দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে প্রায় নানান কথা শুনি, তাদের আচরণগত সমস্যা প্রকট, ভাষার শালীনতা নেই বলা চলে, ধরাকে সরা মনে করা, ক্লাসে বিশ্রী ব্যবহার করা, ছাত্রী পেলেও গনিমতের মাল মনে করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আজকেও রাজশাহীর এক শিক্ষকের বিষয় ভাইরাল হয়েছে, সেই ছাত্রী ভিডিও কল ধরে নাই বলে তাকে ফেল করাবে বলেছে, একজন শিক্ষক ক্লাসের পরে কেনইবা ছাত্রীকে ফোন করবে, এমন তো কোন দরকার দেখি না, কি এমন জরুরী থাকতে পারে?
তবে আজকে অনেক কথা মনে পড়ছে, স্মৃতি থেকে লিখছি! আমাদের সময়েও এমন দুই একজন বিশ্রী শিক্ষক ছিলো (তখন সংখ্যায় কম ছিলো), যাদের ভয়ে সবাই ভীত থাকতে হত। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বা ভাষাবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম, আমাদের ডিন ছিলেন রফিকুল ইসলাম স্যার, তিনি নজরুল বিশেষজ্ঞ ছিলেন, কি মিষ্ট ভাষী, কি জ্ঞানের বাহার ছিলো, এর বিপরীতে আরো দুই জন স্যার ছিলেন (নাম বলতে চাইছি না), এরা ক্লাসে এলে মনে হত সাক্ষাত ইবলিশ ক্লাসে প্রবেশ করেছে। মেয়েরা এদের ভয় পেত এবং আমাদের বলত, আমাদের সেই সময়ে কিছু বলার সাহস ছিলো না। আমাদের কয়েক রুম আগে বাংলা বিভাগ, পরে নাট্যকলা বিভাগ ছিলো, এই নাট্যকলা বিবাগে আরো দুইজন তরুণ স্যার ছিলো (নাম নিচ্ছি না), এরা কলকাতার রবীন্দ্র ভারতীয় থেকে পিএইডি করা ছিল, এদের আচরণের কথা শুনতাম বন্ধুদের থেকে, ক্লাসেই নাকি যৌন জীবনের নানান দিক খোলামেলা দেখিয়ে বলত, এটা নাকি জান্তেই হবে! অনান্ন্য বিভাগেও এমন শিক্ষক দেখা যেত বা শুনতাম। ছাত্রছাত্রীরা এদের দেখলেই দূরে সরে যেত!
এবার আমার ছেলের অভিজ্ঞতার কথা বলি, কয়েকমাস আগে আমি তাকে তার শিক্ষকদের নিয়ে নানান কথা জানতে চাইছিলাম। সে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেখানে শিক্ষকেরা নাকি মারাত্বক, অনেকের ব্যবহার নাকি চামারের চেয়েও খারাপ। কোন কিছু নাকি একবারের বেশী বলেই না, কেহ প্রশ্ন করলে নাকি উলটা সেই ছাত্রকেই অপমান করা হয়। এদিকে এই শিক্ষকেরা নাকি ছাত্রীদের ব্যাপারে বেশ উদার, যে ছাত্রী যত সল্প কাপড় পরে তাদের নাকি এঙ্কারেজ করে এবং তাদের নাম্বার কর্নফাম। রুচিতে আর বেশী কথা বলার ইচ্ছা হয় নাই, তবে বুঝতে বাকী থাকে না!
কথা হচ্ছে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমন আচরণ কেন করেন? তিনি তো সব চেয়ে মেধাবী, রুচিশীল একজন মানুষ হবেন, তাকে দেখে শত হাজার মানুষ শিখবে, ফলো করবে, তার সততা, বিবেক দেশ সেরা হবে। তিনি কেন ছাত্রদের সাথে বিশ্রী ব্যবহার করবেন, ছাত্রীদের ক্লাসের পরেও ফোন দিবেন, তার কি এমন দরকার থাকতে পারে ছাত্রীর সাথে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই বয়সে এসে আমার বার বার মনে হয়, আমাদের শিক্ষাটা মুলত সঠিক হচ্ছে না, এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষক হয়েও কোন কিছুই যেন বুঝতে পারছেন না! নিজকে বিশাল মেধাবী মনে করে নিয়োগের প্রথম দিনেই ক্লাসে খুব জ্ঞানী ফিল করে ফেলছেন। এই শিক্ষায় শিক্ষকের মর্ম হয়ত উঠেই আসছে না! যারা শিক্ষক হচ্ছেন, তাদের পারিবারিক সামাজিক সমস্যা নিশ্চয় প্রকট, আর নিয়োগের পরেও হয়ত এদের আচরণগত কোন তথ্য জানানো হয় না, যা আমাদের সময় কিছুটা জানানো হত। এখন মনে হয় শিক্ষকেরা জুনিয়ার সিনিয়দের নিয়ে বসেই না, তাদের নিজদের মধ্যে কোন মিটিং আড্ডা আলোচনা হয় না, এখন মনে হয় একটা ক্লাস নিয়েই আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক ক্লাসের জন্য ছুটে যাচ্ছে ইত্যাদি, অর্থ উপার্জনের মাধ্যম যে শিক্ষাকতা নয়, এটা এরা কানেও নিচ্ছে না।
আমাদের বর্তমান সরকারে অনেক মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা পদ খালি, আমি আমার এক বন্ধুর সাথে আজ সন্ধ্যায় বলছিলাম, দেশে এত এত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকা থাকতে কেন নুতন লোক খুঁজে পাচ্ছে না, এরা এই সরকারে সার্ভিস দিয়ে আবার শিক্ষকতায় চলে যেতে পারেন। তখন আমার বন্ধু বলল, এখন আর তেমন চৌকস শিক্ষক/শিক্ষিকা নেই, প্রায় সবাই আগের পলাতক সরকারের জুতা চাটন করেছে, যাকেই নেয়া ভাবা যায়, তার অতীত গুয়ে ভরা! একজন শিক্ষকের এই হাল হবে কেন এবং প্রায় সবাই কেন? শিক্ষকতার মত এমন অভিজাত পেশাকে এরা কি বানালো! আফসোস!
ব্লগের জন্য লেখা, সামুতে প্রকাশিত, মালিবাগ।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


