শেখ হাসিনাকে ইতিহাস তার স্থান দিয়ে দিয়েছে, তিনি সেখানে নিন্মস্থানের বাসিন্দা হয়ে গেছেন, সামনে আর তার উঠে আসার তেমন সুযোগ নেই বা সম্ভব না। ইতিহাসবিদেরা তাকে নিয়ে চিন্তা করে কি কি ভাল লিখবে তা ভেবে পাওয়া দুরহ। প্রায় ২১ বছর একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে কেন তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হল, তা কারো অজানা নয়। এর দোষ, তার দোষ, এই দেশের দোষ, অমুকে কাজ করে নাই ইত্যাদি অনেক কিছু বলা হলেও, আমি মনে করি পুরা দোষ তার নিজেরই, তিনি নিজেই নিজের বুদ্ধিতে চলে তার জীবনের এই অসময় ডেকে নিয়ে এসেছেন বা পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
আমি তার রাজনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, তিনি রাজনৈতিক ভাবে পুরাই ভুল চিন্তায় দিনরাত কাটিয়েছেন, তিনি দেশের জনগণকে ভালবাসেন নাই, যাদের ভালবেসেছিলেন, তারা সারাদিন করেছে চুরি, দেশের অর্থ চুরি করে বিদেশ পাঠিয়েছে, প্রায় প্রতিটা তার কর্মী, ফলে তার পলায়নের সাথে সাথে তারাও সবাই পালিয়েছে বা পালাতে চাইছে। একজন নেতা কর্মী রাস্তায় এসে বলে নাই, আমি শেখ হাসিনার লোক, আমি কোন অপকর্ম করি নাই, আপনারা আসুন আমার কথা শুনুন। প্রায় প্রতিটা সামান্য ক্ষমতাপাপ্ত কর্মীও দুইহাতে রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাট করেছে বলে এখন মুখ লুকানোর জায়গা পায় না, পালাতে পারলেই যেন রক্ষা!
যাই হোক, শেখ হাসিনার পারিবারিক জীবন নিয়ে আমার মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, তিনি কি করলেন এই সব, নিজেও দেশ হারালেন, সন্তানদের দেশে ফেরার রাস্তাও চিরকালের জন্য বন্ধ করলেন! এদিকে তার স্বামী সন্তান নিয়ে চিন্তা করলে মাথা ঘুরে। ক্ষমতা পাবার পরে তিনি চাইলেই স্বামী সন্তানদের একটা আলাদা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারতেন কিংবা তাদের আলাদা করে তাদের মত করে জীবন দিতে পারতেন। ছেলেকে তিনি স্থায়ীভাবে দেশে এনে দেশের মানুষের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে এখানে কাজ করে এই দেশের মানুষের নানান উপকারে লাগার মত করে গড়ে তুলতে পারতেন। মেয়েকে তিনি নিজ ইচ্ছায় রাজাকারের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার পরে তিনি মেয়েকে তার স্বামী সন্তানদের সাথে আলাদা করে বাঁচতে দিতে পারতেন, মেয়ের জামাইকে নানান অর্থ লোভ থেকে মুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে দূরে সুখে থাকার চিন্তা করতে বলতে পারতেন, অহেতুক মেয়েকে কাছে টেনে তার জীবনও তছনছ করে দিলেন। মানে বলতে চাইছি বাংলাদেশী ট্রিপিক্যাল শাশুড়ির মত তিনি তার মেয়ের পরিবারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন, ফলাফল মেয়ে স্বামীহারা হয়ে গেল, নাতনীরা হল পিতৃহারা!
আমাদের দেশে এমন বহু নারী দেখা যায়, যারা নিজ পরিবারে স্বামীকে ভেড়া বানিয়ে রাখে, সাথে সন্তানদের সংসারেও ইন্টারফেয়ার করে তাদের জীবনও নষ্ট করে দেয়, শেখ হাসিনা তেমনি করেছেন, তাকে আমাদের দেশের সেই অসভ্য নারীদের সাথে তুলনা করা চলে। এইসব নারীদের স্বামীরা মুখে কিছু না বলতে পারলেও অন্তরে ঘৃণা করেই চলে এবং অকালে দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়, আর সন্তানেরাও এক অবর্নীয় দুঃসময় কাটিয়ে চলে। আপনারা নিশ্চয় এমন শাশুড়ি বাংলা সিনেমায় অনেক অনেক দেখেছেন। জহির রায়হানের সেরা সিনেমা 'জীবন থেকে নেয়া'র কথা নিশ্চয় মনে পড়ছে, রওশন জামিলের অভিনয়ের সেই চরিত্র, যেখানে স্বামী তার একটা গান এক জীবনে শেষ করতে পারে নাই, এই চরিত্রই আমাদের দেশের নারীদের মোটাদাগের চরিত্র, এর থেকে খুব কম নারীই বের হতে পেরেছেন, শেখ হাসিনা দুনিয়ার সব কিছু পেয়েও এই চরিত্র থেকে বের হতে পারেন নাই।
শেখ হাসিনার কাছে এই বাংলাদেশী জাতির কাছে অমর হবার সুযোগ ছিল, তিনি তা ভুল চিন্তায় হারালেন, হারিয়েছেন তার নিন্মমুখি সব ভালবাসা, তার সন্তানেরা, নাতী নাত্নীরা যদি কোন সময়ে ভাবতে বসে, সেখানেও তারা তাকে দোষী হিসাবে চিনহিত করবে যে, তার কারনে তাদের জীবন আনন্দময় হয় নাই, সুখের হয় নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি বলবেই।
মানুষ হিসাবে অনেক ছাড় দিতে হয়, ক্ষমা করতে হয়, নিজের ভুল বুঝতে হয়, নিজের ক্ষমতার প্রয়োগ করতে হয় না, নিজের ফোকাস কি তা ভাবতে হয়, নিজের সক্ষমতা অন্যের উপর চাপাতে হয় না, পাশাপাশি নিজের পদের কাজ বুঝতে হয়, খারাপ লোক পেলে তাদের দূরে রাখতে হয়, নিজের মধ্যে নৈতিক বিচার ব্যবস্থা দৃঢ় ও বিবেক জাগ্রত করতে হয় - এর কোন কিছুর চিন্তাই শেখ হাসিনা করেছেন বলে মনে হয় না। পদলেহনকারী ব্যক্তিদের তিনি সব সময়ে পছন্দ করতেন, চাটুকারেরা তার পছন্দ ছিলো। তিনি নিজে যে আগুনের শিখা ছিলেন, তার কাছে এলেই যে পতঙ্গেরা পুড়ে মরবে, তা তিনি কাউকেই মনে করিয়ে দিতেন না। দেশের মানুষের কাছে অপছন্দের ব্যক্তিরাই তার কাছে পছন্দের ছিলো।
এমনি অনেক চিন্তা ও লেখা যায়। তবে তার মত চিন্তার নারী আমাদের ঘরে ঘরে প্রায়, যারা কর্মক্ষেত্র বা অন্যকে ভাল রাখা দূরের কথা স্বামী সন্তানকেও ভাল রাখে না বা ভাল থাকতে দেয় না, আমি সেই ট্রিপিক্যাল নারীদের মত বা হিসাবেই শেখ হাসিনাকে ব্যাখ্যা করি। আরো কঠিন ব্যাপার, এরা তাদের বিশ্রী কর্মকান্ডে দুইকুল হারালেও কিংবা মরার আগেও নিজের ভুল গুলো বুঝতে পারে না, এরা মরে মাটিতে গেলেই, তার পরিবার আত্মীয় স্বজন স্বামী সন্তানেরা মুক্তি পায়!
আমার দাদীও 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমার সেই নির্মম স্ত্রী মা শাশুড়ি বা তেমনি একজন নারী ছিলেন, যাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, পুরাই শেখ হাসিনা, তবে কে কাকে কপি করেছে তা বলা মুস্কিল, নাকি এটাই বায়োস সেটাপ, বুট প্রোগ্রাম!