somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

একজন সামাদ হোসেন! (গল্প না বাস্তব)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসুন পড়ে দেখুন, সংক্ষেপে লেখা, বাদ বাকী আশে পাশে নিজে কল্পনা করে নিবেন। ধরেন এই গল্পের মুল চরিত্রের নাম সামাদ হোসেন, বয়স ৫৮, মেহেরপুরে আদি নিবাস। ২৮ বছর আগে তিনি ও তার স্ত্রী এক ছেলেকে নিয়ে এই শহরে আসেন, কারন ছিলো একটাই, ছেলেটা মেধাবী কাজেই একটা ভাল স্কুলে বা শিক্ষায় শিক্ষিত করা যাবে। তখন গ্রামে প্রায় ৩০ বিগার মত জমি ছিলো, ঘর দুয়ার ছিলো, অবস্থাপন্ন কৃষক ছিলেন, পড়াশুনা সামান্য ছিলো, সেই সময়ে কিছু টাকা নিয়ে এই শহরের এক কোনায় উঠে পড়েন, ছেলেকে শহরের স্কুলে ভর্তি করে তিনি একটা হার্ডওয়্যারের দোকান দিলেন, কারন ইনকামের প্রয়োজন। শহরে বড় ছেলে পড়া শুরু করলো, পাশাপাশি দুই বছরের শেষে আরো এক ছেলে সন্তান হল। দোকানের পুজি যোগাতে গ্রামের কিছু জমি বিক্রি করে দিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবার বলা চলে বা হয়ে গেলেন।

বড় ছেলে ১০ম শ্রেনীতে পড়ার সময় তিনি আবিস্কার করলেন, ছেলে গাঁজা সহ অন্যান্য নেশায় আসক্ত, কারন তার কথা আচ্রন, পড়াশুনা না করা সহ সব কিছুতে গোলমাল হয়ে উঠলো, এত আদরের সন্তানের এই পরিনতি। এর পরে ছেলে আর পড়লো না, চেষ্টার কমতি ছিল না, দোকানের সামান্য ইনকাম এবং আরো জমি বিক্রি করে ইনভেষ্ট সহ খরচ চলছিলো। ছেলে পড়াশুনা ছাড়ার পরে ভাবলেন এবার নিজের ব্যবসায় বসাবেন, তাই করলেন। এক বছরের মাথায় ছেলে সামান্য ব্যবসা শিখলো কিন্তু নেশা ছাড়তে পারলো না, পিতা মাতার সাথে খারাপ ব্যবহার চলছিলো, ইত্যমধ্যে এক মেয়ের সাথে প্রেম করে লুকিয়ে বিবাহ করে ফেলল। তবুও সামাদ সাহেব নির্বিকার, এক সময়ে ছেলে স্ত্রীর খরচও দিতে লাগলেন, টাকা যাচ্ছে, তবুও ছেলের মন পেলেন না, পরিবর্তন হল না। এর মধ্যে ছেলে জিদ করে আলাদা দোকান দিয়ে দিলো, শোনা যায় শশুড়বাড়ি থেকে টাকা নিলো, সংসার আলাদা করে পুরাই আলাদা! ছেলে আর ফিরেও আকালো না, সামাদ সাহেব এবং তার স্ত্রী ছোট ছেলে নিয়ে মনঃকষ্টে দিন পার করতে থাকলেন। ছেলে আর বাসায় ফিরে এল না, পরে শোনা গেল ছেলে সেই দোকান না চলাতে বিক্রি করে সৌদিতে চলে গেছে। যে সন্তানকে নিয়ে এই শহরে এলেন সেই সন্তানের কথা মুখ দেখে নেই অনেক বছর।

এর মধ্যে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী, ছোট ছেলেও নামকরা স্কুলে পড়ছে, এদিকে বাড়ির সব জমি বিক্রি প্রায় শেষ, নিজের ব্যবসায় বাকী, সাপ্লাইয়ের দেনা ও ব্যাংক লোন, দোকান মডগেজ, সিসি লোন সব মিলিয়ে বেশ খারাপ অবস্থায় পড়ে গেলেন করোনার সময়ে, এই সময় প্রায় বসে সব চালিয়ে গেলেন, কিন্তু উপার্জন নেই, ব্যস বলা চলে সব চাপ এসে পড়লো। ফাঁকে বলে রাখি, ব্যবসা, জমি বিক্রি ও আয় থেকে কয়েক লক্ষ্য টাকা দিয়ে ৩ কাঠা জমি কিনেছিলেন, সেখানে একটা এক তলা বিল্ডিং তুলেছিলেন, যাতে তিনি ছোট ছেলে নিয়ে বসবাস করছিলেন। ব্যবসায় টাকার প্রয়োজনে এই জায়গা টুকুও মডগেজ রেখেছিলেন ব্যাংকে।

করোনায় পরে শত চেষ্টা করেও দাঁড়াতে পারলেন না, মালামাল বিক্রি হয় না, বাকী দিতেই হচ্ছে, যারা মাল নেয় তারা পরিশোধ করে না, সব মিলিয়ে হিজিবিজি। ব্যাংক থেকে নোটিশের পরে নোটিশ, মামলা, পাওনাদারেরা প্রায় তাগাদা, শহরের খরচায় কোন ছাড় নেই, সব মিলিয়ে খুব দুঃসহ জীবন, কুল নেই।

গত বুধবার ব্যাংক ফাইনাল নোটিশ দিলো, জমিটা নিলামে তুলবে, তা্রা বুধবার স্বশরীরে আসবে। সামাদ সাহেব আর সইতে পারলেন না, মঙ্গলবার রাতে, বুধবার সকাল পর্যন্ত কিছুতেই ঘুমাতে পারলেন না এবং অবশেষ সিলিং ফ্যানের সাথে দড়ি দিয়ে পরপারের পথ বেছে নিলেন, তথা আত্মহত্যা করে নিজকে মুক্তি দিলেন!

ঘটনা আপনারা একটু এলাবরেট করে চিন্তা করে দেখতে পারেন, একটা মানুষ সন্তানের শিক্ষায় ভাল জীবনের জন্য শহরে এলেন, ২৮ বছরেও টিকতে পারলেন না, বড় সন্তান গেল, ছোটটাও সেই পথে, সামান্য সঞ্চয় হয়েও সেটা বেহাত, দেনা পাওনার হিসাব যারা বুঝেন তারা অনুমান করতে পারেন। অন্যদিকে সামাদ সাহেবের স্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা চলে না, বুঝাই যায় গড়পরতা মেধা, খাওন দাওয়ন ঘুরিফিরি মার্কা হয়ত!

(মিরপুর এলাকার ঘটনা, সামাদ সাহেবের পরিচিত লোকের কাছেই শোনা, সত্য। নিজেকে আয়নায় এমনি দাঁড় করান, এর বাইরে আর কি দেখা যায়!)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×