের ১লা অক্টোবর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। জন্মদিনে শুভেচ্ছা রইল প্রিয় নেতা।
-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেবের মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত আইনজীবী প্যানেলের সদস্য
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:২২