somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প - তরফদার সাহেবের স্বীকারোক্তি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অারাফাতের মেজাজ কিঞ্চিৎ খারাপ। তরফদার সাহেব অনুমতি না নিয়ে তার সামনে বসে পড়েছে। স্টাফদের এমন অাচরন সে সহ্য করতে পারে না। কষে একট চড় লাগাতে তার ইচ্ছা করছে। চাকুরি বিধি অনুযায়ী চড় দেবার ক্ষমতা থাকলে এতক্ষণে সে নির্ঘাত একটা চড় বসিয়ে দিত। তা যেহেতু করার উপায় নেই তাই চড় থাপ্পড়ের বিষয়টা চেপে রেখে সে জিজ্ঞেস করল, কি খবর?

তরফদার সাহেব কিছু একটা বললেন। অারাফাতের কানে অবশ্য সে কথাগুলো ঢুকল না। তার চোখ টিভির দিকে। তরফদার সাহেবের চাকুরি সামনের সপ্তাহে শেষ। চাকুরি শেষের দিকে এসে সবাই অযথা বকবক করে। তরফদার সাহেবও গত ক'দিন ধরে অযথা বকবক করছেন। তরফদার সাহেবকে সে কোন কারন ছাড়াই সহ্য করতে পারে না। তবে অার কয়েকটা দিন তাকে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে হবে। লোকটা টানা ছত্রিশ বছর এ অফিসে চাকুরি করেছে। চাকুরি শেষ হওয়ার ঠিক অাগে তার সাথে খারাপ ব্যবহার সে করতে চায় না। বয়সে সে তরফদারের ছেলের বয়সী হলেও অারাফাতই অফিসের বস। অার বস মানেই অভিভাবক। অভিভাবকের অাচরন হবে পিতৃসম।

তরফদার সাহেব বকবক করছেন। অারাফাত শুনছে না। তার মনে কি জানি একটা চিন্তা চলছে। তবে কথার পিঠে কথা না বলাটা ভাল দেখায় না। কথার কথা হিসেবে অারাফাত জিজ্ঞেস করল, অবসরে কি করে সময় কাটাবেন?

তরফদার সাহেব খানিকটা গদগদে গলায় বললেন, ছাদ বাগান করব স্যার। ফ্রেশ শাক সবজি যেমন পাওয়া যাবে তেমনি শরীরটাও নড়াচড়া হবে।

অারাফাত এ উত্তরটা অাশা করেনি। তবে কথা বাড়াল না। টিভিতে এক ভদ্রলোক খুব মন দিয়ে বেহালা বাজাচ্ছে। চট করে অারাফাতের বেহালার নেশাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বহু বছর ধরে তার ইচ্ছে বেহালা শেখার। অালসেমী করে শেখা হয়নি। অারেকটা কারনও অাছে। সে অন্য এক উপন্যাস। এখানে অপ্রাসঙ্গিক। অপ্রাসঙ্গিক কারনটার জন্য অারাফাত অাচমকা অন্য রকম হয়ে গেল। তরফদার সাহেব তার স্যারের পরিবর্তনটা ধরতে পারলেন। তিনি উঠে যেতে শুরু করলেন। তবে উঠার অাগেই অারাফাতের কথায় থামতে হল। অারাফাত তাকে জিজ্ঞেস করল, অাচ্ছা তরফদার সাহেব চাকুরি তো শেষ করলেন। জীবনটাও তো শেষ করলেন। জীবনের শুরুর স্বপ্নটার কতটুকু পূরন করতে পারলেন?

তরফদার সাহেব চুপ করে থাকল। কি বলবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না। তার এই স্যারটা অন্য রকম। মাঝে মাঝে এমন কথা বলে বসে যার কোন উত্তর তাদের কাছে থাকে না। অারাফাত অাবার জিজ্ঞেস করল, স্বপ্নটা কি ছিল অাপনার তরফদার সাহেব?

তরফদার সাহেব এবারও উত্তর দিলেন না। তার স্বপ্নটা কি ছিল তা তার মনে পড়ছে না। অাবছাভাবে মনে অাসছে তার একটা টিয়া পাখির শখ ছিল। কখনও পাখিটা পোষা হয়নি। রেলের ইঞ্জিনের ভেতরটা দেখার শখ ছিল এক সময়। ওটাও দেখা হয়নি। অারও বড় বড় কিছু স্বপ্ন হয়ত ছিল। কিন্তু তিনি বহু কষ্ট করে অার একটা স্বপ্নের কথাও মনে করতে পারলেন না। তিনি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন।

অারাফাত এবার অার তাকে থামাল না। সে বেহালার সুরে ডুবে গেছে। তরফদার সাহেবের বড্ড মায়া হল মানুষটার জন্য। মায়া বড় খারাপ জিনিষ। তরফদার সাহেব হুট করে বলে বসলেন, জীবনের শুরুতে কি স্বপ্ন দেখে ছিলাম তা বহু কষ্ট করেও মনে করতে পারলাম না স্যার। ভুলে গেছি। চাকুরি করেছি। পেট ভরিয়েছি। ছেলে-মেয়ে মানুষ করেছি। এ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে স্বপ্নগুলো যে কখন মরে গেছে তা টের পাইনি। ভেতরটা বহু অাগেই মরে গেছে স্যার। এখন অপেক্ষায় অাছি কবে শরীরটা মরবে।

কথাগুলো বলে তরফদার সাহেব বেরিয়ে গেলেন। টিভিতে বেহালায় পরিচিত সুর। অারাফাতের ভেতর থেকে কে জানি সুরের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে মৃদু স্বরে বলতে শুরু করল -

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।।

অারাফাত অাপনমনে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চোখ দুটো মুছতে শুরু করল। তরফদার সাহেবের স্বীকারোক্তির শুনে কান্না করা অারাফাতকে মানায় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫০
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×