somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

যেভাবে ভারতের হাতে স্বাধীনতা হারিয়েছিল হায়দরাবাদ - সিদরাতুল সাফায়াত ড্যারিয়াল

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(লেখাটা ইত্তেফাকে প্রকাশিত, যেন আরো কিছু পাঠক পড়ে ফলে এখানে কপি করে দিলাম, জ্ঞান চোখ খোলার জন্য, লেখক ইত্তেফাকের কন্ট্রিভিউটর সিদরাতুল সাফায়াত ড্যারিয়াল, প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২২ https://www.ittefaq.com.bd/700819)

হায়দরাবাদে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ত্রয়োদশ শতকের শেষ দিকে। তখন থেকেই হায়দরাবাদকে কেন্দ্র করে মুসলিম শিল্প-সংস্কৃতির যে বিকাশ ঘটে তা পুরো দাক্ষিণাত্যকে প্রভাবিত করেছিল। ভারতের ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও হায়দরাবাদ পুরোপুরি স্বাধীনতা বিসর্জন দেয়নি। ব্রিটিশ সরকারের সাথে চুক্তি সাপেক্ষে এটি একটি দেশীয় রাজ্যে পরিণত হয়। ৮২,৬৯৮ বর্গমাইল এলাকা বিস্তৃত এবং বাংলাদেশের তুলনায়ও আয়তনে বড় দেশ হায়দরাবাদ।


শুধু আয়তনে নয়, সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং সামর্থ্যরে দিক থেকেও স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঠিক থাকার সকল যোগ্যতাই হায়দরাবাদের ছিল। হায়দরাবাদের খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা, সোনা, লোহা, হীরক প্রভৃতির আকর ছিল। কৃষি সম্পদের মধ্যে চাল, গম, জওয়ার, বজরা, তিল, তিসি ভুট্টা, তামাকের প্রচুর ফলন ছিল। দেশটিতে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। নিজস্ব আইন আদালত ছিল। বিচার ব্যবস্থা ছিল। নিজস্ব মুদ্রা ছিল, সেনাবাহিনী ছিল, হাইকোর্ট ছিল, ছিল শুল্ক বিভাগ। নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ছিল ভাষা, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। দেশে দেশে রাষ্ট্রদূত ছিল, এমনকি জাতিসংঘে নিজস্ব প্রতিনিধিও ছিল।

১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই ইংল্যান্ডের ভারতীয় বিষয়ক সচিব লর্ড লিষ্টোয়েল লর্ড সভায় বলেছিলেন,‘এখন থেকে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলো হতে ব্রিটিশ রাজ প্রতিনিধি প্রত্যাহার এবং তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো। দেশীয় রাজ্যগুলো ভারত অথবা পাকিস্তান ডোমিনিয়নের কোনটিতে যোগ দেবে, অথবা স্বাধীন সত্তা বজায় রাখবে তা সম্পূর্ণ তাদের ইচ্ছাধীন। ব্রিটিশ সরকার সে বিষয়ে কোন রকম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে না’।

হায়দরাবাদ ভারত বা পাকিস্তান কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদনও জানিয়েছিল। কিন্তু ভারতের নেতারা সামরিক এই মুসলিম দেশটিকে জোর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা ‘অপারেশন পোলো’ নামের এক সামরিক অভিযান চালান ভারতীয় সেনাদের দিয়ে। (গোটা ভারতবর্ষের মধ্যে হায়দরাবাদ-দাক্ষিণাত্যে ছিল পোলো নামক অভিজাত খেলার সবচেয়ে বেশি ময়দান।)

দিনটি ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪ ইং। ৭৫ বছর আগে এই দিনে ভারতের শেষ স্বাধীন মুসলিম সালতানাত বা রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অবসান ঘটে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর হাতে হায়দরাবাদের স্বাধীনতার পক্ষের যোদ্ধাদের পরাজয় ঘটে সেদিন।

দাক্ষিণাত্য নামে পরিচিত এই মুসলিম রাষ্ট্রের শেষ সুলতান ওসমান আলী খান নিজাম-উল-মুলক আসেফ জাহ (নবম) ভারতীয় হামলা শুরুর পর ছয় দিন প্রতিরোধ চালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপক রক্তপাত এড়াতে তার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ফলে প্রায় ৬০০ বছরের স্বাধীন এই রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অবসান ঘটে। অবসান হয় আসেফ জাহ’র পূর্বপুরুষদের ২২৪ বছরের শাসন।

সেই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল স্বাধীন হায়দরাবাদ রাজ্যকে ভারতের সাথে যুক্ত করতে হায়দরাবাদে সেনাবাহিনীকে প্রবেশের অনুমতি দেন। ভারতীয় সেনাদের সেই অভিযান ব্যাপক বিপর্যয় বয়ে এনেছিল স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য। বিশেষ করে মারাথওয়ারা অঞ্চলের পরিস্থিতি হয়ে পড়েছিল ভয়াবহ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু এই বিপর্যয়ের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই তদন্তের ফলাফল কখনও প্রকাশ করা হয়নি। “হায়দারবাদ: একটি মুসলিম ট্র্যাজেডি” শীর্ষক এক প্রবন্ধে অধ্যাপক উইলফ্রেড ক্যান্টওয়েল স্মিথ বিবেকবান হিন্দু প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য উল্লেখ করে লিখেছেন, “যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর মুসলমানরা (গণহারে) ব্যাপক আঘাত ও পাশবিক হামলার শিকার হয়। ধ্বংসযজ্ঞের পর যারা বেঁচে ছিলেন তারাও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। তাদের হাজার হাজার ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় এবং উচ্ছেদ করা হয় কয়েক লাখকে। মুসলিম বাহিনীর সহযোগীদের কথিত সহিংসতার প্রতিশোধ নেয়ার অজুহাত দেখিয়েই এইসব নারকীয় অভিযান চালানো হয়েছিল।” (১৯৫০ সালে প্রকাশিত ‘দ্যা মিডল-ইস্ট জার্নাল’, খণ্ড-৪)


হায়দরাবাদ-দাক্ষিণাত্য আরব ও ইরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুবাদে ইসলামি সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হয়েছিল। এখানে ফারসি ভাষা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। ইসলামপূর্ব যুগেও দাক্ষিণাত্য উত্তর ভারতের মাধ্যমে স্বল্প কিছু কাল পদানত থাকলেও বেশির ভাগ সময়ই স্বাধীন ছিল। ভারতে তুর্কি মুসলিম তোঘলক বংশের শাসনামলে এই দেশটি ১৩৪৭ সালে আলাউদ্দিন হাসান বাহমান শাহের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। ইরানি বংশোদ্ভূত এই জেনারেল প্রতিষ্ঠা করেন বাহমানী বংশের রাজত্ব।

সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে এই রাষ্ট্র ৫টি পৃথক সুলতানাতে বিভক্ত হয়েছিল। এসবের মধ্যে প্রধান তিন শক্তি হিসেবে বিবেচিত হত আহমাদনগরের নিজামশাহী রাজ্য, বিজাপুরের আদেলশাহী রাজ্য এবং হায়দরাবাদ-গোলকুণ্ডার কুতুবশাহী রাজ্য। এই রাষ্ট্রগুলো শিয়া মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। তাই এই রাষ্ট্রগুলোর প্রধানরা ভারতবর্ষের মোগল সম্রাটদের পরিবর্তে ইরানের সাফাভি বংশের সম্রাটদেরকে নিজেদের সম্রাট হিসেবে মান্য করতেন। আদেলশাহী ও কুতুবশাহী রাজবংশের শাসকরা ছিলেন মূলত তুর্কিভাষী ইরানি বংশোদ্ভূত। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৮৬ ও ১৬৮৭ সনে এই দুই বংশের রাজ্য জয় করে নেন।

১৭২৪ সালে দাক্ষিণাত্য আবারও বিচক্ষণ জেনারেল কামারউদ্দিন খান নিজামুল মুলক আসফ জাহ’র নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। এই আসফ জাহ ছিলেন উঁচু মানের একজন ফারসি কবি। তিনি নাদির শাহের ভারত আক্রমণের সময় দিল্লিতে উপস্থিত ছিলেন। ভারত বিজেতা নাদির শাহ আসফ জাহের কাছে গোটা ভারতের শাসনভার অর্পণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পরাজিত মোগল সম্রাট মোহাম্মাদ শাহের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সবিনয়ে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×