শরীরটা খুব বেশি কাঁপছে রাহেলা বেগমের, বোধহয় জ্বরটা বেড়েছে । স্বামী হোসেন মিয়া মারা গেছে ২০ বছর আগে । ছেলে হালিম তখন ২৫ বছরের জোয়ান । বাপের রেখে যাওয়া ২ বিঘা জমি তার চেষ্টায় এখন ৫ বিঘা হয়েছে। কিন্তু রাহেলা বেগমের ঠায় হয়েছে ছেলের পাশের ঘর থেকে বারান্দার ছোট ছনের ঘরে ।
রাতে কাঁপুনির সাথে সাথে জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকে রাহেলার সাথে প্রলাপও বকতে শুরু করে । প্রচণ্ড কাপুনি আর জ্বরের তাপমাত্রায় মাথার ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে । আর সহ্য হয় না তার । ছেলে হালিম কে কাছে ডাকে “অ হালিম, হালিম? অ হালিম” ? জীর্ণ শরীরের শীর্ণ কণ্ঠধ্বনি হালিমের ঘর আব্দি পৌঁছলেও বউয়ের বাহুডোরে আবদ্ধ হালিমের বিরক্তমাখা ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর আসে “ জ্বরের বড়ি আইনা দিছি, খাইছস এহন চুপ কইরা শুইয়া থাক” ।। রাহেলা বেগম নিজেও জানে হালিম আসবে না । মাথার যন্ত্রণা ক্রমেই বাড়ে ।
এখন রাতের মাঝামাঝি । ঘুমিয়ে পরেছে রাহেলা বেগম । ঘুমের মধ্যে জ্বরের প্রকপে আবোল তাবোল বকে, আবোল তাবোল স্বপ্নও মাথায় আসে । সে স্বপ্ন দেখে স্বামী হোসেন আলির সাথে তার বিয়ের প্রথম দিনগুলোর, স্বপ্ন দেখে তার শ্বাশুড়ির ....
.....তখন ছিল শিতের রাত । তার শ্বাশুড়ি আমেনা বেগমেও জ্বরে আসুস্থ ছিল । সেও ডেকেছিল হোসেন আলীকে। হোসেন আলী উঠতে চেয়েছিল পারেনি । হোসেন আলীকে বাহুডোরে বেঁধে যেতে বাধা দিয়েছিলো রাহেলা বেগম । সকালে তার শ্বাশুড়ি মারা যায় ।.....
শেষ রাতের দিকে ঘুম ভাঙ্গে রাহেলা বেগমের । প্রচণ্ড কষ্টে সমস্ত শরীর আবসবন্ন হয়ে আসে । তার মুখের কথাগুলো ক্রমাগত অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্টতর হয়ে আসে । কিন্তু এই কথার পরে আর কোন কথা শোনা যায় না “হালিম তোরে আমি মাফ কইরা দিলাম” । মসজিদে ফজরের আজান দেয় মুয়াজ্জিন ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


