somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনুসের নোবেল পদক নিয়ে দেশবাসী প্রবাসীদের মল্লযুদ্ধ

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক খবরই ইদানিং সামহয়্যার থেকে পাই, কিন্তু পরশুদিন সকালে নোবেলের খবরটা পেলাম ইমেইল চেক করতে গিয়ে সবার আগে। ঘুম থেকে উঠে যত ইমেইল গ্রুপের সদস্য ছিলাম সবগুলোতেই দেখি না হলেও দশটা মেইল চালাচালি হয়ে গেছে ড. ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে। 5/6বছর ধরেই ড. ইউনুস নোবেল পেতে পারেন বলে অপেক্ষা করছি, ইদানিং তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম যে আর বোধ হয় হলো না। অর্থনীতিতে পেলে বেশী খুশী হতাম, মনে হতো মেধার মুল্যটা দেয়া হয়েছে, শান্তি কেমন যেমন স্বান্তনা পুরস্কার মনে হয়। আর অন্য যারা অর্থনীতিতে পায় তারা কি সত্যিই এমন আহামরি কিছু করেছে, যা ড. ইউনুস করেন নি? কে জানে আমার ঠিক বোধগম্য হয় না।

বাঙালী (অথবা হয়তো বাংলাদেশী বাঙালীরা) আবেগপ্রবন জাতি, জগৎটা তার কাছে প্রায়ই একমাত্রিক হয়ে ধরা দেয়। হয় ভালো না হয় খারাপ। তার ওপর ড. ইউনুস নোবেল পেলেন কি না শেষমেশ শান্তিতে। তো কেউ কেবল গ্রামীন ব্যংক, মাইক্রোক্রেডিট সিস্টেমের খারাপ দিকটাই দেখতে পাচ্ছেন, আর অন্যরা এসবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ধরে নিয়ে আমলে নিতে চাচ্ছেন না। আরে ভাই ড. ইউনুস তো মাদার তেরেসা নন, উনি ডেজমন্ড টুটুও নন। উনি লঙ্গরখানা খুলে বসেন নি, আর গ্রামীন ব্যাংক কোন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনও নয়। গ্রামীন ব্যাংক অন্যান্য সুদখোর ব্যাংকের মতোই একটা ব্যাংক, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী চলছে, পার্থক্য হচ্ছে তারা এমন লোকজনকে ঋন দেয় যাদেরকে অন্যরা দিত না। ছিন্নমুল, ভুমিহীন এবং মহিলাদের ঋন দেয়ায় অনেক ঝুকি আছে, যেহেতু কোন বন্ধক নেয়া হচ্ছে না আদায়কারীর কাছে সত্যিকার অর্থে খুব কম রাস্তায়ই খোলা আছে। তবে ড. ইউনুসের শ্রেষ্ঠত্ব ঋন আদান প্রাদানের প্রক্রিয়ায় নয় বরং ঋন দিলে মুলধন পেলে প্রান্তিক মানুষেরাও যে দারিদ্্র থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারে, এবং অনেকে সফলও হতে পারে সেখানেই ওনার আইডিয়াটার সাফল্য। আর কেউ দারিদ্্রের এরকম সমাধান যে সম্ভব সেটা চিন্তা করেন নি, এখানেই ড. ইউনুসের মৌলিকত্ব। তবে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি ড. ইউনুসের আইডিয়াটা হচ্ছে ছোট ছোট ঋন দিয়ে দরিদ্্রদের একটা সুযোগ দেয়া যে তারা ঐ মুলধন ব্যাবহার করে পর্যায়ক্রমে দারিদ্্র থেকে বের হয়ে আসতে পারে কি না, তার আইডিয়া মোটেই দুঃস্থদের মধ্যে সাহায্য বিতরন নয় (নির্বাচন কালে আমাদের সাংসদরা যেটা করেন)। এবং প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে আসলে অনেকে ঋনের সদ্্ব্যবহার করে দারিদ্্র থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পেরেছে, এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে ড. ইউনুসের স্কুলে খারাপ ছাত্রও আছে, যারা নানা কারনে ঋন নিয়ে শেষমেশ লাভজনক কিছু করতে পারে নি, আরও ঋনের জালে জড়িয়ে পড়েছে। যেহেতু বেশীরভাগই লোকজন শেষ বিচারে এই ঋন ব্যবস্থায় উপকৃত হচ্ছে এবং দারিদ্্র দুরীকরনে গ্রামীন ব্যাংকের সাফল্য যথেষ্ট দৃশ্যমান, আমার কাছে মনে হয় ড. ইউনুস শান্তি এবং অর্থনীতি দুটোতেই দুইবার নোবেল পাওয়ার যোগ্য।

তবে এরপরও কথা থাকে। শিবলী নোমান এবং আরও অনেকে গ্রামীন ব্যাংকের ঋন আদায় প্রক্রিয়ার অমানবিক দিক, সুদের উচ্চহার ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। আমি জানি না ড. ইউনুস এসব ঘটনাকে কিভাবে দেখেন। ঋন আদায়ে জেলে নেয়া, অত্যাচার এসবকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। আমি জানি প্রান্তিক গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কেবল বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেয়া ঋন আদায়ে সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু তাই বলে এতটা। এদিক থেকে ব্লগের শক্তি যে কতটা তা প্রমান হলো, সমস্ত পত্র পত্রিকা এখন ইউনুস স্তুতিতে ব্যাস্ত, গ্রামীন ব্যংক এবং তাদের যেসব নিগেটিভ দিক আছে নোবেলের চাপে তা হয়তো অনেক দিনের জন্য ঢাকা পড়ে যাবে। শিবলী ভাইদের কাছে অনুরোধ লেখা এবং তথ্য প্রকাশ থামাবেন না, তা যতই অপ্রিয় হোক, না হলো শোধরানোর সুযোগ যে থাকবে না।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাপার অবশ্য ভিন্ন, তারা কেউ গ্রামীন থেকে লোনও নেন নাই অথবা গ্রামীনের সুবিধাভোগীও না। বাংলাদেশীরা প্রবাসে আত্মসন্মানের অভাবে ভোগে। আমার মনে আছে আকবর মন্ত্রীর আমলে যখন বেশ কয়েকটা লঞ্চডুবি হলো অফিসে অনেকেই জানতে চাইতো "তোমাদের দেশে খুব ফেরী ডুবে তাই না, কারন কি?", এই প্রশ্ন আর তার উত্তর দেয়া যে কত কষ্টকর ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। এরপর আসলো বাংলা দাদার 500 বোমা বিস্ফোরন, ভয়ে অফিসের করিডোরে হাটাই বন্ধ করে দিলাম, লোকে এমনভাবে জানতে চাইত ভাবখানা আমিই যেন বোমা মেরেছি। তো যাই হোক এই একবার সুযোগ পেয়েছি, মাথা উচু করে বলার, আমাদের দেশ থেকে নোবেল পেয়েছে, চুলোয় যাক গ্রামীন বাস্তবে দরিদ্্রদের ওপর অত্যাচার করছে কি করছে না। আমার মতো বেশীর ভাগ প্রবাসী এজন্য এমুহুর্তে ড. ইউনুসের কোন সমালোচনা সহ্য করতে নারাজ।

আমার মনে হয় ব্লগে আমরা পক্ষে বিপক্ষে লিখছি এটার ভালো দিকই বেশী। অনেক তথ্য জানা হচ্ছে শুধু তাই নয়, মাইক্রোক্রেডিটের সত্যিকার চিত্রটা স্পষ্ট হয়ে আসছে। এরশাদ আমলে একবার বিকেএসপি ডানা কাপ, গোথিয়া কাপ জিতে এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল আমরা ভেবেছিলাম ফুটবলে বিশ্বকাপ পাওয়া আর দুরে নেই, ব্লগের সমালোচনা আশা করি ড. ইউনুস ও মাইক্রোক্রেডিট প্রসঙ্গে এরকম পচা শামুকে পা কাটার হাত থেকে রক্ষা করবে।

একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন অনেক ইসলামী ব্লগার কিন্তু ড. ইউনুসকে অভিনন্দন জানাচ্ছে না। বোধকরি সুদ ইসলামে হারাম বলে হয়তো, আর ড. ইউনুসের তত্ত্ব তো পরিবর্তিত সুদখোরী তত্ত্বই আলটিমেটলী। তবে মোল্লা মিলেনিয়াম মজিদরা কিন্তু এই সুযোগে ইউনুসের পক্ষ নিচ্ছে, হয়তো ওদের ইসলামে সুদ খাওয়া জায়েজ, কে জানে?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×