রহিম আজ যারপারনাই খুশি। আর তার থেকে দুই তিন গুণ খুশি ময়না। সে আজ পেট ভরে রহিমের কিনে দেয়া নান্নার বিরিয়ানি খেয়েছে। আহ কিযে ভাল খেতে। রহিম তো নিত্য কিনে দেয় না। ম্যানেজার চাচা আবার দুই ভাই-বোনকে দু চামচ করে এক্সট্রা দিয়েছে। ইশ প্রতিদিন যদি খেতে পেত সে! রহিম ছোট বোনটিকে আদর করে ধাক্কা দেয়, কিরে , আইজকা তো তুই নাচতি নাচতি পড়ি যাবি।চল পার্কে যায়, ফুল বেচতি হয়বো না?
ময়না খিলখিল করে হাসে, আগে ক আগামি মাসেও খাও্য়াবি।
আইজকা যদি সইন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ টা ফুল বেচতি পারিস তো কালকেই খাওয়ামু।
এ্যা, গত বছর কইছিলা খাওনের কথা। আর খাও্য়াইলা এইহনে। আমি তোমার থেইক্যা বেশি ফুল বেচি পত্তেকদিন।
কথাটা সত্যি , ময়নার মায়া মুখ দেখে যার ফুল অপছন্দ সেও কিনে। এই জন্য মাত্র ৭ বছরের বোনটিকে নিয়ে রহিম রোদের মধ্যে পার্কের এ মাথা ওমাথা ঘুরে ফুল বেচে। আজ এমনিতে একটু বেশি খরচ করে ফেলেছে। সেটার লোকসান পুষিয়ে নিতে হবে।
রহিম বলে, এখন খাওয়াইছি না । চল যায় ফুল গুলান ল।
এর ওর কাছে ফুল বিক্রি করে ওরা। হঠাৎ দেখে মিঠুন ভাইয়া আর সাথী আপু বসে আছে। ওরা রহিমের রেগুলার কাস্টমার। আসলেই মিঠুন ভাইয়া আপুর জন্য সাত টা করে গোলাপ কিনে। আর ওদের সাথে খুব গল্প করে। ময়না কে আপু নাম দিয়েছে ফুলকলি।
রহিম বলে, ভাইয়া আর আপু আইছে চল ঐ দিকে যায়। কাছাকাছি যেতে ওরা শুনতে পায় সাথী আর মিঠুন কথা কাটাকাটি করছে। রহিম ময়নার হাত ধরে থমকে একটু দূর থেকে শুনতে থাকে।
সাথী বলছে, তুমি এতদিন পর কেন এসব নিয়ে চিন্তা করছো? এসব তো আগেও ভাবতে পারতে? এখন কেন?
মিঠুন বলে, কখনো না কখনো তো তোমার বাস্তবতা নিয়ে ভাবতে হবে।
এতদিন কি তবে আমরা কল্পনায় ছিলাম ? সব তোমার অভিনয় ছিল?
দেখ সাথী, সময়ের সাথে অনেক কিছু নতুনভাবে ধরা দেয়। গতকাল শুক্রবার ছিল তাই বলে আজ তো শনিবার। প্রতিদিন আমরা চেন্জ হচ্ছি তো নাকি!
এসব কি যুক্তি তুমি বকছো? কাল বৃষ্টি ছিল কিন্তু আজ তো আকাশ পরিস্কার এটা কোন কথা হল? তার চেয়ে সত্যি টা বল তুমি আর আমাকে পছন্দ করতে পারছো না।
ব্যপারটা এতটাই যদি সহজ হতো তুমি কি বুঝতে না বল? আমি এখনো স্ট্রাগল করছি তুমি ভাল চাকরি করছো। এখন বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করেছে। জানোই তো আমার নিজের কোন ঠিক নাই , সরকারী চাকরির বয়স প্রায় শেষ , জানি না ভবিষ্যতে কি করবো। আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যতে আমি তোমাকে কতটুকু সুখী করতে পারবো?
আমি কি তোমাকে কখনো এসব নিয়ে জ্বালাতন করেছি? সুখ তো নিজেদের ব্যাপার। আমার তো কখনো মনে হয়নি আমি তোমাকে নিয়ে খুব টেনশনে আছি বা নিরাশায় ভুগছি।
আমি চাইনা সাথী আমার জন্য তুমি এমন কিছু মিস কর যা তুমি ডিসার্ভ কর অথচ আমি দিতে পারবো না।
আর তুমি এটা কিভাবে মনে কর তুমি না পারলে অন্য কেউ এটা পারবে? আমি অন্য কাউকে পারতে দিবোই বা কেন? আমার কাছে তোমার বিকল্প কেউ কি হতে পারে বল? কিংবা আমার জায়গা তুমি কি কখনো পারবে অন্য কাউকে দিতে?
মিঠুন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে , আমি শুধু চাই তুমি খুব ভাল থাক।
সাথী গলা নামিয়ে এনে বলে, দেখ মিঠুন, আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা তুমি নিওনা। আমি তোমাকে ভালবেসে অন্য কার সাথে সুখী হতে চাই না। আমারও তো কিছু চাওয়া পাওয়া আছে নাকি! এটা আমার ডিসিসন। আমার জন্য তোমার নিখাদ আবেগই আমার কাছে বড় ব্যাপার। তুমি না চাও ঠিক আছে আমি তোমাকে আমার সাথে থাকার জন্য বাধ্য করবো না। কিন্তু তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে আমাকে বলো না প্লিজ। আর ন্যাকামি বন্ধ হলে দয়া করে ফোন দিও।
সাথী উঠে চলে যায়।
বাচ্চা দুটো হা করে তাকিয়ে থাকে।
রহিম তাড়াতাড়ি সাতটি গোলাপ আলাদা করে ময়নার হাতে তুলে দেয়। বলে, দৌড়ায় যাবি আর সাথী আপু রে দিবি। ময়না রওনা দিবে আবার রহিম ডাকে, শোন ট্যাকা দিতে চাইলে নিবি না , বলবি ভাইয়া দিসে।
রহিম মিঠুনের সামনে ফুলের মগ টা নিয়ে দাড়ায়। মিঠুন শূন্য দৃষ্টিতে তাকায়। অভ্যাস বশত গুনে গুনে সাতটি ফুল হাতে নেয়।তারপর বিড়বিড় করে বলে , তোমাকে যে ভুলে চাহিয়াছে একদিন, সে জানে তোমাকে ভুলা কত যে কঠিন। এরপর আনমনে ফুল গুলো মগে রেখে দেয়।
বাকি টা ইতিহাস।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




