somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টিস্নাত দুঃস্বপ্ন ......... দিনু

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টিস্নাত দুঃস্বপ্ন ......... দিনু


কাল রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে, এটা আষাঢ়-শ্রাবণ মাস নয় তারপরেও বর্ষার একটা আবহ যেন ঘিরে রেখেছে আজকের সকালটাকে । গায়ে আলসেমির ভাব লেগে থাকে এরকম দিনে । অনেকের কাছে এরকম দিনগুলো নাকি রোমান্টিক হয় । কিন্তু কেন হয় তা আকাশের বোধগম্য হয়ে ওঠে না । tv তে একটা Advertise দেখায় বৃষ্টির দিনের । বিজ্ঞাপনটির কথা মনে আসতেই হাসি পায় তার । নারকেল তেলের বিজ্ঞাপন সেটি যেখানে একটা বৃষ্টির দিনের সকালকে অনেক বেশি রোমান্টিক করে দেখানো হয়। বিজ্ঞাপনের মেয়েটির মনে বৃষ্টির রোমান্টিকতা, কিন্তু ছেলেটির মনে সেই রোমান্টিকতা স্পর্শ করে না, তাকে স্পর্শ করে মেয়েটির মেঘ কালো দিঘল চুল! বৃষ্টির সকাল সবসময় বিরক্তিকর আকাশের কাছে । সকালে গোসল করতে ঠাণ্ডা লাগে, অফিসে যাওয়ার সময় জুতা-প্যান্ট কাদায় মাখামাখি হয়ে যায়, রাস্তায় নিত্য জ্যাম ভয়াবহ রূপ নিয়ে মহা গাঞ্জামের পরিণত হয় যার শেষ ফলাফল অফিসে Late মানে শয়তান বসের ঝারি!

বৃষ্টির দিনে আরেকটা ঝামেলার নাম ছাতা । এমনি কাধে ২.৫ kg ওজনের Laptop এবং ১ kg ওজনের lunch box ওয়ালা bag থাকে তার উপর এই ছাতা, সত্যিই বিরক্ত লাগে আকাশের । যাই হোক সকালে নাস্তা সেরে বের হওয়ার আগে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টির মাত্রা বুঝতে চাইল সে । মনে হয় বৃষ্টি একটু কমেছে, ইলশেগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে এখন, ছাতা লাগবে না তাই সেটাকে ব্যাগে ঢুকিয়ে অফিসের জন্য রওয়ানা দেয় ।

বাস স্টপেজে এসে দেখে যা ধারণা করেছিলো তাই মানে বৃষ্টির কারনে সবারই দেরি যার ফলে বাস আগের স্টপেজ গুলো থেকেই ভর্তি হয়ে আসছে । একেকটা বাসে মানুষগুলো যেন একজন আরেকজনের গায়ে লেপ্টে আছে । প্রত্যেকটা বাসের জন্য লাইন দেখা যাচ্ছে কিন্তু আধা ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার পর যেই না বহু প্রতীক্ষিত বাসটি স্টপেজে আসছে তা দেখে সবার কণ্ঠে হতাশার সুর বেজে ওঠে । অনেকে কাউন্টার ম্যানকে গালাগালি করছে টিকিট বেচা চালু রাখার জন্য, অনেকে তিল ধারণের ঠাই নেই এমন বাসে ওঠার জন্য লাইন ভেঙে দৌড় দেয়, কেউ তাদের মধ্যে সফল হয়ে বাদুড়ঝোলা অবস্থায় বাসের পা দানিতে ঠাই পায়, অনেকে বার্থ হয়ে ফিরে আসে । তারপরেও আকাশ বাসের জন্য টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়ায় । লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে কিন্তু বাসের জন্য অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটে না । লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত আকাশের হথাৎ পাশে দাঁড়ানো মেয়েটার সাথে eye contact হয়। সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে ফেলে আকাশ । মেয়েটার নাম সীমা, তার মহল্লাতেই থাকে ।

কেমন আছেন ভাইয়া ? সীমা প্রশ্ন করে
- ভালো, তুমি?
- ভালো ।
তারপর দুজনেই চুপ ।

সীমা নামের এই মেয়েটিকে আকাশ পছন্দ করে, কিন্তু কেন করে তা সে নিজেও জানে না, তবে এটা কোন মোহ নয় সেটা সে বুঝতে পারে কারণ মোহ হলে তার প্রতি এই না বলা একতরফা ভালোবাসা কখনই ৩ বছর স্থায়ী হত না । আর তাছাড়া human Brain সব সময় কোন সমস্যার Alternate path খোঁজে কিন্তু আশ্চর্য কারণে তার brain এইক্ষেত্রে অন্য কোন মেয়ের চিন্তা calculation এ আনে নাই । মেয়েরা নাকি এই পছনের ব্যাপারগুলো খুব ভালভাবেই বুঝতে পারে তাহলে এই মেয়েটাও কি...

হথাৎ বৃষ্টি ইলশে গুড়ি থেকে ঝুম নাম ধারণ করে । অর্থাৎ বৃষ্টি বেড়ে যায় সবাই ছাতা মেলে পানির হাত থেকে গা বাঁচায় । আসলে গা বাঁচাতে পারে না যা বাঁচে তা হোল মাথা । অনেকে আবার অন্যের ছাতায় মাথা বাঁচায় । সীমাও ছাতা মেলেছে কিন্তু আকাশের ছাতা মেলতে ইচ্ছে করছে না, তার ইচ্ছে হচ্ছে সীমার সাথে এক ছাতার নিচে দাড়াতে । বৃষ্টি পড়ছে আকাশ ভিজছে । সে সীমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । সীমা হথাৎ বলে
- ছাতা নেই সাথে?
-- না
- আসেন, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর চলে আসবে ।
সুবোধ বালকের মত সীমার ছাতার নচে মাথা রাখে আকাশ । “বৃষ্টির দিনে ছাতা না এনে এরকম বোকামি কেউ করে ?” কিছুটা অনুযোগের সুরেই প্রশ্ন করে সীমা । আকাশ সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল “যাচ্ছ কোথায়” ? “University , বাসের জন্য wait করছি অনেকক্ষণ ধরে” । উত্তর দেয় সীমা ।


বিরক্তিকর এই বৃষ্টিতে মানুষের মন কেন রোমান্টিক হয় আকাশ যেন বুঝতে পারে! সে মনে মনে প্রার্থনা করে যেন বাস আসতে দেরি হয় আর এই বৃষ্টি যেন না থামে। বিধাতা তার দুটো প্রার্থনার একটা মঞ্জুর করে । বৃষ্টি পড়তে থাকে কিন্তু ক্ষণিকা নামের লাল রঙের দোতলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের student বাসটি চলে আসে । সীমা বলে
- ভাইয়া আমাকে যেতে হবে ।
-- ঠিক আছে ভালো থেকো ।
- ছাতাটা রেখে দেন, নাহলে ভিজে যাবেন ।
-- কিন্তু ছাতা ফেরত দেব কিভাবে .
- কাল দিয়েন, আমি চললাম bye .।
সীমা চলে যায়, কি হোল আকাশ যেন কিছুই বুঝতে পারে না সব কিছু স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তার কাছে ।


বিকেলে বাসায় ফেরার সময় বাস স্টপেজ থেকে নেমে রিকশা নেয় আকাশ । আকাশে এখনও মেঘ আছে তবে সেটা কালো নয় সাদা। এমনিতেই সকাল থেকে মনটা ভালো ছিল তার, তার উপর প্রকৃতির এই সুন্দর বিকেলটা সেই ভালো মনটাকে আরও ভালো করে তোলে। আপন মনে গেয়ে ওঠে সে

“ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরির খেলা রে ভাই লুকোচুরির খেলা,
আজ নীল আকাশে কে ভাসালো শাদা মেঘের ভেলা রে ভাই লুকোচুরির খেলা" ।

গানটা হথাৎ থেমে যায় তাদের এলাকার মসজিদের সামনে রাখা খাটিয়ার উপর একটা লাশ দেখে। সাদা কাফনের কাপড়ে আপদমস্তক আচ্ছাদিত লাশটি কার ? কেন যেন খুব জানতে ইচ্ছা করে আকাশের । রিকশা থামিয়ে তাই একজনকে জিজ্ঞেস করে
- কে মারা গেছে ভাই?
-- আনোয়ার সাহেবের বড় মেয়ে ।
কথাটা শুনে বুকের ভেতরটা যেন মুচড়ে ওঠে তার । কারণ আনোয়ার সাহেবের বড় মেয়ের নাম সীমা ।
- কিভাবে মারা গেছে ?
-- বাসায় ফেরার সময় অ্যাকসিডেন্ট করেছে । বাস থেকে নামার সময় পা ফস্কে রাস্তার পাশে পড়ে যায় । পিছন থেকে আরেকটা বাস এসে ধাক্কা দেয় । সাথে সাথেই spot death.

নামাযের আরও আধা ঘণ্টা বাকি আছে । বাসায় এসে তারাতারি বাথরুমে ঢুকে পড়ে গোসল করার জন্য । তার না বলা প্রেয়সীর জন্য শেষ প্রার্থনা একটু পরে । গায়ে পানি ঢালে, কিন্তু পানি মৃদু গরম লাগে আকাশের ।....... ..... ঘুমটা ভেঙে যায় তার । দেখে তার ১ বছরের ছোট্ট ত্যাঁদড় ভাগিনা নিহান তার গায়ে হিসু (প্রস্রাব) করে দিয়েছে । অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে “দুলাভাইয়ের পো”!!!!

“দেখ আপা তোর এই বান্দর পোলা কি করসে” কথাগুলো বলে তার বড় বোন নিলার দিকে তাকায় আকাশ । নিলা একগাল হাসি দিয়ে বলে “ঠিক কাজ করেছে, এখন বাজে ১২ টা এত বেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমায় নাকি !”

একটুপর আকাশের আম্মা এই ঘরে আসে । “দেখো মা তোমার গুণধর নাতির বাঁদরামি আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আর ও আমার গায়ে প্রশ্রাব করে দিয়েছে”।
- নে যা করার তা তো করেছে । এখন তুই গিয়ে গোসল করে নে । আজ একটা বিয়ের দাওাত আছে । কাল তুই রাতে দেরি করে ফিরেছিস তাই তকে বলা হয় নি ।
-- কার বিয়ের দাওয়াত ?
- আনোয়ার সাহেবের বড় মেয়ে সীমার আজ বিয়ে ।

আকাশের প্রচন্ড কান্না পায়, যে দুঃস্বপ্ন আজ দেখেছে সেটা যে আজকেই সত্যি হতে হবে ! ছোটবেলায় একটু বেশি রাগ হলেই কান্না চলে আসত তার । তখন সে কান্না লুকানোর জন্য বাথরুমে চলে যেত । সেখানে কেঁদে চোখমুখে পানি দিয়ে আসত । কেউ বুঝতে পারত না শুধু তার মা পারত । আজও সে বাথরুমে গেল এবং কান্না শেষে চোখমুখে পানি দিয়ে আসল । বাথরুম থেকে বের হয়েই আকাশের সামনে পরে তার মা .......

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×