রেলস্টেশনে..38..মিনিট..47..সেকেন্ড................দিনু
টঙ্গী রেলস্টেশনে যখন পৌছলাম, তখন রাত সাড়ে এগারটা।বর্ষাকাল থাকায় ইলশেগুড়ি হচ্ছিল সারাটাদিন। অসংখ্য মানুষের ভীড় ঠেলে কোনমতে কাউন্টারে গলা বাড়িয়ে জিঞ্জেস করলাম "ভাই তিস্তা একসপ্রেস ক'টায় পৌছবে?" ওপাশে বসা তিনজন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মধ্যে কে যেন জানালেন সাড়ে বারোটায়। আমার হাত ঘড়ির অবসা আমি খুব ভাল করেই জানি।তাই ওটার দিকে আর না তাকিয়ে তাকালাম স্টেশনের ঘড়িটার দিকে। ডিজিট্যাল দুনিয়া তাই;;ও বেচারা আমায় দেখাল 11 টা 39 মিনিট 13 সেকেন্ড। মানে আমাকে.. অপেক্ষা করতে হবে আরও 38 মিনিট 47 সেকেন্ড সেকেন্ড।
কী করব ভেবে.. পাচ্ছিলাম না। ব্যাগের ভেতরে থাকা পত্রিকাটি বের পড়লাম কিছুক্ষণ । এভাবে কাটল প্রায় 12 মিনিট। আশেপাশে তাকালাম একবার। কিন্তু লেখার মত কিছুই দেখলাম না দেখলাম কেবল এক বৃদ্ধাকে। বয়সের ভাড়ে সে বড় শ্রান্ত । কিন্তু. ক্লান্ত তার চোখদুটো কেন যেন ডাকছিল আমায় আপন মমতায়। নিজেকে আর ভদ্র সমাজের রশিতে বেধে রাখতে পারলাম না। গেলাম সেই বৃদ্ধার কাছে। পেশায় তিনি ভিক্ষুক তাকে জিঞ্জেস না করেই তা জেনেছিলাম, তার ভীক্ষার শীর্ণ ঝোলা দেখে। একটিমাত্র সম্বল ছিল তার, সেটি কাঁথা । নকশী কাঁথার নকশা আকা নেই তাতে, আছে জীবনের শেষ লগ্নে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধার আত্নকাহনের ছবি।আর তার সেই কাঁথাকে বিছালেন স্টেশনের একবারের উত্তরের বারান্দায়, যার পরেই রয়েছে রেললাইনের নিষ্প্রাণ কঠিন পাথর। তিনি একা নন, আরও পাঁচ-সাতজন হতভাগাকে সেখানে, দেখলাম। উদ্দেশ্য সবার অভিন্ন-দুচোখের পাতাকে এক করবেন, শুধু। বৃদ্ধা মাথা ঠেকালেন তার ঝোলার উপর ওমনি জনগনের বন্ধু পুলিশের কড়া বাঁশি। স্টেশনের প্লাটফর্মে শোয়া নেষেধ। বৃদ্ধার শোয়া হোল না। স্টেশনের ওই কোনাতেই বসে রইলেন হয়ত এভাবেই তাকে কাটাতে হবে সারাটা রাত।
আমি কিছুই করতে পারলাম না, কেবল দাঁড়িয়ে থাকলাম আর দেখলাম। দেখলাম আইনের কত সুষ্ঠু প্রয়োগ। দেখলাম আইনের দ্বারা কীভাবে মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়। দেখলাম আমাদের কানুনবিদদেও কানুন জ্ঞান।
দেখাগুলো হঠাৎ থেমে গিয়েছিল চোখদুটো ঝাপসা হওয়াতে। চোখদুটো ঝাপসা থেকে ঝাপসাতর হয়ে আসল চোখের জলে নয় মনের জলে। ট্রেনটা আসল তাই আমার আর দেখা হোল না!
. ....এটা একটা Re-post.....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



