বিষয় হিসেবে ইতিহাসের দিকে আমার সেরকম আগ্রহ নেই, আবার বিতৃ্ষ্ণাও নেই। টিভির কল্যানে অনেক সময় জোর করে হলেও বেশ পরিমান ইতিহাস গিলতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এরকম একটা আলোচনা শুনছিলাম বেশ আগে, এক পর্যায়ে একজন বক্তা উল্লেখ করলেন, জার্মানী-জাপানের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেনও অনেকটা পরাস্ত হয়েছিল! বৃটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাস্ত হয়েছিল শুনে নড়েচড়ে বসলাম, আলোচকের যুক্তি ছিল বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতিতেই বৃটেনকে একে একে উপনিবেশগুলো হারাতে হয়। বিশ্বের এক চতুর্থাংশের অধিকর্তা শেষমেশ তার দ্বীপরাজ্যে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়। হমম, একদিক থেকে চিন্তা করলে কথায় যুক্তি আছে, আসলে শুধু বৃটেন না, ইউরোপের ঔপনেবেশিক দেশগুলোর হাত থেকে তাদের অধিকৃত পরের কয়েক দশকে মুক্তি পেয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী, জাপানের পরাজয় যতটা দৃশ্যমান তৃতীয় বিশ্বের শোষিত জনগোষ্ঠির মুক্তি ততটা প্রচার পায় না। আবার যেমন বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উথ্থানও বিশ্বযুদ্ধের কারনে সম্ভব হয়েছে। সুতরাং ইতিহাসের মোড়ঘোরানো এসব ঘটনায় জয় পরাজয় নির্ধারন আসলে এতটা সহজ না। জার্মানী আর জাপান যেমন যুদ্ধের 20 বছরেই বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিনত হয়েছে, কিন্তু বৃটেন, ফ্রান্স বা হল্যান্ড তাদের হারানো অবস্থান আর ফিরে পায় নি।
তবে এরকমটা হয়ত নতুন কিছু না। আমি বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে একবার এনালজি খোজার চেষ্টা করলাম। হয়ত অনেক আছে। যেমন আমার ধারনা 75 এর পট পরিবর্তনে আসলে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশের বামপন্থি শক্তি। আপাত দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত হলেও, নিশ্চিহ্ন হয় নি, বরং বিশ বছরের মাথায় আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর থেকে বামপন্থী শক্তিদের ভুমিকা সন্দেহজনক। পরবর্তি মিলিটারী সরকার গুলোতে বামওয়ালাদের অনেকেই অংশ নিয়েছেন, সামরিক শাসকদের পা চেটেছেন। আজকে 30 বছর পর এসবদলের নেতা পাওয়া যায়, সমর্থক পাওয়া মুস্কিল।
75 এর আরেকটা ফসল হচ্ছে মুসলীম লীগের রূপান্তর। পাকিস্তানীদের সমর্থক হিসেবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটা বাজে অবস্থায় পড়ে যায় ওরা। কৌশলে ব্র্যান্ড নেইম বদলে মুসলীম লীগ আসলে আজকের বিএনপি। মুসলিম লীগ নেতাদের অথবা তাদের ছেলেপেলে নাতি-নাতনীদের খুজলে এখন বিএনপিতে পাওয়া যাবে। জিয়াউর রহমান আমার ধারনা একটা উপলক্ষ্য কেবল এসব মুসলীম লীগ সমর্থকদের জন্য।
তো আজকে 2006 এ যা ঘটছে 2026 এ গিয়ে বা 2036 গিয়ে আমরা কিভাবে বিশ্লেষন করব। সব দেশে বেশীরভাগ সময় অন্তত একটা রক্ষনশীল, একটা উদারপন্থী মোর্চা থাকে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান (রক্ষনশীল), আর ডেমোক্র্যাটিক (উদারপন্থী) পার্টি। কারন দেশের মানুষকে মোটামুটি ভাবে এই দুই কাতারে ভাগ করা যায়। স্কুল-কলেজে বসে যারা উদারপন্থী তারাই আবার এক জেনারেশন পরে যখন চাকরীজীবি, ছেলেমেয়ের বাবা-মা হয়ে বসে রক্ষনশীল দলে নাম লেখায়। বাংলাদেশে এজন্য ক্যু বা অন্য কোন ভাবে এই ধারার কোন একটাকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। 71 এ মুসলীম লীগ মরে গিয়ে যেমন 75 এর পটভুমিতে বিএনপি হয়েছে, তেমন 75 এ আওয়ামী লীগ আহত হলেও কয়েক বছরেই আবার ফিরে এসেছে। 2006 এ এসে মনে হয় বিএনপি দুর্নীতি নিয়ে একটু বেশী খারাপ রেকর্ড করে ফেলেছে। বিশেষ করে তারেক রহমানের ট্র্যাক রেকর্ড ফিক্স করতে বহুদিন লাগবে, যদি আদৌ সম্ভব হয়। যেমন আওয়ামী লীগের 21 বছর লেগেছে বাকশালী দুর্গন্ধ ছাড়াতে। সেক্ষেত্রে এলডিপির একটা সুযোগ আছে, যদি তারা পলিটিক্যাল ভ্যাকুয়ামটা ঠিকমত ব্যবহার করতে পারে। কারন রক্ষনশীল সমর্থক সব সময়ই আছে, সংখ্যায় বেশীই আছে প্রশ্ন হচ্ছে 2026 এ লীড দেবে কারা? জামায়াত 70 বছরে যেহেতু পারে নাই, আরো 20 বছর যোগ করে লাভ হবে বলে মনে হয় না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


