ব্লগার রাজীব০০৭ এর একটি পোস্ট এ গতকাল দেখলাম একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ নাকি গরুর মাংশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।উনার ঐ পোস্টের পেক্ষিতে কিছু অস্প্রাদায়িক ব্লগারদের(?) দেখলাম খুব নাচানাচি চলছে।তাদের দাবী গরুর মাংশ নিষিদ্ধ হওয়াতে তেমন কোনো সমস্যা নেই।
না কোনো সমস্যা নেই কারন এটি মুসলমানদের খাদ্য।
কয়েকজনকে দেখলাম বলতে ইন্ডিয়ায় গরুর মাংশ নিষিদ্ধ কিনা?
এত যে সেক্যুলার রাষ্ট্র বলে চেচানো হয় সেই ইন্ডিয়ার তিনটি অংগরাষ্ট্র ছাড়া সবখানে গরু জবাই নিষিদ্ধ।
এমনকি কোরবানীর সময় বিশেষ অনুমতি নিয়ে গরু জবাই করতে হয়। ইন্ডিয়া সবসময় একটি সাম্প্রদায়িক দেশ যা নিয়ে আজ কালের কন্ঠ তে সম্পাদকীয় এসেছে।
পোস্টটি দেখুন আর ভাবুন ইন্ডিয়ায় ধর্মনিরেপেক্ষতার নামে আসলে কি হয়?
ভারতে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি
বদরুদ্দীন উমর
বিখ্যাত কলামনিস্ট প্রফুল বিদওয়াই বিজেপির ওপর লেখা এক প্রবন্ধে বলেছেন, বাজপেয়ী, আদভানি, মূরলী মনোহর যোশী, ভেনকাইয়া নাইডু প্রমুখের পরিবর্তে এখন নিতীন গাদকারীর (সভাপতি) মতো একজন ক্লাউন বা ভাঁড়, হেমা মালিনীর (সহ-সভাপতি) মতো সিনেমা অভিনেত্রী, কিরণ খের এবং বরুণ গান্ধীর (সাধারণ সম্পাদক) মতো এক ব্যক্তি হলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা। তাঁদের কারো কোনো অভিজ্ঞতা নেই
ইন্দিরা গান্ধীর কনিষ্ঠ পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর পুত্র বরুণ গান্ধী সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। ৩০ বছর বয়স্ক এই যুবকের তীব্র সাম্প্রদায়িকতা ভারত ও ভারতের বাইরেও পরিচিত। ভারতের গত সাধারণ নির্বাচনের সময় বরুণ গান্ধী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় উগ্র হিন্দুদের ভোট ধরার জন্য এমন এক তীব্র এবং উত্তেজনাপূর্ণ মুসলমানবিরোধী সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা দেন, যা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তাঁরা তাঁকে সংযত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যাই হোক, সে এলাকা থেকে বরুণ গান্ধী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই ভারতীয় এমপি এবং বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ২৯ মার্চ উত্তর প্রদেশের শাহরানপুরে এক জনসভায় ২০ মিনিটের এক অতি উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে ভারতে গরু জবাই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান (ডেইলি স্টার, ৩০.৩.২০১০)। এখানে অবশ্য উল্লেখ করা দরকার, বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগেই দীর্ঘদিন থেকে ভারতে কার্যত গরু জবাই নিষিদ্ধ আছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরা ছাড়া সর্বত্র, এমনকি কাশ্মীরেও গরু জবাই নিষিদ্ধ। এ কারণে ওই সব রাজ্যে গরুর গোস্ত বাজারে বিক্রি হয় না এবং কোরবানির সময় গরু জবাইয়ের জন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে হিন্দু ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের, বিশেষত মুসলমান ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব এবং খাদ্যাভ্যাসের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্ত্বেও এ নিয়ে সেখানকার বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো আন্দোলন তো নয়ই, এমনকি কোনো কথাবার্তা পর্যন্ত নেই। আমাদের দেশে যে ভদ্রলোকরা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজেদের জয়গান করেন, তাঁরা কেউ কেউ আন্তরিকভাবে এবং অধিকাংশই লোক দেখানোর জন্য সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলেন। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয়, এঁদের কথাবার্তা ও তথাকথিত হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলন শুধু মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। অন্য ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁরা নির্বাক থাকেন। এ কারণে ভারতের গুজরাটে ২০০২ সালে এক বিধ্বংসী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অসংখ্য মুসলমান নির্মমভাবে খুন-জখম হলেও এই ভদ্রলোকদের একজনের মুখেও এর বিরুদ্ধে কিছু শোনা যায়নি। যদিও ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত অনেক দল এবং অসংখ্য ব্যক্তি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সে দাঙ্গার বিরোধিতা করেন।
অন্য রাজ্যের কথা বাদ দিলেও ভারতের তথাকথিত কমিউনিস্ট শাসিত পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি খুব খারাপ। সাম্প্রদায়িকতার অর্থ শুধু দাঙ্গা-হাঙ্গামা নয়। সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা যতখানি, তার ওপরই নির্ভর করে কোনো সমাজ রাজ্য বা দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির প্রকৃত পরিচয়। এদিক দিয়ে দেখা যাবে, পশ্চিম বাংলায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিস্থিতি না থাকলেও সেখানে সাধারণভাবে মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষা, জীবিকা, চাকরি ইত্যাদির অবস্থা খুব খারাপ। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের ওপর প্রায় ৩০ শতাংশের মতো মুসলমান। মুর্শিদাবাদ এবং অন্য কয়েকটি জেলাতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুর্শিদাবাদে মুসলমানদের সংখ্যা হলো ৬৫ শতাংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিপিএমের একটানা ৩২ বছরের শাসন সত্ত্বেও এ রাজ্যে মুসলমানদের চাকরি ২ শতাংশেরও অনেক কম! একে সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? সেখানে বলা হয়ে থাকে যে, মুসলমানরা প্রতিযোগিতায় পারে না। কেন? মুসলমান হওয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পারার কী সম্পর্ক? এটা তো ভালোভাবেই জানা যে, এসব নির্ভর করে সুযোগ-সুবিধার ওপর। সুযোগ-সুবিধার অভাবে পশ্চিমবঙ্গে শুধু শিক্ষার হার, সরকারি চাকরির হার ইত্যাদিই কম নয়; সেখানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও মুসলমানদের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য সংখ্যক শিক্ষক ছাড়া সাংবাদিক, শিল্পী, রেডিও-টেলিভিশন কর্মী_সব ক্ষেত্রেই দেখা যাবে মুসলমানদের অনুপস্থিতি। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে, সেখানে মারকারিয়া কমিশনের রিপোর্টে মুসলমানদের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে দলিতদের থেকেও শোচনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব কথা বললে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভদ্রলোকরা মনে করেন, সাম্প্রদায়িক কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই ভদ্রলোকদের সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধিতা এবং প্রকৃত সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধিতা এক জিনিস নয়। যাঁরা প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক, যাঁরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন, তাঁদের কর্তব্য কাজ হলো, যে কোনো দেশে, যে কোনো সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলা, তার সমালোচনা করা, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। কাজেই বিজেপি কর্তৃক বাবরি মসজিদ ভাঙা অথবা তাদের দ্বারা গুজরাটে নৃশংস সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডের মুখে নিশ্চুপ থাকা কোনো প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি বা শক্তির কাজ নয়। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজ হলো অসাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে ফায়দা ওঠানোর চেষ্টা। এ কারণেই এঁদের 'অসাম্প্রদায়িক' কথাবার্তা ও কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা খর্ব না হয়ে তার বৃদ্ধি ঘটে।
বরুণ গান্ধীর গরু জবাইয়ের বিরুদ্ধে জনসভার বক্তৃতা প্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে বলা যায় যে, ভারতে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এখনো একটা বিপজ্জনক অবস্থায় থাকার জন্যই তাঁর পক্ষে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে গরু জবাইকে অভিহিত করা সম্ভব হয়েছে একটি 'সামাজিক অপরাধ' এবং একটি 'আইনগত অপরাধ' হিসেবে!! গরু জবাই কিভাবে একটি সামাজিক অপরাধ হতে পারে_এটা মোটেই বোধগম্য নয়। গরু জবাই যদি সামাজিক অপরাধ হয় তাহলে মোষ, শুয়োর, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি জবাই কেন সেই একই পর্যায়ের 'সামাজিক অপরাধ' হবে না? বাংলাদেশে শুয়োর জবাইকে কি কেউ সামাজিক অপরাধ মনে করে? 'আইনগত অপরাধের' প্রশ্নটি এক্ষেত্রে একটু ভিন্ন। কারণ পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরা ছাড়া ভারতের অন্য সব রাজ্যে গরু জবাই আইনত নিষিদ্ধ। কাজেই ওইসব রাজ্যে গরু জবাই করলে তাকে সেই হিসেবে 'আইনগত অপরাধ' বলা চলে। কিন্তু এক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে বলা দরকার তা হলো, অধিকাংশ রাজ্যে গরু জবাই করা যে আইনের কারণে 'অপরাধ' সে আইনটিই এক বড় অপরাধ। এই অপরাধ ভারতের অসাম্প্রদায়িক (ঝবপঁষধৎ) রাষ্ট্র কর্তৃক জারি রাখা হয়েছে। হিন্দু ব্যতীত অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত জনগণের খাদ্যাভ্যাসের ওপর এটা এক সাম্প্রদায়িক হামলা। এ কারণে একটি ঝবপঁষধৎ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয়দানকারী ভারতের প্রয়োজন এ আইন রদ করে সর্বত্র খাদ্যের জন্য গরু জবাই আইনসিদ্ধ করা। এই গণতান্ত্রিক কাজটি করা হলে তখন বরুণ গান্ধীর মতো উন্মত্ত সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের পক্ষে, তাদের দল বিজেপি, আরএসএস, বাজরাং দল, বাল ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার মতো দলের পক্ষে গরু জবাইকে আইনগত অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে হুলস্থুল করা সম্ভব হবে না।
যেহেতু ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ সে কারণে বরুণ গান্ধীর গো-হত্যা নিবারণ কর্মসূচির লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরা। কিন্তু তাঁর আসল লক্ষ্য হলো, গো-হত্যাবিরোধী আওয়াজ তুলে ভারতে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা সৃষ্টির আন্দোলন নতুনভাবে শুরু করা।
এ ধরনের আন্দোলন এখন বিজেপির রাজনৈতিক অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয়েছে। এখন তাদের অবস্থা পড়তির দিকে। এর একটা পরিচয় পাওয়া যায় এর নেতৃত্বের বর্তমান অবস্থার দিকে তাকালে। এ বিষয়ে ভারতের বিখ্যাত কলামনিস্ট প্রফুল বিদওয়াই বিজেপির ওপর লেখা এক প্রবন্ধে বলেছেন, বাজপেয়ী, আদভানি, মূরলী মনোহর যোশী, ভেনকাইয়া নাইডু প্রমুখের পরিবর্তে এখন নিতীন গাদকারীর (সভাপতি) মতো একজন ক্লাউন বা ভাঁড়, হেমা মালিনীর (সহ-সভাপতি) মতো সিনেমা অভিনেত্রী, কিরণ খের এবং বরুণ গান্ধীর (সাধারণ সম্পাদক) মতো এক ব্যক্তি হলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা। তাঁদের কারো কোনো অভিজ্ঞতা নেই। গাদকারীর যেটুকু অভিজ্ঞতা আছে, সেটা তাঁর নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চরম প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক বিরুদ্ধবাদী দল আরএসএসের প্রভাব ও নির্দেশেই শুধু এই কয়জনই নয়, বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব পুরোটিই গঠিত হয়েছে। এটা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, হিন্দুত্বের নামে সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া বিজেপির আর কোনো দলীয় রাজনৈতিক অবলম্বন নেই। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে, ভারত এখন যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে এই ধরনের উগ্র সাম্প্রদায়িক কোনো দলেরই বিশেষ কোনো ভবিষ্যৎ এখন ভারতে আর নেই।
৩০.৩.২০১০
কালের কন্ঠের লিংক
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




