বাঙালী (অথবা হয়তো বাংলাদেশী বাঙালীরা) আবেগপ্রবন জাতি, জগৎটা তার কাছে প্রায়ই একমাত্রিক হয়ে ধরা দেয়। হয় ভালো না হয় খারাপ। তার ওপর ড. ইউনুস নোবেল পেলেন কি না শেষমেশ শান্তিতে। তো কেউ কেবল গ্রামীন ব্যংক, মাইক্রোক্রেডিট সিস্টেমের খারাপ দিকটাই দেখতে পাচ্ছেন, আর অন্যরা এসবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ধরে নিয়ে আমলে নিতে চাচ্ছেন না। আরে ভাই ড. ইউনুস তো মাদার তেরেসা নন, উনি ডেজমন্ড টুটুও নন। উনি লঙ্গরখানা খুলে বসেন নি, আর গ্রামীন ব্যাংক কোন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনও নয়। গ্রামীন ব্যাংক অন্যান্য সুদখোর ব্যাংকের মতোই একটা ব্যাংক, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী চলছে, পার্থক্য হচ্ছে তারা এমন লোকজনকে ঋন দেয় যাদেরকে অন্যরা দিত না। ছিন্নমুল, ভুমিহীন এবং মহিলাদের ঋন দেয়ায় অনেক ঝুকি আছে, যেহেতু কোন বন্ধক নেয়া হচ্ছে না আদায়কারীর কাছে সত্যিকার অর্থে খুব কম রাস্তায়ই খোলা আছে। তবে ড. ইউনুসের শ্রেষ্ঠত্ব ঋন আদান প্রাদানের প্রক্রিয়ায় নয় বরং ঋন দিলে মুলধন পেলে প্রান্তিক মানুষেরাও যে দারিদ্্র থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারে, এবং অনেকে সফলও হতে পারে সেখানেই ওনার আইডিয়াটার সাফল্য। আর কেউ দারিদ্্রের এরকম সমাধান যে সম্ভব সেটা চিন্তা করেন নি, এখানেই ড. ইউনুসের মৌলিকত্ব। তবে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি ড. ইউনুসের আইডিয়াটা হচ্ছে ছোট ছোট ঋন দিয়ে দরিদ্্রদের একটা সুযোগ দেয়া যে তারা ঐ মুলধন ব্যাবহার করে পর্যায়ক্রমে দারিদ্্র থেকে বের হয়ে আসতে পারে কি না, তার আইডিয়া মোটেই দুঃস্থদের মধ্যে সাহায্য বিতরন নয় (নির্বাচন কালে আমাদের সাংসদরা যেটা করেন)। এবং প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে আসলে অনেকে ঋনের সদ্্ব্যবহার করে দারিদ্্র থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পেরেছে, এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে ড. ইউনুসের স্কুলে খারাপ ছাত্রও আছে, যারা নানা কারনে ঋন নিয়ে শেষমেশ লাভজনক কিছু করতে পারে নি, আরও ঋনের জালে জড়িয়ে পড়েছে। যেহেতু বেশীরভাগই লোকজন শেষ বিচারে এই ঋন ব্যবস্থায় উপকৃত হচ্ছে এবং দারিদ্্র দুরীকরনে গ্রামীন ব্যাংকের সাফল্য যথেষ্ট দৃশ্যমান, আমার কাছে মনে হয় ড. ইউনুস শান্তি এবং অর্থনীতি দুটোতেই দুইবার নোবেল পাওয়ার যোগ্য।
তবে এরপরও কথা থাকে। শিবলী নোমান এবং আরও অনেকে গ্রামীন ব্যাংকের ঋন আদায় প্রক্রিয়ার অমানবিক দিক, সুদের উচ্চহার ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। আমি জানি না ড. ইউনুস এসব ঘটনাকে কিভাবে দেখেন। ঋন আদায়ে জেলে নেয়া, অত্যাচার এসবকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। আমি জানি প্রান্তিক গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কেবল বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেয়া ঋন আদায়ে সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু তাই বলে এতটা। এদিক থেকে ব্লগের শক্তি যে কতটা তা প্রমান হলো, সমস্ত পত্র পত্রিকা এখন ইউনুস স্তুতিতে ব্যাস্ত, গ্রামীন ব্যংক এবং তাদের যেসব নিগেটিভ দিক আছে নোবেলের চাপে তা হয়তো অনেক দিনের জন্য ঢাকা পড়ে যাবে। শিবলী ভাইদের কাছে অনুরোধ লেখা এবং তথ্য প্রকাশ থামাবেন না, তা যতই অপ্রিয় হোক, না হলো শোধরানোর সুযোগ যে থাকবে না।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাপার অবশ্য ভিন্ন, তারা কেউ গ্রামীন থেকে লোনও নেন নাই অথবা গ্রামীনের সুবিধাভোগীও না। বাংলাদেশীরা প্রবাসে আত্মসন্মানের অভাবে ভোগে। আমার মনে আছে আকবর মন্ত্রীর আমলে যখন বেশ কয়েকটা লঞ্চডুবি হলো অফিসে অনেকেই জানতে চাইতো "তোমাদের দেশে খুব ফেরী ডুবে তাই না, কারন কি?", এই প্রশ্ন আর তার উত্তর দেয়া যে কত কষ্টকর ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। এরপর আসলো বাংলা দাদার 500 বোমা বিস্ফোরন, ভয়ে অফিসের করিডোরে হাটাই বন্ধ করে দিলাম, লোকে এমনভাবে জানতে চাইত ভাবখানা আমিই যেন বোমা মেরেছি। তো যাই হোক এই একবার সুযোগ পেয়েছি, মাথা উচু করে বলার, আমাদের দেশ থেকে নোবেল পেয়েছে, চুলোয় যাক গ্রামীন বাস্তবে দরিদ্্রদের ওপর অত্যাচার করছে কি করছে না। আমার মতো বেশীর ভাগ প্রবাসী এজন্য এমুহুর্তে ড. ইউনুসের কোন সমালোচনা সহ্য করতে নারাজ।
আমার মনে হয় ব্লগে আমরা পক্ষে বিপক্ষে লিখছি এটার ভালো দিকই বেশী। অনেক তথ্য জানা হচ্ছে শুধু তাই নয়, মাইক্রোক্রেডিটের সত্যিকার চিত্রটা স্পষ্ট হয়ে আসছে। এরশাদ আমলে একবার বিকেএসপি ডানা কাপ, গোথিয়া কাপ জিতে এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল আমরা ভেবেছিলাম ফুটবলে বিশ্বকাপ পাওয়া আর দুরে নেই, ব্লগের সমালোচনা আশা করি ড. ইউনুস ও মাইক্রোক্রেডিট প্রসঙ্গে এরকম পচা শামুকে পা কাটার হাত থেকে রক্ষা করবে।
একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন অনেক ইসলামী ব্লগার কিন্তু ড. ইউনুসকে অভিনন্দন জানাচ্ছে না। বোধকরি সুদ ইসলামে হারাম বলে হয়তো, আর ড. ইউনুসের তত্ত্ব তো পরিবর্তিত সুদখোরী তত্ত্বই আলটিমেটলী। তবে মোল্লা মিলেনিয়াম মজিদরা কিন্তু এই সুযোগে ইউনুসের পক্ষ নিচ্ছে, হয়তো ওদের ইসলামে সুদ খাওয়া জায়েজ, কে জানে?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



