somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

অনলাইনের কিছু বাজে অভিজ্ঞতা, একা বসে কান্না ছাড়া আর উপায় দেখি না!

২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের প্রায় সব বয়সি নারীরা এমন একটা অভিযোগ করেন যে, তিনি অনলাইনে নানাভাবে উত্যাক্ত হয়ে থাকেন। বলা নাই কয়া নাই হঠাত করে তিনি একম কিছু মেসেজ বা কল পান যে, তাতে তিনি মানসিক কষ্টে পড়ে যান। তার এই কষ্ট দেখার কেহ থাকে না। আসলেই এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশের মত নয়। আমি আমার অভিজ্ঞতার একটা কথা বলি, সেই ২০১০ সালের বা আরো কয়েক বছর আছের হতে পারে, তখন এক উদিয়মান লেখিকা বা ব্লগার অনেক ব্লগে চমৎকার লিখতেন এবং বাজারে তার একটা কবিতার বই ছিলো। নাম বললে আমার সমবয়সি অনেক তাকে চিনে থাকবেন এবং যারা আমরা সেই সময় থেকে ব্লগিং এ আছি তাদের কাছে তিনি যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন। আমি উনাকে একটা ব্লগিং সাইটের এক অনুষ্ঠানে দেখেছি এবং কথাও হয়েছিল। যতদুর জানতে পারছিলাম তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে একটা এনজিও তে কাজ করছিলেন।

আমার রাত জাগা অভ্যাস পুরানো, আমি রাত ৩টা পর্যন্ত সেই ২০০০ সাল থেকেই জেগে থাকি, এটা নানান কারনে অভ্যাস হয়েছে। অফিসের নাইট ডিউটি সহ প্রবাসে থাকার কারনে আমার এই অভ্যাস, পাশাপাশি আমি রাতেই মুলত ব্লগে লিখে থাকি বা পড়ি। একদিন রাতে এমনই সেই ব্লগে পড়ছিলাম। উনার লেখায় কমেন্ট সেকশনে দেখি কে যেন খুব বাজে বাজে অশ্লীলছবি দিয়ে আজে বাজে কমেন্ট করছে এবং এই ছবি গুলো দেখা ও কমেন্ট পড়া এতই নিন্মমানের যে, আমি নিজেও অস্থির হয়ে পড়ছিলাম। নানাভাবে সেই সময়েই সেই ব্লগের মডারেটর (তখন মডারেটর চেনা যেত না বা ব্লগের মালিক/প্রকাশক চেনা যেত না, অনুমান করলেও কেহ এই দায়িত্ব নিতো না) বা ইনফোতে যোগাযোগ করছিলাম, কিন্তু রাত থাকার কাউকেই পাই নাই বা উত্তর পাই নাই! সেই রাত আমি কিছুতেই ঘুমাতে পারি নাই, এবং এই কমেন্ট গুলো পরের দিন সকাল ১১টা পর্যন্ত ছিলো, ব্লগের পরিচালকেরা টের না পাওয়া পর্যন্ত।

আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, সেই দিন থেকে আমি সেই নারী ব্লগারকে খেয়াল রাখছিলাম, তিনি সেই যে পালিয়েছেন, তার কখনোই তাকে অনলাইনে দেখি নাই (আজও)। মানে তিনি অনলাইনের সব কিছু ছেড়ে বা মুছে দিয়েছিলেন হয়ত সেই দুঃখেই। তিনি হয়ত এখন অনলাইনে আর নেই বা থাকলেও সেই নামে আর হয়ত নেই! ব্যাপারটা ভেবে দেখুন, একজন মানুষ অন্য মানুষের আচরণে কত কষ্ট পেতে পারেন। যাই হোক, এর পর একদিন উনার সাথে বাস্তবে আমার বেইলী রোডের এক মার্কেটে হঠাত দেখা হয়ে গিয়েছিল, সালাম বিনিময়ের পর তিনি আর তেমন কথা বাড়ান নাই এবং আমিও এই বিষয়ে বা তিনি এখন কেন লিখছেন না তাও জিজ্ঞেস করার সুযোগ দেন নাই। আজ এত বছর পরেও এই ঘটনা যদি আমি নিজে না ভুলতে পারি তবে তিনি ই করে ভুলবেন!

যাই হোক, এবার নিজের কিছু দিন আগের ঘটনা বলি। ফেইসবুকে এমনিতে এই সব বাজে অভিজ্ঞতার কারনে খুব একটা যেখানে সেখানে যাকে তাকে কমেন্ট করি না, আগে এই সবনিজে অনেকের সাথে অনেক প্রকারের ঝগরা ঝাটি করেছি, এখন আর এই সব ভাল লাগে না বলে উত্তর বা সত্যের বিপরীতে লেখা দেখলেও কিছু না বলে পার হয়ে চলে আসি, তবে নিজের স্ট্যাটাস বা নিজের লেখায় কেহ এমন বিরূপ মন্তব্য করলে বিতর্ক কিছু হলেও করতে হয়। তবে যেহেতু সারা দিন অনলাইনে থাকি, ফলে অনেক কিছু চোখে পড়ে। কয়েকমাস আগে এমনই চট্রগ্রামের এক বন্ধুর স্ট্যাটাস দেখে আমি তাতে 'লাইক' দেই। গল্পের মত কিছু ছিলো, তবে বিরূপ গল্প, আমি লাইক দিয়ে মুলত লেখার সাথে থাকতে চাইছিলাম। ওমা সেকি, রাতে আমি আমার মেসেঞ্জারে দেই সেই ছেলের কি সব অদ্ভুত গালি এবং তুই তুই করে। লাইক দেয়া কি অপরাধ? আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না, ফলে খুব ভদ্রভাষায় উত্তর দেই, ভাই আপনার সমস্যা কি? ওরে, এতে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে পারলে আমাকে অনলাইনেই মেরে ফেলে, মা বাবা তুলে গালিও দিয়েছিল! যাই হোক, পরে এই ছেলের পরিচয় বের করে ছিলাম, আমাদের আরেক পরিচিত বন্ধুর শালা, তিনি জানালেন সে ইয়াবা এডিক্ট, ইয়াবা টেনে স্ট্যাটাস দিয়েছিল এবং যারাই তার পোষ্ট লাইক কমেন্ট করেছে তাদের সে ধুয়ে দিয়েছে! এমন আরো কয়েকজনকে পেয়েছিলাম। আফসোস ছেলেটার বয়স ছিল মাত্র ২০/২১ বছর! এই ঘটনায় আমি প্রায় ১০/১২ জন ফেবু বন্ধু হারিয়েছিলাম এবং এখনো চট্রগ্রাম থেকে কেহ ফেন্ড রিকো দিলে আমি ভয় পাই যে, এই লোক কি সেই ছেলের বন্ধু কি না!

এরপরে আরো কিছু দিন পরে, আমার স্ট্যাটাস এ ইতালী থেকে একজন এমন কমেন্ট করলো যে, আমি সামান্য উত্তর দিয়ে পার পেতে চাইলেও সে তার চোদ্দ গুষ্টী নিয়ে এসে আমার সাথে ঝগড়া করলো, ফলাফল তাকে সহ প্রায় ৭/৮ জনকে আমি বাধ্য হয়েই ব্লক দিলাম। অথচ এটা পুরাই একটা আজাইর‍্যা প্যাচাল!

এবার গত কয়েকদিন আগের ঘটনা বলি, আমি ফেবুতে হিরো আলমের চুল নিয়ে মজা করে ছবি নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেই যে, হিরো আলমের কোন কিছু ভাল না লাগলেও চুল নিয়ে হিংসা হয়! এটা স্রেফ ফান করা ছিলো এবং তার ছবি মুক্তি উপলক্ষে একটু বন্ধুদের সাথে মজা করা। ওরে আমার বিধাতা, সেখানে এক ফেবু বন্ধু (পরে দেখি সে এই সামু ব্লগের ব্লগার) আমাকে লিখলো, আমি আমার স্ট্যাটাস না মুছলে তিনি আমাকে আনফেন্ড করবেন? দেখন অবস্থা, অনলাইনে আমি কি লিখবো না লিখবো, এই ছেলের কাছ থেকে আমাকে শিখে নিতে হবে বা আমি তার যেন বাবার কেনা গোলাম যে, তার মতামতের মত লিখতে হবে! যাই হোক সামান্য যুদ্ধের পর সেই আমাকে মা তুলে একটা গালও দিয়ে দেয়! আরো বলে আমি নাকি তাকে ব্লগে ফলো করি, সে কাউকে ফলো করে না (এটা কোন কথা হল!) এবং সেই আমাকে ব্লক করে দেয় আমিও বিষয়টা ভুলে যেতে চেষ্টা করি! ওমা, সামু ব্লগে এসে দেখি, সে আমার পোষ্ট পুরাই একটা বাজে মন্তব্য করে বসে আছে এবং আমাকে ব্লক করেছে! কারবার দেখেন, ফেইসবুকের সাধারণ একটা বিষয় সে ব্লগেও নিয়ে এলো। যাই হোক, পরে সামু মডারেটর প্যানেলের বিচারে তাকে জেনালের করা হয়, এখন দেখি সে নানান ব্লগে হায় হায় করে কমেন্ট করে! আমি তার নাম উল্লেখ করছি না, তবে আমার কাছে তার সব কাজের স্ক্রীন সর্ট আছে, চাইলে দেখাতে পারবো। (নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকলাম কারন এই বিষয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না)

সত্যই আমাদের ভয়াবহ অবস্থা এই সামান্য অনলাইনেই! এখন বেশ কিছু ব্যাপার যেন আর মাথায় ধরে না, কে কোথায় ওত পেতে আছে কে জানে। একজন ব্লগার হিসাবে অনেক সময় অনেক মতামত লেখি যা কখনো কখনো মানুষ বা সরকারের বিরুদ্ধে যায় কিন্তু এই গুলো খুব সামান্য ব্যাপার বটেই কারন বিবেকবোধ বা পরিবার নিয়ে সবার আগে চিন্তা হয় ফলে অনেক সময়েই নিজকে সংযত রাখি, অন্যায় দেখলেও অনেক কিছু না দেখার ভান করে যাই। তবে অভিজ্ঞতায় এখন যে কয়েকটা ব্যাপার মনে হয়-

* অপরিচিত কাউকে এড করাই যেন বোকামি, অথচ অনলাইনের এটাই একটা আলাদা আনন্দ ছিলো
* এমনকি ব্লগে বা সোস্যাল মিডিয়াতে কাউকে ফলো করাও যেন অপরাধ
* কারো সাথেই চ্যাটিং করা উচিত না, বিপদ হাতে ধরে নিয়ে আসা
* অন্যের ব্লগে পোষ্টে মন্তব্য, লাইক বা কোন রিয়েক্ট দেখানোই যাচ্ছে না
* সহমদ ভাই হয়ে থাকা উত্তম যেন

যাই হোক, শেষ কথা বলি। নিজকে অনলাইনে অসভ্য খুনী ধর্ষকের মত (এদেরো যুক্তি আছে বটে) বা হিসাবে প্রমান করিয়েন না, এটা সাধারণ একটা জায়গা, সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে, ক্ষণস্থায়ী! মানুষ অনলাইনে থাকে সাধারণ আনন্দ ও সময় পার করার জন্য, পাশাপাশি হয়ত কিছু মতামত জানিয়ে দেয়। আপনি ব্লগে ও ফেইসবুকে আমার সাথে আছেন সেই কারনেই! যদি সব কিছু বিচার করে আপনাকে বন্ধু বানাতে হত তবে আপনি আমার বন্ধুও হতেন না, কারন আমার বয়স, অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে! অন্যদিকের বিবেচনায় আপনিও হয়ত আমাকে বন্ধু বানাতেন না! অনলাইনে এই সব বিবেচ্য নয় বলেই আমি আপনি বন্ধু, এঁকে অপরের স্ট্যাটাস/ব্লগে কমেন্ট করেছি বা বন্ধু বানিয়েছি, এত হিসাব নিকাশ করে কি মানুষ অনলাইনে চলে? না! ফলে বন্ধুত্ব নির্ভর করে আপনার আমার আচরণের উপর।

হেপি অনলাইন ফেন্ডস!

বি দ্রঃ অনলাইনের নানান শ্রেণীর লোকের মধ্যে ব্লগারদের সব চেয়ে বেশি ভাল (বিবেক, বুদ্ধি, প্রকাশ, বিচারে) মনে হয় অথচ ধারনা পাল্টে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:০৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×